Mahendranath Gupta: ভাবের অমৃত ছড়িয়ে অমর হলেন 'ছেলে-ধরা মাস্টার' শ্রীম

তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল যন্ত্রণাময়, অশান্তিময়। তবুও সেসব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ঢেলে দিতেন তাঁর নিভৃত আধ্যাত্মিক সাধনে। সেখানে রামকৃষ্ণের সঙ্গসুধাপান ছাড়াও ছিল নানা ভাবে রামকৃষ্ণ পরিকরে যুক্ত থাকা, কথামৃতের কাজ করা।

Updated By: Jul 14, 2022, 04:44 PM IST
Mahendranath Gupta: ভাবের অমৃত ছড়িয়ে অমর হলেন 'ছেলে-ধরা মাস্টার' শ্রীম

সৌমিত্র সেন 

১৮৮২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর নবজন্ম। কেননা সেদিনই শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা। সেদিন থেকেই তাঁর জীবনের ধারা বদলে যায়। তবে, তাঁর জন্মদিন ১৮৫৪ সালের ১৪ জুলাই। তিনি মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত। সর্বজনে পরিচিত 'শ্রীম' নামে। তাঁর অনন্য সৃষ্টি-- 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত'। রামকৃষ্ণের গৃহী শিষ্য তিনি। সংসারী হয়েও শ্রীম ছিলেন প্রায় সন্ন্যাসীর মতোই সংসার-উদাসীন, নিস্পৃহ, ভগবদ্ভাবে সদানিমজ্জিত।   

তাঁর অনন্য কীর্তি এই রামকৃষ্ণকথামৃতই তাঁকে বিশ্ব-পরিচিতি দেয়। এ এমন এক কাজ যেজন্য তাঁর গোটা জীবনটাই ব্যয়িত হয়ে যায়। যদিও প্রথম যখন এটি প্রকাশিত হচ্ছিল তখন তা 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা' নামেই পরিচিত ছিল। পরে সেটি এই বিখ্যাত নামটি পায়। গবেষকেরা বলছেন, শ্রীম তথা মহেন্দ্রনাথের কথামৃত রচনার সময়কাল ১৮৯৭ থেকে ১৯৩২-- এই ৩৫ বছর। যদিও কথামৃতের শতকরা আশি ভাগের কাজই শেষ হয় ১৯১০ সালের মধ্যেই। ১৯৩২ সালের ৪ জুন তাঁর মৃত্যু। এর আগের রাতে ৯টার সময়ে তিনি কথামৃতের পঞ্চমভাগের প্রুফ দেখেন বলে শোনা যায়। গোটা জীবনটাই তাঁর কথামৃতময়। তাঁর এহেন কথামৃতের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন সারদাদেবী, মুগ্ধ হন বিবেকানন্দ। তা পড়ে ধন্য ধন্য করেন সমস্ত গৃহী ভক্ত, সন্ন্যাসী-সহ বৃহত্তর রামকৃষ্ণ পরিমণ্ডল।

মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত মহাশয় 'মাস্টারমশায়' নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্কুলে পড়াতেন। বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর খুব ভাল যোগাযোগ ছিল। কথামৃতে মহেন্দ্রনাথ নিজেকে নানা ভাবে গোপন করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই 'মাস্টার' বা 'মাস্টারমশায়' বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। এই 'মাস্টার' বা 'মাস্টারমশায়' যে শ্রীম বা মহেন্দ্রনাথ-ই, কথামৃত পড়তে গিয়ে তা পাঠক অচিরেই বুঝে নিতে পারেন। রামকৃষ্ণ-শিষ্য পরিমণ্ডলের অনেকেই সেসময়ে সরাসরি মহেন্দ্রনাথের ছাত্র ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই আবার রামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে দেখা শ্রীম'র হাত ধরে। অভিভাবকদের তখন হয়তো বিষয়টা ভালো লাগত না। ছেলেরা ফাঁকি দিচ্ছে বলে মনে হত। তাই অনেকেই শ্রীমকে সে সময়ে 'ছেলে-ধরা মাস্টার' বলতেন। 

অদ্ভুত ত্যাগের জীবন ছিল এই 'ছেলে-ধরা মাস্টারে'র। তিনটি স্কুল থেকে উপার্জন হত তাঁর। তা যেতও তিন জায়গায়—একটি বরাহনগর মঠে সংসারত্যাগী গুরুভাইদের সেবায়, একটি সারদাদেবী ও তাঁর ভক্তপরিকরের সেবায় এবং অন্য একটি নিজের সংসারে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল যন্ত্রণাময়, অশান্তিময়। তবুও তিনি সে সব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ঢেলে দিতেন তাঁর নিভৃত একক আধ্যাত্মিক সাধনে। সেখানে রামকৃষ্ণের সঙ্গসুধাপান ছাড়াও ছিল নানা ভাবে রামকৃষ্ণ পরিকরে যুক্ত থাকা, কথামৃতের কাজ করা। 

তাঁর এই কথামৃতের কাজটিও অসাধারণ। তিনি নাকি লেখার আগে ধ্যান করতেন। কথামৃতের প্রতিটি দিনের প্রতিটি দৃশ্য তিনি ধ্যানচক্ষে দেখে নিয়ে তবে তা লিপিবদ্ধ করতেন। তাই তা ওইরকম জীবন্ত মনে হয়। তাই তা পাঠককে ভক্তকে, সাধুকে, গৃহীকে এভাবে ছুঁয়ে দেয়। অমৃতের প্লাবনে ভাাসিয়ে দেয় তাঁর মনোজগৎ।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 

আরও পড়ুন: Sawan Month: চলছে শিবের মাস পবিত্র 'শাওন', জেনে নিন কবে শুভদিন

.