অর্থোপেডিকে বেড নেই, মেডিসিন বিভাগে ফেলে রাখার অভিযোগ, SSKMএ বিনা চিকিৎসার মৃত্যু রোগীর
গতকাল সন্ধ্যায় করা একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, কার্যত যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন রতনশীল। পরিবারের কেউ তার বুকে হাত বুলিয়ে চলছেন।
অয়ন ঘোষাল: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর জি ২৪ ঘণ্টার সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বটে। তবে সবটাই সার, শেষরক্ষা হল না। টানা ৬ দিন বিনা চিকিৎসায় পড়ে রইলেন রোগী। অবশেষে সোমবার সকালে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মৃত্যু হয় শিলিগুড়ি রতন শীলের। ঘটনা কলকাতার খাস SSKM হাসপাতালে। গতকাল সন্ধ্যায় করা একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, কার্যত যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন রতনশীল। পরিবারের কেউ তার বুকে হাত বুলিয়ে চলছেন। উল্লেখ্য, দেহ নিতে অস্বীকার করেছে পরিবারের। পাশাপাশি তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন।
প্রায় ২৬ ঘণ্টার টানাপোড়েনের পর, গত ২৭ জানুয়ারি সকাল আটটায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগী রতন শীলকে ভর্তি নেওয়া হয়। তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল মেডিসিন বিভাগে। সমস্যা অর্থোপেডিকের। অভিযোগ, ২৭ থেকে ২ তারিখ কার্যত বিনা চিকিত্সায় পড়ে ছিলেন রতনবাবু।
এদিকে চিকিৎসকরা আগেই বলে দিয়েছেন, অর্থোপেডিকে না নিয়ে গেলে তিনি খুব তাড়াতাড়ি বিকলাঙ্গ হয়ে পড়বেন। এ দিকে অর্থোপেডিক বিভাগের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের বিভাগে একটিও বেড খালি নেই।
এখন প্রশ্ন অর্থোপেডিকের সমস্যা নিয়ে কেন একজন রোগীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হল। পেলভিসের এবং HeartCAG ভাঙার পাশাপাশি তাঁর আনুসাঙ্গিক সমস্যা থাকলেও তাঁকে ট্রমা কেয়ারে না রেখে মেডিসিন বিভাগে ফেলে রাখা হল কেন? এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য মেলেনি।
আরও পড়ুন: ZEE 24 Ghanta খবরের জের, ২৬ ঘণ্টা পর রাতারাতি রোগীকে ভর্তি করল SSKM
ঠিক কেমন ছিল ঘটনাপ্রবাহ, গত ২২ জানুয়ারি পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন শিলিগুড়ির বাসিন্দা রতনশীল চন্দ্র। ভর্তি হন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু পায়ের গুরুতর আঘাতের সঠিক চিকিৎসা মেলেনি সেখানে। অতঃপর তাঁকে রেফার করা হয় এসএসকেএম-এ। পরিবার সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গ থেকে এসএসকেএম এসে প্রথমে ট্রমা কেয়ার সেন্টার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ট্রমা কেয়ার জানায়, ২২ জানুয়ারি অ্যাক্সিডেন্ট। ২৬ তারিখ ৭২ ঘণ্টা কেটে যাওয়ায় আর ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা যাবে না। তখনই ট্রমা কেয়ার এমারজেন্সিতে নিয়ে যেতে বলে। এমারজেন্সি থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই ছুটোছুটি শুরু করেন রোগীর পরিবার। কিন্তু সেখানে ভর্তি নেওয়া হয় না। শুরু হয় টানাপোড়েন।
রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজি করে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এনআরএসে। সেখানেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। তারপর আবার এসএসকেএম-এ রোগীকে নিয়ে আসেন রোগীর পরিবার। সেখানে ২৬ জানুয়ারি কনকন ঠান্ডায় ঠাঁয় সারারাত রোগীকে নিয়ে ঠান্ডার মধ্যে হাসপাতালের বাইরে বসে থাকে পরিবার।
জি ২৪ ঘণ্টা খবরের জেরে এরপর রেফারে নাকাল রোগীকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি নেয় এসএসকেএম। প্রায় ২৬ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর তড়িঘড়ি রোগীকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। বিনা চিকিৎসায় পড়ে রইল রোগী।