বড় দুর্গা, সল্টলেকে 'সাকসেস' দেশপ্রিয়তে 'অপ্রিয়'
'বিশ্বের বড় জাহাজ'। টাইটানিক বানাতে সময় লেগেছিল ৪ বছর। আয়ুকাল ছিল মাত্র ৪ দিন। বরফের চাঁইয়ে ধাক্কা খেয়েই জাহাজ ডুবি। 'বিশ্বের বড় দুর্গা'। বানাতে সময় লাগল ৪ মাস। আয়ুকাল মাত্র ১ দিন। জনসুনামিতে বন্ধ বড় দুর্গার দর্শন। টাইটানিক ডুবিতে নাবিক বুঝতেই পারেননি সামনে বরফের চাই। বড় পুজোতে পুলিসও বুঝতেই পারল না সুনামি আসবে। জনসুনামিতে কার্যত কদর্য রূপ দেখা গেল কলকাতা পুলিসের। জনসমুদ্র সামলাতে না পেরে বন্ধ হল বড় পুজো। পুলিসের সাফাই পরিকল্পনা ছিল না পুজো কমিটির।
কলকাতা: 'বিশ্বের বড় জাহাজ'। টাইটানিক বানাতে সময় লেগেছিল ৪ বছর। আয়ুকাল ছিল মাত্র ৪ দিন। বরফের চাইয়ে ধাক্কা খেয়েই জাহাজ ডুবি। 'বিশ্বের বড় দুর্গা'। বানাতে সময় লাগল ৪ মাস। আয়ুকাল মাত্র ১ দিন। জনসুনামিতে বন্ধ বড় দুর্গার দর্শন। টাইটানিক ডুবিতে নাবিক বুঝতেই পারেননি সামনে বরফের চাই। বড় পুজোতে পুলিসও বুঝতেই পারল না সুনামি আসবে। জনসুনামিতে কার্যত কদর্য রূপ দেখা গেল কলকাতা পুলিসের। জনসমুদ্র সামলাতে না পেরে বন্ধ হল বড় পুজো। পুলিসের সাফাই পরিকল্পনা ছিল না পুজো কমিটির।
একবার একটু কলকাতার জন জোয়ারের দিন গুলোর কথা মনে করিয়ে দিই। ২১ জুলাই। রেকর্ড বলছে ১৫ লক্ষাধিক মানুষের ভিড় কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। ব্রিগেডে বামেদের সমাবেশ। রেকর্ড বলছে সমাবেশে ১২ থেকে ১৫ লক্ষ মানুষের ভিড় হয়েছিল। রাজনীতির মঞ্চ বলে উড়িয়ে দিতে পারেন অনেকেই। রাজনীতিকে না হয় একটু সাইড লাইন করা যাক। ভাবুন কল্লোলিনীর হোক কলরবের মিছিলের কথা। ১৯৫০ সালের খাদ্য আন্দোলনের পর এটাই নাকি ছিল সব থেকে বড় মিছিল। দক্ষিণ থেকে উত্তর। রাস্তা থমকেই ছিল। কেউ মিছিল বন্ধ করার সাহস দেখিয়েছেন বলে মনে পড়ছে না।
এবার সোজাসুজি পুজোতে আসা যাক। বড় পুজো কি এই প্রথমবার? আজ্ঞে না। চলুন একটু ফিরে যাই পিছনের দিকে। মাত্র ১৮৬০ দিন আগেই ১৪.৫ মিটার দুর্গা বানিয়ে চমক দিয়েছিল সল্টলেক এফ ডি ব্লক। খাস কলকাতায় নয়। তবে বড় দুর্গা দেখতে ভিড়টা কম ছিল না। তাহলে দেশপ্রিয় পার্ক নিয়ে সমস্যাটা কী? শুধুই যানজট? আচ্ছা বলুন তো কলকাতায় পুজো দেখতে এসে ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি হবে না, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ঠাকুর দেখতে হবে না, এমনটা কেউ কখনও ভেবেছে? এটাই তো কলকাতার চিরাচরিত রূপ। এত বিজ্ঞাপনও তো এই ভিড়ের জন্যই। এত মানুষের জন্যই। সবটা যখন আগে থেকেই জানা বোঝার মধ্যে তাহলে বড় পুজোতে আপত্তি কোথায়? ৫ বছর একই পরীক্ষায় একই প্রশ্ন পত্র পেয়েও কি কেউ ফেল করে? উত্তরটা হল হ্যাঁ (যদি কেউ পরীক্ষা না দেয়)। অন্য দিন গুলিতে পারলেও পুজোর দিন গুলিতে ভিড় সামলানোর চ্যালেঞ্জ অস্বীকার করল পুলিস। গোটা পুলিস ফোর্স যখন রাস্তায়, সঙ্গে এনসিসির টিম তারপরও একেবারে সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিস কমিশনারকে বলতে হল 'পুজো বন্ধ'। ঢাল করলেন জনগণের নিরপত্তাকেই। আচ্ছা একটা ভোট করাতে যদি জনগণের নিরাপত্তাকে মাথায় রেখে আনানো হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী তবে পুজোতে কেন নয়? পুজোতো জনগণের জন্যই।
এখানেই টুইস্ট। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে, বড় দুর্গা আকাশ ছোঁয়া উচ্চতা পেলেও খুঁটির জোড়টা নাকি একেবারেই নড়বড়ে। ওই জন্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেও নুইয়ে গেল পুজো। কলকাতার দক্ষিণ থেকে উত্তর মন্ত্রী মশাইদের পুজো দেখার পর জনগণই বলাবলি করছে, 'আসলে বড় দুর্গা মন্ত্রীর পুজো নয়, তাই বন্ধ করে দেওয়া হল'। পঞ্চমীর সুনামিতে দেশপ্রিয়তে জোয়ার আর মন্ত্রী মশাইদের পুজোতে ভাঁটা, সত্যিই কি তাই? বড় সত্যিটা কি মানুষ জানতে চায়। আরও জানতে চায় সল্টলেকে সাকসেস পেলে দেশপ্রিয়তে কেন মুখ ঢাকতে হল দুর্গার। কলকাতার আকাশে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, একথা আগাম জানিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। তবে ঝড় আসবে কে জানত? মানুষের ঝড়। দোষটা কি তাহলে আবহাওয়া দফতরেরও?