একটা নবমীর বর্ষার মুহূর্ত কোলাজ

Updated By: Sep 24, 2017, 01:26 PM IST
একটা নবমীর বর্ষার মুহূর্ত কোলাজ

সৌম্য সিংহ

বৃষ্টির আশায় দিন গুনেছি কত। বৃষ্টি আসেনি। উল্টে মেঘ জমাট বেঁধেছে। গাঢ় হতে হতে তা ধূসর, কালো, সাদা ফটফটে। অন্তস্থলেই সংগোপনে তা ঝড়ে পড়েছে আপন প্রবাহে। বহিস্থলে প্রকাশিত নয় সে জলবিন্দু। আসলে পুরুষের তো কিছু চারিত্রিক বিধিনিষেধ আছে—দায়িত্ব-কর্তব্যের এভারেস্ট পার করে আরও বড় পর্বতের সন্ধানী মন, চার্লস চ্যাপলিনের কথা মত বৃষ্টির রাস্তায় জমাট মেঘের বিস্ফোরণ ঘটানো, সব খেলার শেষে হার জেনেও হাসিমুখে হারকেই রেলিশ করা—সেখানে ইমোশনস নৈব নৈব চ।

উত্সবের শহরে বৃষ্টি নেমেছিল। নবমীর সন্ধ্যায় ভেসেছিল শহর। এক মিনিট, দু'মিনিট, দশ...পনের...কুড়ি...করতে করতে এক ঘণ্টা, দেড় ঘণ্টা, পৌনে দু’ঘণ্টা। দুর্যোগমুখর নবমী নিশিতে উত্তরের বনেদি বাড়ির চাতালের ঘেরা অংশে আমি-তুমি-সে এক হয়েছিলাম। গায়ে গা লাগছিল। বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যাওয়া নতুন জামায় যখনই স্পর্শ, তখনই বুঝছিলাম শরীরের গভীরে উষ্ণপ্রস্রবণ। ফুটন্ত জলও কি সে দেখাতে চায় আড়ালে? হয়ত, হয়ত বা না। মাঝ তিরিশে বুঝতে শিখেছি অনেকটাই, তবে না বোঝারও তালিকাটা মোটেই ছোট নয়। স্নায়ু বলছিল—ধীরে ধীরে অষ্টাদশীর থেকে সকলের আড়ালে কায়দা করে স্পর্শ সুখ পেতে, মন প্রশ্ন তুলছিল—তুমি না ঈশ্বর অনুরক্তাকে স্পর্শ করেছ বহুবার...তবু কেন এত লালস তোমার? যুদ্ধং দেহি আরেকটা মন উত্তর দিতে চেয়েছিল—দেবভক্তাও কি দেবতার স্পর্শ পেয়ে নিজেকে তৃপ্ত করে না?

প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গেই ছড়িয়ে যাচ্ছিল জাল—একদিকে অফিসের বস-সিনেমার হিরো-পাড়ার রোগা প্যাঁটকা ছোঁড়া-ফেসবুকের গুণমুগ্ধরা, আর অন্যদিকে শুধু পূজারিণী। ঈশ্বরের সন্তানের দোহাই দিয়ে ওদের ত্যাগ করতে পারেনি ও? কেন বিরক্তও হয় না? প্রতিবাদ জানাতে জানাতে আমি ক্লান্ত। তবে কি সম্পর্কের কোনও কেমিক্যাল সলিউশন রয়েছে কোষে কোষান্তরে?  

—তুমি কি আমাকে সন্দেহ করো?

—হ্যাঁ করি, পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়, করতে আমি বাধ্য হই প্রতিবার...

—তাহলে বলব ফালতু সন্দেহ বন্ধ করো...

সরলরেখায় জীবনটা চললে বিন্দাস দুনিয়ার বাসিন্দা হতে পারতাম আমিও। চলেনি, চলে না এমন জীবন। প্রতিটা বাঁকে দাঁড়িয়ে অস্থির হয় হৃদয়। মনে হয়, প্রিয়জন কি সুখে নেই? অথচ আমিই তো সুখ দিতে উদয়াস্ত উড়ে বেরিয়েছি এ ডাল থেকে ওই ডালে। পরাজয়ানুভূতি গ্রাস করে। তখনই সুখানুভূতির অতৃপ্তিতে অশান্তির মেঘ ঘনায়। বাকবিতণ্ডার কয়েকটি ঘণ্টা...

সেদিন অবশ্য তেমনটা হয়নি—

বৃষ্টি তখন ঝিরিঝিরি। যান জট পেরিয়ে, দুর্যোগ মাথায় নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল ভক্তা। এলো চুলকে বাগে এনেছে ক্লাচার, কপালময় অবাধ্য চুলের রাশি ঢেকেছে টিপ। বিন্দু বিন্দু ঘামও জমেছে ভুঁরুর ওপর। কালো শাড়ি আর লাল ব্লাউজের কন্ট্রাস্ট, নাকছাবিটা হাল ফ্যাশনের, ডিজাইনারের দান।

আবার বৃষ্টি এল। এবার একটি গলির মধ্যে কার্নিশের ছায়ায় আমি আর ও। দুজনের পুজো দেখা। দুজনাই বাড়িয়ে দিয়েছি হাত। বৃষ্টির জল ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমাদের। ওর কোমরে আর একটি হাত রেখেছি আমি। সেই যে তখন থেকে ছোঁয়াছুঁয়ির ইচ্ছেটা, এই ইচ্ছেটার অববাহিকা। ও যে আমার অভব্যতার একমাত্র প্রশ্রয়দাত্রী।

বৃষ্টি কমেছে। যানবাহনের গতি হয়েছে আরও স্লথ। বরাত জোরে মিলে গেল ট্যাক্সি। কাচ তোলা ট্যাক্সির জানালা ভর্তি জলের ফোঁটা। ফোঁটা ফোঁটা জলে আলোময় শহরটা ঝাপসা। বাইরে থেকেও আমাদের কে্উ দেখতে পাচ্ছে না বোধহয়। আমি ডুব দিলাম ওর বুকে। ওর বুকে যে এক আকাশ মুক্তি। মুক্তিপ্রত্যাশী বদ্ধ জমাট মেঘ ঝরে পড়ল নিমেষের মধ্যে। 

২৪ ঘণ্টার ই-নৈবেদ্য- আদর্শ শঙ্কর, দুর্গমকে সুগম করাই প্যাশন অভিযাত্রী অনিন্দ্যর

২৪ ঘণ্টার ই-নৈবেদ্যরেডিও ধার্মিক মীরের কাছে মহীষাসুরমর্দিনী আজও গাইডবুক

২৪ ঘণ্টার ই-নৈবেদ্য''মায়ের বিয়ের শাড়ি চুরি করে, পাঁচ বছর বয়সে পুজোয় হাতেখড়ি''

.