Kalpataru Utsav: মোটা ভাত-কাপড়, লাউ-কলা-মুলো? নাকি জ্ঞান-ভক্তি-বিবেক-বৈরাগ্য?

সন্ন্যাসীদের দর্শন-- শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁদের কাছে 'নিত্য কল্পতরু'!

Updated By: Jan 1, 2022, 12:41 PM IST
Kalpataru Utsav: মোটা ভাত-কাপড়, লাউ-কলা-মুলো? নাকি জ্ঞান-ভক্তি-বিবেক-বৈরাগ্য?

সৌমিত্র সেন

স্বামী বিবেকানন্দ, তখন সিমলের নরেন দত্ত, উদভ্রান্ত নব্য তরুণ; বাবার মৃত্যুর পরে তীব্র সাংসারিক দৈন্যে-কষ্টে জর্জরিত। রামকৃষ্ণের উপরোধে একদিন দক্ষিণেশ্বরের কালীঘরে গেলেন রামকৃষ্ণেরই পরামর্শমতো মায়ের কাছে শ্রী-সম্পদ-বৈভব চাইতে, যাতে অন্তত এই ভয়ানক দুঃখময় জীবনের অন্ত হয়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও চিরকালের কালী-বিমুখ নরেন গেলেন বটে মন্দিরে, প্রার্থনাও করলেন। কিন্তু কী চাইলেন? তাঁর মুখ দিয়ে ধনদৌলতের প্রার্থনা বেরল না। তিনি অবলীলায় জ্ঞান-ভক্তি-বিবেক-বৈরাগ্য চেয়ে বসলেন! কিন্তু খেতে-না-পাওয়া-পরতে-না-পারা সেই হতকুচ্ছিত জীবনে তাঁর কী হবে তখন জ্ঞান-ভক্তি-বিবেক-বৈরাগ্য? তবু মায়ের কাছে পার্থিব কিছু চাইতে পারেননি সেদিন নরেন দত্ত। শ্রীরামকৃষ্ণই সব শুনে তাঁর প্রিয় শিষ্যকে পরে বলে দিয়েছিলেন-- যা, তোর কোনও দিন মোটা ভাত-কাপড়ের অভাব হবে না!

প্রকারান্তরে সেদিনই কি শ্রীরামকৃষ্ণের 'প্রথম' কল্পতরু হয়ে-ওঠা? 'কল্পতরু' হল সেই বৃক্ষ, তার কাছে যে যা চায়, সে তাই পায়। সেদিন নরেন দত্ত অবশ্যই সরাসরি রামকৃষ্ণের কাছে কিছু চাননি। কিন্তু ঘুরিয়ে গুরুই শিষ্যের অভাবমোচন করেছিলেন। অর্থাৎ, শিষ্যের প্রার্থনানিরপেক্ষেই রামকৃষ্ণ সেদিন 'কল্পতরু' হয়ে উঠেছিলেন। 

এর অনেক অনেক পরে, ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি কাশীপুর উদ্যানবাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণ সর্বজনজ্ঞাতার্থে ভক্তসমক্ষে প্রত্যক্ষ ভাবে 'কল্পতরু' হয়ে উঠেছিলেন বলে সাক্ষ্য দেয় ইতিহাস। সেদিন সকালের দিকে কাশীপুরের দোতলা ঘর থেকে তিনি নেমে এসেছিলেন, বাগানে পায়চারি করছিলেন। ভক্তপ্রবর নট গিরিশচন্দ্র ঘোষ নানা ভাবে রামকৃষ্ণের স্তুতি করছিলেন। শোনা যায়, ভক্তের স্তুতিতে উদ্দীপন হয়ে ক্রমে গভীর ভাবস্থ হয়ে পড়েন রামকৃষ্ণ। আধ্যাত্মিক রাজ্যের অতি ঊর্ধ্বে চলে যায় তাঁর মন, আর সেই অপূর্ব আধ্যাত্মিকতার স্রোততরঙ্গ স্পর্শ করে সেখানে উপস্থিত ভক্তদের মনের তন্ত্রীও। এক অপূর্ব আবেশের জন্ম হয়। কথিত আছে, সেইদিন, সেই মুহূর্তে যে যা চেয়েছিল সে নাকি পরবর্তী সময়ে তা-ই পেয়েছিল! রামকৃষ্ণের এই কল্পতরু হয়ে-ওঠা নিয়ে রামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী ভক্তদল তত উচ্ছ্বসিত হননি, হন না। এক্ষেত্রে তাঁদের অদ্ভুত দর্শন রয়েছে। তাঁরা বলেন, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁদের কাছে 'নিত্য কল্পতরু'।

আসলে 'কল্পতরুত্বে'র মর্মমূলে এই দর্শনটারই থাকা কাম্য। এ বছর কোভিডবিধির কারণে মানুষ হয়তো কাশীপুর-দক্ষিণেশ্বর-বেলুড় যেতে পারছেন না। কিন্তু অতীতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ইংরেজি বছরের প্রথম দিনটিতে ঠাকুরের চরণে প্রার্থনা জানাতে যে করে হোক এই সব তীর্থধূলির স্পর্শ নিতে যেতেন। অবশ্যই ভাল কাজ, পুণ্যের কাজ। কিন্তু সেদিন কল্পতরু ঠাকুরের কাছে কী চান তাঁরা? মোটা ভাত-কাপড়? লাউ-কলা-মুলোর মতো অসার সাংসারিক পার্থিব বস্তু? নাকি জ্ঞান-ভক্তি-বিবেক-বৈরাগ্য? 

সংসার তাপে তাপিত ভক্তদল হয়তো বলবেন, কী হবে তাঁদের জ্ঞান-ভক্তি-বিবেক-বৈরাগ্য নিয়ে? সংসারের জোয়াল তো তাঁদের বইতেই হবে; ফলে সেটা যাতে ঠিকঠাক বহন করা যায়, সেই আশিসটুকুর প্রার্থনাই থাক না আপাতত! এর পরে কোনও দিন কোনও ভাবে ভাগ্যে জ্ঞান-ভক্তি-বিবেক-বৈরাগ্য মিলে গেলে ভালো!

ফেলনা যুক্তি নয়। কিন্তু তাতে সম্ভবত কল্পতরু দিবসের প্রকৃত তাৎপর্যের হানি হয়। এর প্রকৃত উদ্দেশ্যেও ব্যর্থ হয়। কেননা, যা চাইব, তাই যদি পাই, তাহলে তো ভালো জিনিস চাওয়াই ভালো। সিমলে পাড়ার সেই উদভ্রান্ত তরুণটিকেও তো সেদিন ঘিরে রেখেছিল দুঃসহ অভাবের দুর্দমনীয় আগুন। তিনি কিন্তু তাতে পুড়ে যেতে দেননি নিজেকে, কাঁধ-মাথা না-নুইয়ে অমৃতই প্রার্থনা করেছিলেন। যা আমাকে অমৃত করবে না, কী হবে তা নিয়ে?                    

(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: Kalpataru Diwas 2022: কল্পতরু দিবসে সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ভক্তশূন্য কাশীপুর উদ্যানবাটি

.