ফের মেডিক্যাল! "অক্সিজেন দাও, খুব কষ্ট হচ্ছে" কাতর আর্তি নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যু তরুণীর
এমনকী, তাঁর গুরুতর অবস্থা দেখে অন্যান্য রোগীরাও অক্সিজেন মাস্ক, স্যালাইন চলা অবস্থাতেই কিশোরীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। বহুবার ডাকাডাকি করলেও চিকিৎসক বা নার্স কেউই আসেননি। বরং তাঁরা জানিয়েছেন, ওই সময় শিফট পরিবর্তন চলছিল কাজেই এখন কিছুই করা সম্ভব নয়।
তন্ময় প্রামাণিক: অক্সিজেন সিলিন্ডার ফাঁকা, হাতের স্যালাইনের চ্যানেল খুলে রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা বিছানা। তীব্র যন্ত্রণায় বাঁচার কাতর আর্তি নিয়ে চিৎকার করে চলেছে বছর ২০-র তরুণী। তাঁকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় চিকিৎসক নার্সদের ডাকাডাকি করলেন ওয়ার্ডের বাকি রোগীরাও। তবে তাতেও কাজ হল না। সময় মতো এসে পৌঁছলেন না কেউ। তীব্র শ্বাসকষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়ে কার্যত ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন সুজাতা সাউ (২০)। ঘটনা খাস কলকাতা মেডিকেল কলেজের। অন্তত এমনই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অন্য আরেক রোগী।
আরও পড়ুন: ছবি আর আধার কার্ডের প্রিন্ট আউট এনে দিয়ে NEET-পরীক্ষার্থীকে সাহায্য কলকাতা পুলিসের
গ্রিন বিল্ডিং-এ চিকিৎসাধীন থাকা উল্টোডাঙার বাসিন্দা দোলন অধিকারী বলছেন, "৪ সেপ্টেম্বর রাতে ভর্তি হয় মেয়েটি। তখনই সে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। সকাল হওয়ার পর তাঁর যন্ত্রণা এবং শ্বাসকষ্ট দুই-ই বাড়তে থাকে।" প্রত্যক্ষদর্শীর আরও অভিযোগ, রাত থেকে মেয়েটি খাবার চাইলেও মৃত্যু পর্যন্ত কোনও খাবারই পায়নি সে।" এমনকী, তাঁর গুরুতর অবস্থা দেখে অন্যান্য রোগীরাও অক্সিজেন মাস্ক, স্যালাইন চলা অবস্থাতেই কিশোরীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। বহুবার ডাকাডাকি করলেও চিকিৎসক বা নার্স কেউই আসেননি। বরং তাঁরা জানিয়েছেন, ওই সময় শিফট পরিবর্তন চলছিল কাজেই এখন কিছুই করা সম্ভব নয়।
অভিযোগ শেষ হয়নি এখানেও। প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন,"মেয়েটি রাত থেকেই বার বার খেতে চাইছিল। আমার ওঠার ক্ষমতা ছিল না। তাও সকালে ওর বেডে গিয়েছিলাম। আমি নিজের থেকে ২টো বিস্কুট খাওয়াই ওকে। বারবার বলছিল, 'আন্টি খুব কষ্ট হচ্ছে। একটু সিস্টারদের বলো, আমাকে বাঁচিয়ে দাও।"
একরাশ আফসোস নিয়ে অভিযোগকারীর বক্তব্য "চোখের সামনে স্যার বাঁচান, সিস্টার বাঁচান, বলতে বলতে মেয়েটার মৃত্যু দেখলাম। ভয় লাগছিল। একটু চিকিৎসা পেলে মেয়েটা হয়ত ও বেঁচে যেত।" তবে মোবাইলে ঘটনার কিছুটা ছবি তোলা হলেও তা নানাভাবে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, মহারানী কাশীশ্বরী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুজাতা সাউ (২০)। বাবা হরেন্দ্র নাথ সাউ কাশীপুর রেলবস্তিতে ঠেলাগাড়িতে ছাতু বেচেন। বসবাসও সেখানেই। গত ২৪ অগাস্ট জন্মদিন ছিল সুজাতার। বস্তির ঘরেই কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিন পালন করে সুজাতা। ২ সেপ্টেম্বর জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে সুজাতাকে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই করোনা আক্রান্ত সন্দেহে সুজাতাকে রেফার করা হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এরপরেই তাঁকে গ্রীন বিল্ডিং-এ স্থানান্তরিত করা হয়। সুজাতা মারা যাওয়ার পর আরজি করে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
এর আগেও করোনা চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে। দোলনদেবীর বয়ানে এই হাড়হিম করা ঘটনা আবারও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। একাধিকবার ডাকাডাকি সত্বেও কেন এলেন না কোনও স্বাস্থ্যকর্মী? কেন অন্য যুক্তি দিয়ে এড়িয়ে গেলেন দায়িত্ব? সময় মতো কেনই বা খাবার, অক্সিজেন পেল না তরুণী? একাধিক প্রশ্ন উঠছেই। আপাতত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দোলন অধিকারী। তবে আতঙ্কের রেশ কাটছে না। চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় তরুণীর মৃত্যু তাঁকে এখনও ভাবাচ্ছে বলেই জানিয়েছেন তিনি। বারবার একটাই কথা বলছেন দোলন অধিকারী, " একটু অক্সিজেন দিলে হয়ত মেয়েটা বেঁচে যেত মেয়েটা"