পয়লা বৈশাখে কানে বাজছে জেএনইউ-র ঢাকের আওয়াজ, মিস করছি বন্ধুদের

দীপ্সিতা ধর

Updated By: Apr 15, 2021, 07:11 PM IST
পয়লা বৈশাখে কানে বাজছে জেএনইউ-র ঢাকের আওয়াজ, মিস করছি বন্ধুদের

দীপ্সিতা ধর

সন্ধেবেলায় মা-ঠাকুমার হাত ধরে দোকানে, দোকানে যেতাম। ক্লোল্ড ড্রিঙ্ক খেতাম। ওটাই ছিল আমার পয়লা বৈশাখের আকর্ষণের জায়গা। কারণ বাড়িতে দীর্ঘদিন কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়ার অনুমতি ছিল না। ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখ স্মৃতি বলতে এটাই। তবে পয়লা বৈশাখে আমার প্রাণের কাছে স্মৃতি দিল্লির জেএনইউ-কে ঘিরে। যখন দিল্লি গিয়েছিলাম, ভয়ঙ্কর রকম হোম সিকনেস গ্রাস করেছিল। কলকাতার বন্ধু, মা-বাবাদের খুব মিস করতাম। আরও বেশি করে পয়লা বৈশাখ, দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো, ২৫ বৈশাখের কথা মনে করে মনটা খাঁ খাঁ করত। 

দিল্লিতে গিয়ে জানতে পারলাম জেএনইউ-তে আমাদের একটা নববর্ষ কমিটি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি কর্মী ও পড়ুয়ারা মিলে ওই কমিটি তৈরি করেছিলেন। শুধু ভারতের নয়, বাংলাদেশের বাঙালিরাও ছিলেন। প্রতিবছর জাঁকজমক করে নববর্ষ উদযাপিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাঙালি নববর্ষে জমাটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হত। সেই সব অনুষ্ঠানের জন্য এক সপ্তাহ ধরে প্র্যাকটিস করতাম। নববর্ষের রসনায় থাকত পাঁঠার মাংস, মাছ, রসগোল্লা ইত্যাদি। এক সপ্তাহ ধরে চলত নানা ধরনের অনুষ্ঠান। একটা ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের ফুটবল ম্যাচও হয়। দু'দিন আগে থেকে শুরু হত কুইজ, গানের লড়াই। নেমন্তন্ন, চাঁদা তোলা, আর পোস্টার পৌঁছে দিতাম হস্টেলে হস্টেলে। পয়লা বৈশাখে খাবারের কুপন বিক্রির দায়িত্বও ছিল। দু-তিন সপ্তাহ যে কী অদ্ভূত ঘোরের মধ্যে দিয়ে চলে যেত, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না! 

লকডাউনের জেরে গতবছর জেএনইউ ক্যাম্পাসে নববর্ষ উদযাপন করতে পারিনি। এবারও নবববর্ষ পালিত হচ্ছে না। তার উপরে আমি আবার বাংলায়। জেএনইউ-কে ভীষণ মিস করছি। মিস করছি পয়লা বৈশাখকে। ওই এক টুকরো কলকাতা, একট টুকরো বালি, এক টুকরো উত্তরবঙ্গ, এক টুকরো বাংলাদেশ দিল্লির বুকে একাকার হয়ে যেত। সেই বন্ধুদের, সেই ভালোবাসাগুলোকে প্রচণ্ড মিস করছি। একসঙ্গে গান দাওয়া, খাওয়াদাওয়া মিস করছি। জেএনইউ-র শেষ নববর্ষ উদযাপন কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলাম আমি। আমরা ঢাক এনেছিলাম। জেএনইউ-র পয়লা বৈশাখ উদযাপনের ঐতিহ্যে এটাই প্রথমবার। ঢাকের তালে কত হুল্লোড় করেছি! আজ সকাল থেকে একাধিক অনুষ্ঠানে গিয়েছি। আমার কেন্দ্র বালির মানুষদের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছাও বিনিময় করেছি। তবে করোনার জেরে বড় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছি না। ব্যস্ততার মাঝেও কানে বাজছে জেএনইউ-র সেই ঢাকের আওয়াজ। মনে পড়ছে জেএনইউ-র বন্ধুদের। আর মনে পড়ছে বাংলাদেশের তিন্নিকে। আমাদের পয়লা বৈশাখকে খুব মিস করছি।

(অনুলিখন)

আরও পড়ুন- শৈশবে কাকার সঙ্গে যেতাম হালখাতায়, যৌবনে বান্ধবীরা শোনাত রবীন্দ্রনাথ, বদলে গেল কলকাতা!

.