মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ

পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুকে হাতিয়ার করে কৌশলী পদক্ষেপ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করে নিজেদের জনদরদী ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হলেন তিনি। একই সঙ্গে, কেন্দ্রকে হুঁসিযারিও দিয়ে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Updated By: Nov 4, 2011, 06:51 PM IST

পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুকে হাতিয়ার করে কৌশলী পদক্ষেপ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করে নিজেদের জনদরদী ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হলেন তিনি। একই সঙ্গে, কেন্দ্রকে হুঁসিযারিও দিয়ে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে কেন্দ্র গড়িমসি করলে তিনি যে চরম পথে হাঁটবেন সেই বার্তাও দিলেন তৃণমূল নেত্রী। গত বারোমাসে এগারোবার বেড়েছে পেট্রোলের দাম। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক হওয়া সত্ত্বেও খুব একটা কড়া সুর শোনা যায়নি তৃণমূলের গলায়। বরং, তাদের অজান্তেই এই সিদ্ধান্ত বলে দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। কিন্তু, এবার পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেনমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন উঠেছে, আগের দশবারের ক্ষেত্রে সেই অর্থে চুপ থাকলেও এবার কেন এতটা সরব তৃণমূল? বেশ কিছু রাজনৈতিক কারণ সামনে উঠে আসছে। প্রথমত বর্তমানে পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। বাজারের হাতে মূল্যবৃদ্ধির দায়দায়িত্ব তুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারই। কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তের শরিক তৃণমূল কংগ্রেসও। প্রশ্ন উঠেছে, সেদিন কেন আপত্তি করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলে, রাজনৈতিক মহলের মতে, মূল্যবৃদ্ধি থেকে দুর্নীতি, একের পর এক ইস্যুতে কোণঠাসা কেন্দ্র। আর ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক হিসেবে যে দায়ভারও ঝেড়ে ফেলতে পারছে না তৃণমূল। এই অবস্থায় একমাত্র উপায় কেন্দ্রের থেকে দূরত্ব তৈরি করা। আর সেই কারণেই পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধিকে হাতিয়ার করে সরকারকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই চরমপত্র । তৃণমূল নেতৃত্বের বিশ্বাস এই পদক্ষেপ দলের জনদরদী ভাবমূর্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে। এর পাশাপপাশি আরও একটি অভ্যন্তরীণ কারণও রয়েছে।
রাজ্যের জন্য বাড়তি আর্থিক প্যাকেজের দাবি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে তৃণমূলের। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বেশ কয়েকবার দরবার করেছেন। তাতেও এখনও পর্যন্ত কোনও ফল হয়নি। এবার পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুকে হাতিয়ার করে চরমপত্র দিয়ে চাপ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হয় বাড়তি অর্থ না হলে সমর্থন প্রত্যাহার। তবে সমর্থন প্রত্যাহারে প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূলের সাংসদরা। তবে রেলমন্ত্রক থেকে নিজে সরে আসার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় থাকার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদৌ আর উত্সাহী কিনা, তা নিয়ে কোনও কোনও মহলে সংশয় রয়েছে। কিন্তু, কিছুটা ধীরে সুস্থেই সিদ্ধান্ত নিতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
তবে, রাজনৈতিক মহল কিন্তু মনে করছে দুহাজার চোদ্দ সালের লোকসভা ভোটের আগে সমস্ত দায়ভার ঝেড়ে ফেলতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে আসবে তৃণমূল কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে ইস্যু যাই হোক না কেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুক্রবার থেকেই শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

.