পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড: বছর ঘুরেও মিলছে না আলোকবর্তিকার সন্ধান
পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ড। ঘটনার ভয়াবহতা তো ছিলই। পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপানউতোর, একাধিক বিতর্ক রাতারাতি প্রচারের আলোয় ঠেলে দিয়েছিল এক সাধারণ মহিলাকে। সাজানো ঘটনা, ক্লায়েন্টের সঙ্গে গোলমাল। এমন হাজারো বক্রোক্তিতে বারবার লাঞ্জিত হয়েছেন। তবু হাল ছাড়েননি। কিন্তু এক বছর ধরে চূড়ান্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যিনি একা অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, আজ কেমন আছেন তিনি?
পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ড। ঘটনার ভয়াবহতা তো ছিলই। পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপানউতোর, একাধিক বিতর্ক রাতারাতি প্রচারের আলোয় ঠেলে দিয়েছিল এক সাধারণ মহিলাকে। সাজানো ঘটনা, ক্লায়েন্টের সঙ্গে গোলমাল। এমন হাজারো বক্রোক্তিতে বারবার লাঞ্জিত হয়েছেন। তবু হাল ছাড়েননি। কিন্তু এক বছর ধরে চূড়ান্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যিনি একা অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, আজ কেমন আছেন তিনি?
দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে এভাবেই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। প্রতিনিয়ত জোরদার হতে থাকে ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের কঠোরতর শাস্তির দাবি। ওঠে আইন পরিবর্তনের দাবিও। কিন্তু, সেই প্রতিবাদে মশালের আগুন কি এতটুকুও বদলাতে পেরেছে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে নির্যাতিতার জীবন কাহিনি? বছর ঘুরে হাজির আরও একটা ৫ ফেব্রুয়ারি। এই একটা বছরে রাজ্যের কোনও প্রান্ত থেকে ওর জন্য উঠে আসেনি একটিও প্রতিবাদের কণ্ঠ। বরং বারে বারে এসেছে ধাক্কা। পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডকে সরাসরি `সাজানো ঘটনা` বলেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। পাঁচ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনার পর সম্ভবত এতেই আরও একবার অপমানিত হয়েছিলেন নির্যাতিতা মহিলা।
না একবার না। পাঁচ ফেব্রুয়ারি তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে উঠে এসেছে একাধিক বক্রোক্তি। তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মতে, পাঁচ ফেব্রুয়ারির ঘটনা নিছকই ক্লায়েন্টের সঙ্গে ওই মহিলার গণ্ডগোল। সিএনএন আইবিএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "...পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। এটি ধর্ষণের কোনও ঘটনাই নয়। ওই মহিলা (ধর্ষিতা) এবং তাঁর খদ্দেরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জের।"
স্বভাবতই ২৪ ঘণ্টাকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পরেন পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের অভিযোগকারী। তাঁর প্রশ্ন, "আমাকে কী বলতে চান সাংসদ? আমি কি দেহপসারিণী?" তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, `আ রেপ ইজ আ রেপ`।
এখানেই শেষ না। তৃণমূলপন্থী নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ তো ধর্ষণের প্রেক্ষিত নিয়েই সরাসরি প্রশ্ন তুলে বসলেন।
আর এভাবেই গত একবছর ধরে বারবার অপমানিত হয়েছেন পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের নির্যাতিতা। বারবার ওকে প্রমাণ দিতে হয়েছে, তাঁকে কী চরম অপমানের শিকার হতে হয়েছে পাঁচই ফেব্রুয়ারি রাতে। গত একটা বছর কীভাবে কেটেছে ওঁর?
নাইট ক্লাবে গিয়েছিলেন। কিন্তু, শুধুমাত্র নাইট ক্লাবে যাওয়ার কারণেই কি সহজলভ্য হয়ে যেতে পারেন একজন মহিলা? প্রশ্নটা তুলে দিলেন নির্যাতিতাই।
যে বাড়িতে থাকতেন, আজ সেখান থেকে তিনি বিতাড়িত। আয়ের পথ বন্ধ। দুই সন্তানকে নিয়ে আজ বাবা-মায়ের উপর আর্থিকভাবে নির্ভর করতে হয় ওঁকে। পিছন ফিরে তাকাতে চান না। কিন্তু, আগামীও কি ওঁকে দিতে পারছে কোনও আলোকবর্তিকার সন্ধান? সম্ভবত না। আর সেই কারণে গত একবছর ধরে চরম প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে আজ ক্লান্ত তিনি।
ভার্মা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বদলাচ্ছে ধর্ষণের সংজ্ঞা। কিন্তু, সেই পরিবর্তন কি এতটুকুও মসৃণতা দিতে পারবে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে নির্যাতিতার জীবনকে? গত একবছর কিন্তু কোনওভাবেই দিতে পারেনি সেরকম কোনও ইঙ্গিত।