কালী পুজোর দিনে কুমারীপুজোর রীতি করুণাময়ী কালীবাড়িতে
কলকাতা: ৭ বছরের মেয়ে 'করুণা'ই বেঁচে আছে কষ্টিপাথরের কালী মূর্তিতে। হ্যাঁ, এই বিশ্বাসেই করুণাময়ী কালীবাড়িতে শতাব্দী ধরে পূজিতা হন কালী।
সে এক অবিশ্বাস্য রোমহর্ষক ইতিহাস। করুণাময়ী কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে নাকি রয়েছে ৭ বছরের মেয়ের মৃত্যু। করুণাময়ী কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠার আগে রাজা সাবর্ণ রায়ের পরিবারের ২৭ পুরুষ নন্দদুলাল রায় চৌধুরীর স্বপ্নে 'কালী আসেন মেয়ে করুণা রূপে'। এরপরপই হারানো মেয়েকে কষ্টি পাথরের কালী মূর্তিতে বেঁধে রাখেন নন্দ দুলাল রায় চৌধুরী। দ্বাদশ শিবলিঙ্গের সঙ্গেই প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দির। নিজের ৭ বছরের মেয়ে করুণার নামেই নামাকরণ হয় মন্দিরের। কষ্টি পাথরে রঙেই প্রতিমা এখানে কালো। উল্লেখ্য, সদাশিবও এখানে কৃষ্ণকায়। যা সিদ্ধপীঠের মধ্যে বিরল।
আরও পড়ুন- কালীপুজোর দিন রাজবেশে ভবতারিণী
কথিত আছে নন্দদুলাল রায়চৌধুরী তিন পুত্র লাভের পর মা কালীর কাছে কন্যা সন্তান যাচনা করেন। এরপরই তাঁর ঘরে আসেন করুণা। কিন্তু, ৭ বছর বয়সেই মেয়ে করুণার মৃত্যু হয়। কন্যাশোকে পাগল নন্দদুলাল পরিবার ছেড়ে বনবাসে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমনই এক সময় নন্দদুলাল রায় চৌধুরীর স্বপ্নে মেয়ে করুণা রূপে আসেন মা কালী। "গঙ্গার ঘাটে বটবৃক্ষের কাছে যাও, সেখানে একটি কষ্টি পাথর পাবে। ওই কষ্টি পাথর নিয়ে এসে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করো। আমি থাকব ওই কষ্টি পাথরেই", স্বপ্নে মেয়ে 'করুণা'র এই নির্দেশ মতোই মন্দির স্থাপন করেন নন্দদুলাল রায়চৌধুরী।
আরও পড়ুন- কেন দক্ষিণেশ্বরের গর্ভগৃহে সবাই প্রবেশ করতে পারেন না?
সেই থেকেই করুণাময়ী কালীবাড়িতে কালী পূজিতা হন বাড়ির মেয়ে রূপেই। কালীপুজোর দিন করুণাময়ীকে দেওয়া হয় ১১ রকম মাছের ভোগ। আর যেহেতু নন্দদুলাল রায়চৌধুরী নিজের মেয়ে রূপেই মা কালীর আরাধনা করে এসছেন, সেই রীতি মেনেই এখানে কালীপুজোর দিনই অনুষ্ঠিত হয় কুমারীপুজো। করুণাময়ী কালীবাড়ির পূজারি জানালেন, "করুণাময়ী মা আমাদের ঘরের মেয়ে। বাড়ির মেয়ে যা যা খেতে ভালোবাসে সে সব দিয়েই তাঁর পুজো হয়। ভক্তকুলের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় করুণাময়ী কালীবাড়ি একটি সিদ্ধপীঠে পরিণত হয়েছে''।