বিজেপি নেতাদের আগে চাঁদা তোলার দলে ঢুকে পড়তে হবে, একডালিয়ায় 'অফ দ্য রেকর্ড'

শুভঙ্কর মিত্র

Updated By: Nov 5, 2021, 11:53 PM IST
বিজেপি নেতাদের আগে চাঁদা তোলার দলে ঢুকে পড়তে হবে, একডালিয়ায় 'অফ দ্য রেকর্ড'

শুভঙ্কর মিত্র

'অনেক হয়েছে। চল, সুব্রতদা'র পুজোয়। বাকি সময়টা ওখান থেকে লাইভ দেব।'

অষ্টমীর একডালিয়ায় অফিসের রিপোর্টার দিদির সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম আমি, এক সদ্য অঙ্কুরিত সাংবাদিক। শিক্ষানবিশি করতে গেলে ট্রাইপড বওয়াটা দস্তুর! ক্যামেরার ভার রাখার যন্ত্রটি কাঁধে নিয়ে পৌঁছলাম একডালিয়ায়। মঞ্চে ধুতি-পাঞ্জাবিতে বসে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সতীর্থ দিদিই পরিচয় করিয়ে দিলেন। গিয়ে বসলাম রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রীর পাশে। এ কী! মন্ত্রীর সঙ্গে বন্দুকধারী সান্ত্রীরা নেই! কিঞ্চিত বিস্মিত হয়েছি। 

বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই সুব্রত'দা বললেন,'কী লিখতে ভাল লাগে?' সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হন, তখন বোধহয় আমার পূর্বজন্মেও বার্ধক্য আসেনি। সাংবাদিকতার স্বল্প অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলাম, বয়সে অনেকটা বড় হলেও এ লাইনে কাকা-জ্যাঠা বলতে নেই। দাদা-দিদিই চলে। বললাম,'আজ্ঞে দাদা রাজনীতির খবর।' মহাষ্টমীর সন্ধেয় তখন একডালিয়ায় কুল কুল করে বয়ে চলেছে মানুষের স্রোত। লাইভের ফাঁকে ফাঁকেই অফিসের রিপোর্টার দিদির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে সুব্রতদার, যে কথা গোপন রাখতে হয়। যার পোশাকি নাম 'অফ দ্য রেকর্ড'। সেই 'অফ দ্য রেকর্ডে' নাক গলিয়ে ফেললাম।          

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর রাজ্যে তখন বিজেপির হাওয়া ক্রমে দৃঢ় হচ্ছে। রাজনীতির পোক্ত খেলোয়াড় সুব্রতদাকে প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা আপনার কি মনে হয় পরিবর্তনের পরিবর্তন? ট্রেডমার্ক ভাঙা গলায় সুব্রতদা বললেন,'আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছে। ওদের কোনও নেতাই নেই।' সত্যিই তো তাই। বিধানসভা ভোটে বাংলার মেয়ের বিপক্ষে কে? এটাই তো হয়ে উঠেছিল একুশের নির্বাচনের চুম্বক।   

রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কীভাবে হলেন দাদা? সুব্রতদা ফিরলেন স্মৃতিসরণীতে। হাসতে হাসতে বললেন,'তখন এখানে বোম পড়ত। নকশালদের দাপট। ভেবেছি হেরেই যাব। ভোটগণনা দিন হলে প্রিয়দার সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। বেরিয়ে খবর পেলাম জিতে গিয়েছি।' 

টিভি চ্যানেলের প্রচলিত বাধ্যবাধকতায় শুরু হল সুব্রত-পার্থর দ্বৈরথ। নাকতলা না একডালিয়া- কোন পুজোয় ভিড় বেশি? ঠোকাঠুকি লাগল দুই মন্ত্রীর। ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আলো নিভতেই সুব্রতদা হাসতে হাসতে বললেন, 'ওঁর পুজোটা অনেকটা দূরে। একডালিয়া গড়িয়াহাট মোড়ে। তাই এভাবে ভিড়ের তুলনা করা উচিত হয়নি।'' বলেই ফেললাম, বিজেপি নেতারা তো পুজোর সঙ্গে জুড়তে চাইছেন। পারছেন না কেন? প্রজ্ঞ রাজনীতিক বললেন, দূর! ওভাবে হয় নাকি। আগে চাঁদা তোলার দলে ঢুকে পড়তে হবে। বিল কাটতে কাটতেই দেখবে দু-তিন বছর পরে পুজো কমিটির সদস্য হয়ে গিয়েছো। আমিও কি বালিগঞ্জে থাকতাম নাকি!''         

দেখছি ভিড় ছিটকে এক একটা মুখ বলছে,'দাদা ভালো আছেন?' হাত নেড়ে হাসছেন সুব্রতদা। একজন মঞ্চের কাছে এসে বললেন,'দাদা চিনতে পারছেন?' ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিয়ে কুশল জানতে চাইলেন সুব্রতদা। এতটা সহজলভ্য রাজনীতিক! আচ্ছা আপনি ওঁদের সবাইকে চেনেন? জবাব এল,'না, না। একটু হাত নাড়লেই তো মানুষগুলো খুশি হয়।'

অ্যাসাইমেন্ট থেকে ফোন এল, 'লাইভ ওভার।' ওঠার সময় হয়েছে। শালপাতায় লুচি, সুজির বাঙালির অকৃত্রিম প্রসাদ বাড়িয়ে দিলেন ক্লাবকর্তারা।

গড়িয়াহাট থেকে বাস ধরে বাড়ি ফিরছি। আর ভাবছি এও সম্ভব! এক অপরিচিতের সঙ্গে এত অকপট, মিশুকে, ক্লেদহীন। তাও আবার তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর স্নেহধন্য, রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী! এটাই বোধ করি বাংলার রাজনীতির 'ক্লাস'।    

আরও পড়ুন- Subrata Mukherjee: পরে রইল ফাঁকা চেয়ার, বিদায়বেলায় শোকের ছায়া একডালিয়া এভারগ্রিনে
                   

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)                        

    

 

.