স্বাস্থ্য দফতরের বাগাড়ম্বরই সার, ভোল বদলায়নি মেডিক্যালে
উত্তরপাড়া কোতরং-এর বাসিন্দা চঞ্চল দে। তার পুত্র চয়নকে বুধবার রাতে সাপে কাটে। উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে মধ্যরাতেই তাকে রেফার করা হয় মেডিক্যালে। বৃহস্পতিবার বেলা পর্যন্ত কোনও চিকিত্সাই হয়নি চয়নের।
উত্তরপাড়া কোতরং-এর বাসিন্দা চঞ্চল দে। তার পুত্র চয়নকে বুধবার রাতে সাপে কাটে। উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে মধ্যরাতেই তাকে রেফার করা হয় মেডিক্যালে। বৃহস্পতিবার বেলা পর্যন্ত কোনও চিকিত্সাই হয়নি চয়নের। অভিযোগের পাশাপাশি উদ্বেগে দৃশ্যতই ভেঙে পড়া চঞ্চলবাবুর বক্তব্য, পরিবর্তনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রাজ্যবাসীকে উন্নততর স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তা অধরাই রয়ে গেছে এখনও। চঞ্চলবাবু একা নন। মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো নিয়ে বারবার উঠছে একরাশ অপ্রীতিকর প্রশ্ন। সমস্যাদীর্ণ মেডিক্যালের অসুখ মূলত ২ ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি পরিকাঠামোগত। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য নিউরো অর্থো বিভাগে এনসিভি পরীক্ষা প্রায় সাত মাস বন্ধ। ফলে বিভাগের চল্লিশ শতাংশ কাজ সময়মত হচ্ছেনা। ইএনটি অডিওমেট্রিক পরীক্ষার যন্ত্র দীর্ঘদিন খারাপ। এই যন্ত্রে মূলত শ্রবণশক্তির তীব্রতা বা ক্ষমতা পরীক্ষার পর রোগ নির্ণয় হয়। ধর্মতলার এলিট সিনেমার কাছে একটি বেসরকারি ল্যাব থেকে রোগীদের এই পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলা হচ্ছে। এতে বাড়তি টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সেন্ট্রাল ল্যাবের শোচনীয় দশা। রক্ত বা অন্যান্য পরীক্ষার ডেট পাওয়া যাচ্ছে চার মাস পর। ফলে রোগ নির্ণয় না হওয়ায় অনেকেরই অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এমারজেন্সিতে ২টি অপারেশন থিয়েটার। সাফাইকর্মী ও অ্যানাস্থেসিস্টের অভাবে ১টি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। অস্ত্রোপচারের দিন ক্রমশঃ পিছোচ্ছে। হাসপাতালে মোট অ্যানাস্থেসিস্টের পদ ৪২। খালি রয়েছে ১৭টি পদ। ফলে অস্ত্রোপচারের ওয়েটিং লিস্ট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। যেখানে তিন জন রোগী পিছু একজন করে নার্স থাকার কথা সেখানে এই হাসপাতালে পঞ্চাশজন রোগী পিছু একজন করে নার্স রয়েছেন। ২০১০এর জানুয়ারি থেকে হাসপাতালে তৈরি হচ্ছিল অত্যাধুনিক বার্ন ইউনিট। নতুন সরকার আসার পর টাকার অভাবে সে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। পরিষেবাগতভাবেও হাসপাতালের বিরুদ্ধে রয়েছে ভুরিভুরি অভিযোগ। যেমন... নিউ ওপিডি বিল্ডিং ক্রমশঃ দালাল ও মেডিক্যাল রিপ্রেসেনটেটিভদের আখড়া হয়ে উঠছে। দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে হাসপাতাল চত্বরে। ট্রলি, স্টেচার বা হুইলচেয়ার পেতে দালালকে দিতে হচ্ছে কুড়ি, ষাট বা একশো টাকা। নার্স, গ্রুপ ডি কর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সীমাহীন দুর্ব্যবহারে অতীষ্ঠ রোগীর আত্মীয়রা। বেশিরভাগ শৌচালয়ের দশা নারকীয়। সাফাইকর্মীর ষাট শতাংশ পদ খালি। ফলে বেশ কিছু ওয়ার্ডের শৌচালয়ে দুর্গন্ধে ঢোকাই দায়। যাবতীয় অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি। তার পাল্টা দাবি, পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আসছেনা। পাশাপাশি, কয়েকশো শূণ্য পদে নিয়োগ না হওয়ায় কর্মীদের ওপর চাপ বাড়ছে। ফলে তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় তারা রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই দূর্ব্যবহার করে ফেলছেন।