নিম্নচাপের ভ্রুকুটিতে আজও বানভাসি দক্ষিণবঙ্গ

জল থইথই আলিপুর কোর্ট চত্ত্বর। হাঁটু জলে দাঁড়িয়েই কাজ সারছেন আইনজীবীরা। 'রেনি ডে'র সৌজন্যে পাল্টেছে ড্রেস কোডও। কালো কোট প্যান্টের সঙ্গে নেই পালিশ করা বুট। জলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আইনজীবীদের পায়ে উঠেছে হাওয়াই চপ্পল। বৃষ্টি দুর্ভোগ থাকলেও সঙ্গে ছিল রেনি ডের মজা। মঙ্গলবারের পর বুধবারও কোর্টে ছিল রেনি ডের মেজাজ। ছিল না মক্কেল মোক্তারদের ভিড়।

Updated By: Aug 21, 2013, 09:46 AM IST

জল থইথই আলিপুর কোর্ট চত্ত্বর। হাঁটু জলে দাঁড়িয়েই কাজ সারছেন আইনজীবীরা। 'রেনি ডে'র সৌজন্যে পাল্টেছে ড্রেস কোডও। কালো কোট প্যান্টের সঙ্গে নেই পালিশ করা বুট। জলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আইনজীবীদের পায়ে উঠেছে হাওয়াই চপ্পল। বৃষ্টি দুর্ভোগ থাকলেও সঙ্গে ছিল রেনি ডের মজা। মঙ্গলবারের পর বুধবারও কোর্টে ছিল রেনি ডের মেজাজ। ছিল না মক্কেল মোক্তারদের ভিড়।
লাগাতার বৃষ্টির মধ্যেও উত্তরে জল নামছে। উত্তরের পাম্পিং স্টেশনগুলি ঠিকমত কাজ করাতেই এটা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। কিন্তু দক্ষিণে জল দাঁড়িয়ে থাকার কারণ হিসাবে গঙ্গার জলকেই দুষেছেন অতীন বাবু। একইসঙ্গে দক্ষিণে জেএনএনইউআরএম নিকাশির কাজও এখনও শেষ হয়নি। এর ফলেই দক্ষিণ জলমগ্ন বলে মনে করছেন তিনি।
লাগাতার বৃষ্টির জেরে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া রাজ্যের জেলাগুলির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে জল বাড়ছে সব নদীর। নদীর জল বাড়ায় ডুবে গেছে বেশ কয়েকটি সেতু। ফলে তিন জেলায় বিভিন্ন অংশে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত। চান্ডিল এবং গালুডির জলাধার থেকে জল ছাড়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরের চারটি ব্লকে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।  জল ঢুকছে বাঁকুড়ার ৬টি ব্লকে। জেলার সবকটি ব্লকে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুরুলিয়ায় জল বাড়ছে কংসাবাতী এবং দ্বারকেশ্বর নদীর। বৃষ্টিতে ভেঙেছে বহু কাঁচা বাড়ি। একাধিক এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা।
জল যন্ত্রণায় নাজেহাল হয়ে পথ অবরোধ করলেন দমদম পার্ক এলাকার মানুষ। গত দুদিন ধরে কার্যত জলবন্দি হয়ে রয়েছেন দমদম পার্ক, পাতিপুকুর এলাকার বাসিন্দারা। পৌরসভার ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ তারা। জল পাম্প করে বের করে দেওয়ার কোনও উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। কোথাও হাঁটু আবার কোথাও প্রায় গলা ছুঁইছুঁই জল। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে একমাত্র ভরসা ভেলা। প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, এছবি হাওড়া পুরসভার পঞ্চাশ নম্বর ওয়ার্ডের। দুদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে বুথবাগান, পেয়ারাবাগান সহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্রায় বানবাসির চেহারা নিয়েছে। পুরসভার তরফে পাম্পের সংখ্যা বাড়ানো হলেও, এখনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। চরম ভোগান্তিতে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া থেকে নিত্যযাত্রীরা।

জমা জলে চরম ভোগান্তিতে হাওড়া পুরসভার আটনম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।  রাতে বৃষ্টি কমলেও, সকাল থেকে ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায়। কখনও মুষলধারে কখনও আবার ঢিমেতালে চলছে বৃষ্টি। জল থৈথৈ বেলগাছিয়ার বিভিন্ন এলাকা। রাতভর পাম্প চললেও, এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। জমা জলের কারণে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুল, কলেজে।গতকালের পর আজও চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। জল ঢুকেছে বাড়ির ভিতরেও। হাঁটু সমান জল ভেঙে অফিস মুখো নিত্যযাত্রীরা। নিম্নচাপের ভ্রুকুটি কাটেনি। শহরে সাময়িক বৃষ্টি থামলেও এখনও জলমগ্ন দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। জল জমেছে কসবা, তপসিয়া, টালিগঞ্জ,বেহালা, ঢাকুরিয়ায়। বৃষ্টির জেরে আজ সকালে রাস্তায় যানচলাচল কম ছিল। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। দক্ষিণের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হলেও উত্তরে জল জমেনি সেভাবে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের  জমা জল পাম্প চালিয়ে বের করে দেওয়া হয়।  কোথাও কোথাও অলিগলিতে সামান্য জল জমে রয়েছে।
বৃষ্টি আরও বাড়ার পূর্বাভাস। চিন্তা বাড়ছে কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পীদের। বৃষ্টি না কমলে প্রতিমা তৈরি শেষ হবে কীভাবে এই ভাবনায় ঘুম নেই কুমোরপাড়ার। এক নাগারে বৃষ্টির জেরে ভাসছে বাগজোলা খাল সংলগ্ন এলাকাগুলি। জলমগ্ন নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগর, রামকৃষ্ণপল্লী সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। সমস্যায় স্থানীয় বাসিন্দারা। বেশ কয়েকটি বাড়ির ভিতরেও জল ঢুকে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষায় জলমগ্ন হয় এই এলাকা। তবুও কোনওরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। জলমগ্ন বাগুইআটির জ্যাংরা, হাতিয়ারা এলাকা।
লাগাতার বৃষ্টিতে বাঁকুড়ার সবকটি নদীতেই জলস্তর বিপদসীমা ছুঁয়েছে। কংসাবতী নদীর মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে দশ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। জলস্তর বাড়ছে গন্ধেশ্বরী, দারকেশ্বর, ভৈরোবাঁকি ও শিলাবতী নদীতেও। বেশ কয়েকটি সেতু প্লাবিত হয়ে যাওয়ায়, বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া-বান্দোয়ান রাজ্য সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ইন্দাস, পাত্রসায়র, সোনামুখী, বড়জোড়া, ওন্দা সহ বাঁকুড়া দুনম্বর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে নদীর জল ঢোকায়, আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। জেলার সব ব্লকেই চরম সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।

.