সব জেনেও সাধারণ মানুষের ঘাড়েই দোষ চাপাল সরকার
চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে সমস্ত তথ্যই জানত রাজ্য সরকার। রাজ্যের বহু মানুষ সারদার প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হওয়ার ছ`দিন পর এ কথা স্বীকার করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারে কাছের সংস্থার কাছে রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হওয়ার দায় নিল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। উল্টে সাধারণ মানুষের ঘারেই গোটা ঘটনায় দায় চপালেন মুখ্যমন্ত্রী।
চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে সমস্ত তথ্যই জানত রাজ্য সরকার। রাজ্যের বহু মানুষ সারদার প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর এ কথা স্বীকার করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারে কাছের সংস্থার নানা প্রলোভনী প্রকল্পে রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হওয়ার দায় নিল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। উল্টে সাধারণ মানুষকেই গোটা ঘটনায় কাঠগড়ায় চাপালেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার চিট ফান্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে মহাকরণে বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন শিল্প, অর্থ দফতরের মন্ত্রীও। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "সিবিআই আগেই অভিযোগ জানিয়েছিল রাজ্যকে। পয়লা বৈশাখের পর সেকথা জানতে পারে রাজ্য।" বিধান নগর থানায় সিবিআইয়ের করা অভিযোগের পরই এই সংস্থার দুর্নীতি সম্পর্কে রাজ্য সব জানতে পারে।
সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে ঠিক কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী? "বিনিয়োগের আগে সাধারণ মানুষের ক্রসচেক করা উচিত ছিল।" সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঘটনার তদন্তে 'আইন আইনের পথেই চলবে' বলে জানিয়ে রাজ্য সরকার। সাধারণ মানুষ যখন চাইছেন রাজ্য সরকার তাঁদের প্রাপ্য টাকা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করুক। তাঁদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর একটাই কথা, "যা যাওয়ার তা গেছেই।"
রাজ্য সরকারের ঘাড় থেকে দায় এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "চিট ফান্ডের নামে প্রতারণা করছে বহু সংস্থা। এই ঘটনা আশির দশক থেকে চলছে।" চিট ফান্ড নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি রাজ্য সরকারের অধীন নয় বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ''এগুলির নজর রাখে কেন্দ্র। কেন্দ্রেরই নানা সংস্থা নজরদারি চালায়।"
রাজ্যে ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আগের বাম সরকারকেই দায়ী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, "যাঁরা মানুষকে সর্বস্বান্ত করে, তাঁরা সমস্যার সমাধান করে না।" উল্টে এ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাম সরকারে আনা চিট ফান্ড বিরোধী আইনেও অনেক গলদ ছিল বলে মনে করে এই সরকার।
সারদার মতো সংস্থার দুর্নীতি রুখতে আজকের বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেগুলি কী কী? রাজ্য সরকার সিদ্ধন্ত নিয়েছে, বিশেষ তদন্তকারী কমিটি গঠন করে চিট ফাণ্ড দুর্নীতিতে লাগাম পড়ানো হবে। গঠিত হবে বিশেষ তদন্তকারী কমিশন। কমিশনের দায়িত্বে থাকবেন শ্যামল সেন। থাকবেন আরও ৪ সদস্য। প্রতারিতরা কমিশনে সরাসরি এসে অভিযোগ জানাতে পারবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত এগোবে।
সারদার সঙ্গে শাসক দল তৃণমূলের ঘনিষ্টতা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাক্য করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকদের কড়া প্রশ্ন এড়াতে সংবাদ মাধ্যমকেই পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা। ফলে গলাও বেশ চড়াতেই হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। সারদা কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তাঁর দলের এক সাংসদেরও। সেই 'সাংবাদিক সাংসদ'দের কোনও দোষ দেখছেন না মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, উনি দলের সাংসদ হওয়ার ওখানে সাংবাদিক ছিলেন। সবশেষে মমতা বললেন, "আইন আইনের পথেই চলবে।" মুখ্যমন্ত্রী যখন এসব বলছেন তখন সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মানুষরা তখন কাঁদছেন, সেই কান্নাটা শুনতে পেলেন না সেটা পুরো সাংবাদিক সম্মেলনটা শুনলেই বোঝা যাবে।