দেখা গেল, বাংলার মানুষ রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ একদমই মানলেন না
নিজের ফেসবুক পেজে রাজ্যের বিধানসভার ফলাফল নিয়ে মত প্রকাশ করেন পরিচালক।
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
বাংলার জনগণের ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। বাংলার মানুষ সাম্প্রদায়িকতার ও সামাজিক বিদ্বেষের বিরোধিতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতির বিরোধিতাকে ততটা আমল দেননি। অবশ্যই তা সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক সরকারকে বদল করার ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ এবং বাংলার মানুষ রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ একদমই মানলেন না। স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতা ও বেসরকারিকরণ, বিলগ্নীকরণ, পুঁজিপতিদের স্বার্থসিদ্ধি, নাগরিকত্বের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া, কৃষি -শ্রমিক আইন বদল এবং অবশ্যই মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন মানুষ।
পাশাপাশি, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, বিজ্ঞাপন ও জনমোহিনী সংস্কৃতি অবশ্যই কাজ করেছে। কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ (employment) বা শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের (industry) দাবি তাঁদের আপাতত নেই বা থাকলেও এই নির্বাচনে তা দাগ কাটেনি। দেখা যাচ্ছে, মূলধারার রাজনীতিতেই মানুষের বিশ্বাস রয়েছে। কারণ আমরা এখনও তার বিকল্প গড়ে তুলতে পারিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাই পারে, বাংলার জয়', প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হতেই প্রতিক্রিয়া Mamata-র
বামেদের (left) ক্ষেত্রে অবশ্যই এই নির্বাচনী বিপর্যয় শিক্ষণীয়। সাম্যবাদের লড়াই চলছে, চলবে। কৌশল পরিবর্তিত হবে, ভুলও প্রমাণিত হতে পারে। তবে নীতি নয়। এক্ষেত্রে বলি, নির্বাচনে (election) পরাজিত হওয়া মানেই নিঃস্ব হয়ে যাওয়া বা অবিশ্বাসী হয়ে যাওয়া নয়। হতাশা মার্ক্সবাদীদের অভিধানে নেই। জনসংযোগ মুজবুত করার ক্ষেত্রে এটা এক পা পেছনো এবং আরও দু'পা এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আপনার বিশ্বাস ঠিক না ভুল, এ নিয়ে কারও কাছে জবাব দেওয়ার দায় আপনার নেই। কারণ, জানবেন, মতাদর্শগত ভাবে বামপন্থী (leftist) হওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার ও নিষ্ঠা আপনার আছে। আপনিই ব্যতিক্রমী। বাকিরা ক্ষমতার বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
মেহেনতি ও প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে বামপন্থী শ্রমজীবী ক্যান্টিন, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানো হয়েছে ও হচ্ছে বা রেড ভলান্টিয়ার্সরা এখনও যেভাবে মানুষের স্বার্থে লড়ছেন-- সেই বিকল্প ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়া এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু মাথায় রাখবেন, দৈনন্দিন জীবনে আপনি এই পৃথিবীর 'দুর্নীতির সামাজিকীকরণ' প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে কোনও ভাবে মিশিয়ে না ফেলেন!
আরও পড়ুন: কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ বাম ছাত্র-যুবদের, রাস্তাজুড়ে ব্যারিকেড পুলিসের