কার্টুন কাণ্ডে গ্রফতার অধ্যাপক, নিন্দায় মুখর বিশিষ্টজনেরা
সোশ্যল নেটওয়ার্কিং সাইটে সরকার বিরোধী কার্টুন আপলোড করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ও তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্ত। ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
সোশ্যল নেটওয়ার্কিং সাইটে সরকার বিরোধী কার্টুন আপলোড করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ও তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্ত। ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
সুনন্দ সান্যাল, শিক্ষাবিদ-
মুখ্যমন্ত্রীর এটা করা উচিত্ ছিল না। একজন অধ্যাপক ফেসবুকে একটা কার্টুন পাঠালেন, আর তার জেরে তাঁকে গ্রেফতার করা হল, এটা কি মুখ্যমন্ত্রীর কাজ? ফেসবুকে কার্টুনের ছয়লাপ। অন্য রাজ্য থেকে কেউ কিছু করলে সেটা কী করে আটকাবেন মুখ্যমন্ত্রী?
কবীর সুমন, গায়ক-
অত্যন্ত ইনোসেন্ট একটা কাজ। এরকম জিনিস তো জগত্ সংসারে অহরহ হয়ে থাকে। এখানে তো খারাপ কিছু বলা হয়নি। এটা সাইবার ক্রাইম হতে পারে না। এরকম হলে তো সাধারণ ঠাট্টা, মশকরা করাও বন্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘকাল ধরে লোকজন কার্টুন এঁকেছেন দেওয়ালে, দেওয়ালে। জ্যোতি বসু, ইন্দিরা গান্ধীর বিরোধীরা তাঁদের কার্টুন এঁকেছেন। এটা তো কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র কিছুই না। এটা একটা রসিকতা, যেটা অনুমোদিত না হলে বেঁচে থেকে লাভ কী? এখন আমার খারাপ লাগতে শুরু করেছে, মনে হচ্ছে যা যা করলাম সব বৃথা গেল। আমিও তো গান বানিয়েছি। `সিঙ্গুর থেকে নোনাডাঙা।` আমার বিরুদ্ধেও এরকম ব্যবস্থা নিতে পারেন উনি। এভাবে চলবে না। আমরা অভিভাবকহীন, স্বাভাবিক সরকারহীন অবস্থায় আছি। আমাদের দেশের অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না।
সুনীল গাঙ্গুলি, সাহিত্যিক-
ঝড়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। স্বৈরাচারী শাসনের ইঙ্গিত। কার্টুন তো সারা পৃথিবীতেই হয়, মজা করা হয়, রাজনীতিকদের সমালোচনা করা হয়। এর জন্য কাউকে গ্রেফতার করা খুব খারাপ লক্ষণ। আমার দাবি, অবিলম্বে সেই ভদ্রলোকের মুক্তি চাই।
সুচিত্রা ভট্টাচার্য, সাহিত্যক-
এখন কথা বলতে চিন্তা করতে হচ্ছে, কোন কথাটা সরকারবিরোধী হয়ে যাবে। ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। আমি একটা মজা করে ছবি আঁকতে পারি না? এটা গায়ে লেগে যাওয়াটা আমার কাছে খুব অদ্ভুত ঠেকছে। মনমোহল সিং-এর তো কতরকম কার্টুন বেরোয়, তাহলে তো অনেক দিন আগেই অনেকের অ্যারেস্ট হয়ে যাওয়া উতিত্ ছিল। কার্টুনটার মধ্যে আমি খুব দোষের কিছু দেখিনি।
নবারুণ ভট্টাচার্য, সাহিত্যিক-
এতটা ইনটলারেন্স কেন প্রকাশিত হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। কার্টুন তো একটা মজার জিনিস। সেটা নিয়ে এরকম জলঘোলা করে কার কী লাভ হচ্ছে যারা করছে তারাই জানে। ব্যাপারটা একটা বাড়াবাড়ির চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এর ফলে যাদের মানহানি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মান কিন্তু অন্য কারণে হানি হচ্ছে। এই ধরণের কাণ্ড ঘটানোর জন্য তারা আরও বেশি করে কার্টুনের চরিত্র হয়ে উঠছেন।
কৌশিক সেন, অভিনেতা-
প্রথমে মনে হয় খুব হাস্যকর একটা ব্যাপার। কিন্তু একটু ভাবলে মনে হয়, ততটা হাস্যকর নয়। আমরা চাই সকরার থাকুক, ভালোভাবে কাজ করুক। কিন্তু এত অসহিষ্ণুতা কেন? লোকসভা নির্বাচনের পর এক প্রখ্যাত পেন্টার পলিটব্যুরোর সদস্যদের নিয়ে এতটি পেন্টিং বানান। এতে কারও খারাপ লেগেছিল, কেউ রাগ করেছিল। কিন্তু গ্রেফতার করার কেউ নিশ্চয়ই ভাবেননি। এটা ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন। ওই শিল্পী ওই সময়টাকে ওইভাবে দেখেছিলেন।
ঝড় উঠেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দেওয়ালেও। সরকার বিরোধী ব্যঙ্গচিত্রের জেরে গ্রেফতার হয়েছেন অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। আর তাঁর সমর্থনে ফেসবুকের দেওয়াল ভরে উঠেছে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ব্যঙ্গবিদ্রূপ আর সমালোচনায়।