আমি জীবিত কারণ আজ কলেজ যাইনি

Updated By: Mar 31, 2016, 05:42 PM IST
আমি জীবিত কারণ আজ কলেজ যাইনি

প্রতিটা দিন ওই রাস্তা ধরেই তো কলেজ যেতাম। ট্রেনের গেটে ঝুলতে ঝুলতে হাওড়া। তারপর ২ মিনিটের একটা দৌঁড়। সবার আগে বাস ধরে কলেজ পৌঁছানোর তাড়া। ২১৫ রুটের হাওড়া-লেকটাউন, কোনওদিন শ্যামবাজার-হাওড়া মিনি, ৫ টাকার ভাড়া দিয়ে কলেজের সামনে নামতাম। লাল মন্দির। অনেক দিন এমনও হয়েছে, ভাড়াটা লুকিয়ে চুরিয়ে ফন্দি এঁটে না দিয়েই নেমে পড়তাম। পকেটে থাকা ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে ৫ টাকা বেঁচে গেলে একটা ছোট্ট সিগারেট হয়ে যেত। সুখটান দেওয়ার আগে সিগারেটের সাদা চামড়ায় লিখতাম 'ফাউ কা সিগারেট'। এমনও অনেক দিন হয়েছে, নিজেই কন্ডাকটরের হেল্পার হয়ে গিয়েছি। হাওড়া থেকে উঠে, দিব্যি কলেজ ব্যাগটা সাইডে নিয়ে হয়ে যেতাম হেল্পার। রাজাকাটরা, মালাপাড়া, পোস্তা, নিমতলা হয়ে শোভাবাজার, লাল মন্দির। একটা উড়ালপুরের নীচ দিয়ে রোজ যেতাম। রোজকার যানজট থেকে রেহাই, কবে, এটাই ভাবতাম। বিমানের গতিতে হাওড়া থেকে কলেজ পৌঁছে যাব মাত্র কয়েক মিনিটে, চাই একটা উড়ালপুর। রোজকার কলেজ রুটিনে স্নান-খাওয়ার তাড়া থাকবে না। বেশ ভালোই হবে। কলেজ যেতাম রোজই। আজও ব্যতিক্রম নয়। হঠাৎ মনে হল, আজ খেলাটা দেখব। কলেজেও তেমন একটা ক্লাস নেই। পাসের ক্লাসে আজ ফেল করলে আমার রেজাল্টেও তেমন প্রভাব পড়বে না। সো, আজ কলেজ বাঙ্ক! ৩১ মার্চ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাস ক্লাসে ম্যাডাম যখন রেজিস্ট্রার খাতাটা নিয়ে এসে আমার ১৩ নম্বর রোল কল করবে, কেউ সারা দেবে না, প্রক্সি দিতেও কাউকে বলিনি আজ, আজ আমি ক্লাসে 'অ্যাবসেন্ট', কিন্তু স্টার মার্ক পেলাম জীবনের পরীক্ষায়। আমি আজ দেওয়ালে ছবি হওয়া থেকে বেঁচে গেলাম। রোজকার রুটিনের মত বেলা ১২টা'র ব্যস্ত পোস্তার রাস্তায় কোনও হাওড়া-লেকটাউন কিংবা হাওড়া-শ্যামবাজার মিনিতে আমি আজ নেই। আমি আজ জীবিত, কারণ আমি আজ কলেজে যাইনি।

শিরোনাম-ভেঙে পড়ল বিবেকানন্দ ফ্লাই ওভার ব্রিজ। পোস্তার রাস্তায় ট্যাক্সি, বাসের মধ্যে আটকে থাকা জীবনগুলি হঠাৎ পৌঁছে গেল মেডিক্যাল কলেজের লাশ কাটা ঘরে। মৃত্যু, মৃত্যু, মৃত্যু। না, আজ কালবৈশাখীর আশার কোনও পূর্বাভাসও নেই তবুও হাজার চোখের স্নান, ভাসছে কলকাতা।

আমি জয়পুরিয়া কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। পাস আউট করেছি বছর চারেক। কলেজের তিন বছরের রুট ছিল পোস্তা, মালাপাড়া, নিমতলা হয়ে লাল মন্দির। আমি আজ কলেজে পড়ি না। কিন্তু টিভি সেটে ব্রেকিংগুলোতে আমার কলেজের 'কমরেড'রা আজও আমাকে নিয়ে চিন্তিত। সিদ্ধান্ত, শমীক, বিশ্বজিৎ (কলেজ নয় স্কুল জীবনের বন্ধু) অনামিকা, স্বরলিপি তো জানত, আমি ওই রাস্তা দিয়েই কলেজে আসি। ওদের প্রতিটা ফোন কল, আমাকে  ফিরিয়ে নিয়ে গেল কলেজের দিনগুলোতে, বললাম, "আমি তো আজ কলেজ যাইনি"।

একটা স্মৃতিচারণা থেকে কয়েকটা এলোমেলো লাইন, আর মন খারাপের খবর লিখলাম।    

 

.