এনআরসি 'হিন্দুহিতৈষী' নয়, অস্তিত্বরক্ষার লড়াইয়ে সংখ্যাগুরুদের টানার কৌশল তৃণমূলের?
লোকসভা ভোটের প্রচারে এরাজ্যে এনআরসি চালুর দাবি তুলেছিল বিজেপি। এখনও একই অবস্থান তাদের।
কমলিকা সেনগুপ্ত
লোকসভায় নির্বাচনের শেষ দফার আগে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন। ভোটের ফলপ্রকাশের পর প্রথম রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরনো আগ্রাসী মেজাজে তীব্র বিরোধিতা করলেন নাগরিকপঞ্জীর। চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, তিনি থাকতে বাংলায় এনআরসি চালু করতে পারবে না বিজেপি। আর একইসঙ্গে আঘাত হানার চেষ্টা করলেন বিজেপির 'কোর' ভোটে। অসমের নাগরিকপঞ্জীর ভুক্তভোগী যে হিন্দু বাঙালিরা, সেটা বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
লোকসভা ভোটের প্রচারে এরাজ্যে এনআরসি চালুর দাবি তুলেছিল বিজেপি। এখনও একই অবস্থান তাদের। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে। এখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। রাজ্যে বিজেপির মোকাবিলায় 'এনআরসি'-কে হাতিয়ার করে বড়সড় আন্দোলন গড়ে তুলছে চাইছে তৃণমূল, তার ইঙ্গিত মিলেছে দলনেত্রীর কথায়। এর পাশাপাশি এনআরসি যে 'হিন্দুহিতৈষী' নয় তা বোঝাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''অসমে ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন ১২ লক্ষ হিন্দু, ১ লক্ষ গোর্খা। মুসলিম এবং বৌদ্ধও আছে। আইকার্ড, পাট্টা জমা দিয়েও ঠাঁই হয়নি। একটা দেশে ক'বার করে পরাধীন হতে হবে? এখন প্রমাণ দিতে হবে আমরা নাগরিক।''
একদিকে সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখা, অন্যদিকে বিজেপির দিকে চলে যাওয়া সংখ্যাগুরু ভোটকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে তৃণমূল। আর এটা যে রাজনীতি নয়, অস্তিত্বের লড়াই তাও স্পষ্ট করেছেন মমতা। আর এনআরসি বিরোধিতায় পুরনো মমতার ঝলকও দেখা গিয়েছে এদিন। জঙ্গি আন্দোলনেও তৃণমূল যে পিছপা হবে না, সেই হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়,''আন্দোলনের ডাক আসলে যে জামাকাপড়ে আছেন বেরিয়ে আসতে হবে। যার কাছে যা আছে, তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এটা অস্তিত্বরক্ষার লড়াই।''
আর এক্ষেত্রে বাম-কংগ্রেসের অবশিষ্ট ভোটেও ফাটল ধরানোর কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। বামদের শুয়ো রানি আখ্যা দিয়ে মমতার বার্তা, কংগ্রেস ও সিপিএমের অস্তিত্ব নেই রাজ্যে। টাকা ও এজেন্সির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে শুধু তৃণমূল। বাংলায় আমি যতদিন বেঁচে আছি ক্ষমতা থাকলে এনআরসি করো। চারটে প্রজন্ম তৈরি করে রেখেছি। আমার পরেও লড়াই জারি থাকবে।
মমতার কৌশলের মোকাবিলায় বিজেপির ভাঁড়ারে রয়েছে নাগরিকত্ব বিল। তারা বলছে, হিন্দু বাঙালিদের নিয়ে মমতা চিন্তিত হলে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সমর্থন করুক তৃণমূল। ওই বিল পাশ হলেই তো বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্ট্রান, জৈন, বৌদ্ধ ও শিখদের ভারতের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত হবে।
আরও পড়ুন- গরুর দুধ খেয়েছি, সকালে ২০বার ওম বলি, ছাগলের দুধ খেলে শরীর তুলতুলে হয়: মমতা