মুখ্যমন্ত্রীর কি মিথ্যা বলছেন? সরকারের হলফনামায় ইঙ্গিত সেই দিকেই

মুখ্যমন্ত্রী কি চিট ফান্ড কাণ্ডে কোনও সত্য আড়াল করতে চাইছেন? সন্দেহটা তৈরি হচ্ছে কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কোর্টে জমা দেওয়া তাঁর সরকারের হলফনামা মিলছে না। অন্যান্য নানা তথ্যও প্রমাণ করছে, পয়লা বৈশাখের অনেক আগেই সব জানত সরকার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কিছুই জানতেন না।

Updated By: May 4, 2013, 08:12 PM IST

মুখ্যমন্ত্রী কি চিট ফান্ড কাণ্ডে কোনও সত্য আড়াল করতে চাইছেন? সন্দেহটা তৈরি হচ্ছে কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কোর্টে জমা দেওয়া তাঁর সরকারের হলফনামা মিলছে না। অন্যান্য নানা তথ্যও প্রমাণ করছে, পয়লা বৈশাখের অনেক আগেই সব জানত সরকার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কিছুই জানতেন না।
সারদা গোষ্ঠীর প্রাণঘাতী প্রতারণার কথা প্রকাশ্যে আসার সাত দিন পরে প্রথম বার সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, পয়লা বৈশাখ অর্থাত্ পনেরই এপ্রিলের আগে তিনি বিষয়টি জানতেনই না। 
দোসরা মে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে দলের সমাবেশেও একই দাবি করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
সেদিনই, অর্থাত্ দোসরা মে হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের জমা দেওয়া হলফনামায় কিন্তু বলা হয়েছে,  দুহাজার এগারোর মে মাসে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই  পদক্ষেপ নিতে শুরু করে সরকার।
প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী কি জানতেন না তাঁর সরকারের এই পদক্ষেপের কথা?
হাইকোর্টে সরকারের জমা দেওয়া হলফনামায় বলা হয়েছে, চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে বাম আমলের বিলে দ্রুত রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য দুহাজার এগারোর চোদ্দই জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দেন রাজ্যের অর্থসচিব। দুহাজার বারোতেও ফের চিঠি দেওয়া হয়।
তবু মুখ্যমন্ত্রী কিছু জানতেন না? বাম আমলের বিল দুর্বল হলে, কেনই বা সেই বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য কেন্দ্রকে জোড়া চিঠি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার?
রাজ্য সরকারের হলফনামায় বলা হয়েছে, গত বছর অক্টোবরে বেআইনি চিটফান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থসচিবকে নির্দেশ দেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব। হলফনামায় বলা হয়েছে, এরপর অর্থ দফতর তদন্ত শুরু করে বুঝতে পারে চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে বামেদের আনা বিল যথেষ্ট নয়।
এসব কিছুই কি হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে?
দুহাজার এগারোর অগাস্টে ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির বেআইনি কাজ সম্পর্কে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি দেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। ওই চিঠিতে ১৫টি সংস্থার নাম ছিল। ওই চিঠির জবাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায়, কী ভাবে ওই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
তাঁর সরকারের মন্ত্রী জানতেন, কিন্তু জানতেন না মুখ্যমন্ত্রী?
দুহাজার এগারো সালের ২৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও চিট ফান্ডের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে সতর্ক করে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দ্বিতীয় চিঠিটি আসে ২০১১-এর ২০ অক্টোবর।
তৃতীয় ও চতুর্থ চিঠি আসে যথাক্রমে ২০১১-এর ১৬ ডিসেম্বর এবং ২০১১-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠিগুলি কি তবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখানো হয়নি?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিটি চিঠিতেই চিট ফান্ডের বেআইনি ব্যবসা রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা জানানো হয় রাজ্য সরকারকে। কিন্তু ওই চিঠিগুলির ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা কেন্দ্রকে কোনও বারই জানায়নি রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিনি চিট ফান্ডের প্রতারণার কথা জানতেন না। অর্থাত্ তিনি জানতেন না, ২০১১-এর মে মাস থেকে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা,
জানতেন না বামেদের বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অনুরোধ করে তাঁর সরকারের চিঠি পাঠানোর কথা, জানতেন না রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাঁর সরকারের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের চিঠি চালাচালির কথা, জানতেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পাঠানো চারটি চিঠির কথা।
মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু জানতেন, দুহাজার এগারোর এগারোই সেপ্টেম্বর সারদা গোষ্ঠীর নামে নালিশ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন গনিখান চৌধুরীর ভাই কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি ওরফে ডালু। ওই চিঠি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবু হাসেমের ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী ওরফে লেবু মারফত নাকি অনুরোধও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। লেবুবাবু তো তেমনই জানিয়েছেন।
তাহলে কি কেঁচো খুঁড়তে কোনও কেউটে বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কাতেই বারবার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, পয়লা বৈশাখের আগে তিনি কিছুই জানতেন না? 
 

.