প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক নেতা, সকলকে তুষ্ট রাখতে কোটি কোটি টাকা ছড়িয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন
সেবি, আরবিআইয়ের মতো নিয়ামক সংস্থার নোটিসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছিলেন সারদাকর্তা। প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক নেতা, টাকা ছড়িয়ে সকলকেই তুষ্ট রাখতেন সুদীপ্ত সেন। সাধারণ মানুষের কষ্টের টাকা এভাবেই নয়ছয় করেছে সারদা।
২৩ এপ্রিল, ২০১৩
জম্মু-কাশ্মীরের শোনমার্গ থেকে গ্রেফতার সুদীপ্ত সেন।
২৪ এপ্রিল, ২০১৩
প্রকাশ্যে আসে সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠি। ছয়ই এপ্রিলের তারিখ দেওয়া চিঠিতে সারদাকর্তা ব্যবসা চালানোর জন্য কাদের টাকা দিয়েছিলেন সেবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিলেন।
সারদা কর্তার দাবি বেআইনি অর্থলগ্নি ব্যবসা চালিয়ে যেতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের মোটা টাকা দিতে হয়েছিল তাঁকে। পতনের শুরুটা হয়েছিল মিডিয়া ব্যবসায় নামার পরই।
মিডিয়া ব্যবসায় সুদীপ্ত সেনের প্রথম বড় লগ্নি ছিল চ্যানেল টেন। শান্তনু ঘোষের কাছ থেকে বাজারদরের তুলনায় অনেক বেশি টাকায় চ্যানেল টেন কিনেছিলেন সারদাকর্তা। চ্যানেল টেনের পিছনে ৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। শান্তনু ঘোষের কাছ থেকে বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্যে গ্লোবাল অটোমোবাইল সংস্থাটিও কিনেছিলেন সুদীপ্ত। ২৮ কোটি টাকায় এনই বাংলা সহ পজিটিভ গ্রুপের একাধিক চ্যানেল কেনেন তিনি।
বাজারদরের থেকে অধিক মূল্যে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের মালিকানাধীন দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেড কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন। সরকার ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী অর্পিতা ঘোষকে মোটা টাকার বিনিময়ে চ্যানেলের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল। উঃপূর্বাঞ্চলে চ্যানেল খুলতে দিল্লির এক সাংবাদিককে টাকা দিয়েছিলেন।
মিডিয়া ব্যবসার পিছনে টাকা ঢালার এখানেই শেষ নয়। গাঁটছড়া বাধার কিছুদিন পরই প্রতিদিন গোষ্ঠীর সঙ্গে গোলমাল শুরু হয় সারদাকর্তার। মিটমাট করতে সারদা গোষ্ঠীর মিডিয়া সেকশনের গ্রুপ সিইও করা হয় কুণাল ঘোষকে । এজন্য কুণাল ঘোষ প্রতিমাসে ১৫ লক্ষ টাকা বেতন পেতেন।এছাড়াও, বেআইনি অর্থলগ্নি ব্যবসা চালিয়ে যেতে বরাবরই প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের তুষ্ট রাখতেন সুদীপ্ত সেন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে হওয়া একাধিক মেলার স্পনসর ছিল সারদা। শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যস্থতায় সারদাকর্তা টাকা ঢেলেছিলেন বেশকয়েকটি প্রীতি ম্যাচেও। এছাড়াও সারদা কর্তার দাবি,
বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখার্জির কাছ থেকে বাজারদরের বেশি টাকায় সিমেন্ট কারখানা কিনেছিলেন। উঃ ২৪ পরগনায় রাজ্যের সঙ্গে যৌথ মালিকানাধীন কৃষিপণ্যের কারখানা কিনেছিলেন।
বাজার থেকে বেআইনিভাবে টাকা তোলা চালিয়ে যেতে সেবি, আরবিআইয়ের মতো আর্থিক নিয়ামক সংস্থাগুলিকেও হাতে রাখতেন সুদীপ্ত সেন। সেজন্যই ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নীতুকে প্রতিমাসে মোটা টাকা দিতেন সারদাকর্তা। টাকা দেওয়া হয় নিয়ামক সংস্থার কর্তাদেরও। এছাড়াও রিয়্যালটি ও কন্সট্রাকশনের ব্যবসায় নামার পর প্রশাসনকে সঙ্গে রাখতে অনন্ত চার প্রাক্তন পুলিস কর্তাকে মোটা টাকা দিতে হত সুদীপ্ত সেনকে।