সিঙ্গুর রায়: কী বলছে সরকার? কী বলছে বিরোধীরা?

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া `সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন অবৈধ ও অসাংবিধানিক`! শুক্রবার এই ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের ২ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। এই রায় নিয়ে কী বলছে সরকার পক্ষ? বিরোধী নেতাই বা কী বলছেন?

Updated By: Jun 22, 2012, 03:43 PM IST

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া 'সিঙ্গুর  জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন অবৈধ ও অসাংবিধানিক'! শুক্রবার এই ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের ২ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। এই রায় নিয়ে কী বলছে সরকার পক্ষ? বিরোধী নেতাই বা কী বলছেন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়:
সিঙ্গুর জমি অনিচ্ছুক কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে তাঁর সরকার দায়বদ্ধ বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও কৃষকদের জয় হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জন্য যে এক হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ শুরু করেছে রাজ্য সরকার, তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।"
অন্যদিকে, ফেসবুক পেজে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, "সিঙ্গুর রায় নিয়ে আমি কোনও মতামত জানাব না। আমি সারাজীবন দরিদ্র, বঞ্চিত, কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে সংগ্রাম চালিয়েছি। তাঁদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা অক্ষুণ্ণ থাকবে, আমি ক্ষমতায় থাকলেও, না থাকলেও। শেষপর্যন্ত, গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষের পছন্দই শেষ কথা।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়:
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের কপি হাতে এলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সরকার তাঁদের পাশে রয়েছে বলে অনিচ্ছুক কৃষকদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, "সিঙ্গুরবাসী কৃষকদের আশ্বস্ত করতে চাই সরকার তাদের পাশে থাকবে। অনিচ্ছুক কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ক্ষেতমজুরদের স্বার্থ রক্ষিত হবে। আইনানুগ ব্বহাবে যা করার সরকার তাই করবে।"
সূর্যকান্ত মিশ্র:
হাইকোর্টের রায় তাঁদের বক্তব্যকেই প্রতিষ্ঠিত করল বলে মন্তব্য করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর অভিযোগ, সরকার বিধানসভাকে এড়িয়ে এই আইন তৈরি করেছিল। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হলেও, সরকার তা করেনি বলেও দাবি সূর্যকান্ত মিশ্রের।
অরুণাভ ঘোষ:
সিঙ্গুরে জমি ফেরত দিতে রাজ্য সরকার যে আইন এনেছিল তাতে একাধিক ত্রুটি ছিল। যার প্রেক্ষিতেই হাইকোর্টের এই রায়। বললেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ।  তিনি বলেন, "জোর করে কারও সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।"

বিকাশ ভট্টাচার্য:
বহু শুনানির পর আজ ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়েছেন যে সিঙ্গুর আইনটি অসাংবিধানিক। সংবিধানের বিধিতে বলা আছে, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কোন আইন করতে গেলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে আইন তৈরি করা যায়। যেহেতু এই আইন তৈরির সময় রাষ্ট্রপতির কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি, অতএব সংবিধানের ২৫৪ ধারা মতে আইনটি অসাংবিধানিকর আমরা প্রথম থেকে বলেছিলাম, কিছু জমি হারাদের জমি ফেরত দেওয়ার মধ্যে জনস্বার্থ যুক্ত নেই। আজ আদালত ঘোষণা করেছে, সরকার যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করেছিল, তার মধ্যে গুটিকয়েক লোক ক্ষতিপূরণের টাকা নেননি স্বেচ্ছায়। সেই কারণে তাঁদের জমি ফেরত দেওয়া বিধিসম্মত নয়। অতএব, আইনটিকে খারিজ করে দিয়ে আদালত সরকারকে ২ মাস সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কোনভাবেই জমি কাউকে বিলি করা যাবে না। শ্রীমতি বন্দ্যোপাধ্যায় যে রাজনৈতিক খেলায় নেমেছিলেন তার প্রথম পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটল আজ।

সলমন খুরশিদ:
এটাকে জিত বা হার বলা উচিত নয়। যখন কেউ আদালতে কোন আবেদন জানান, তখন সেই আবেদন খারিজ করা হলে অবশ্যই হতাশা হয়। চাইলে সেই রায় না মেনে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন তাঁরা।

নিরুপম সেন:
আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম আজ তা খানিকটা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। শীর্ষ আদালত কী বলে, সেটা নিশ্চয়ই আমাদের দেখতে হবে। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সিঙ্গুরের কৃষকরা। কারখানাটা যদি হত, তাহলে এই রাজ্যে এবং ওই এলাকার মানুষরা অনেকটা উন্নত জীবনে পৌঁছতে পারতেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই রায়ের জয় পরাজয় নিয়ে আলোচনা না করে আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকানো উচিত্।
নীলত্পল বসু:
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী সিঙ্গুর আইন বৈধ নয়। তবে যাই হোক, শেষপর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিঙ্গুরের মানুষই। কারখানাও হয়নি, তাঁরা জমি ফেরতও পাননি।
আব্দুল মান্নান:
অসাংবিধানিক এবং অবৈধ কোন বিল যদি রাজ্য সরকার পাশ করে সেটাকে হাইকোর্টের বাতিল করার মধ্যো কোন নতুনত্ব নেই। আমাদের দু:খ আজ সিঙ্গুরের কৃষকরা সর্বস্বান্ত হল।

.