নিজের সঞ্চয় থেকে ছেলের চিকিত্সার জন্য বউমাকে টাকা দিয়েছিলেন! তা লাগছে এখন বাবা-ছেলের সত্কারে

হরিদেবপুরে ধারাপাড়ার বাসিন্দা গোপাল মণ্ডলের আত্মহত্যার পিছনে উঠে এল লকডাউনে হতদরিদ্র পরিবারের আরও একটা দিক।

Reported By: সুকান্ত মুখোপাধ্যায় | Updated By: Jun 28, 2020, 04:26 PM IST
নিজের সঞ্চয় থেকে ছেলের চিকিত্সার জন্য বউমাকে টাকা দিয়েছিলেন! তা লাগছে এখন বাবা-ছেলের সত্কারে
নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: ভ্যান টেনেই সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু ৩৫ বছর আগে দুর্ঘটনায় চোট পাওয়া ছেলের পায়ের ব্যথাটা ইদানীং বেড়ে গিয়েছিল। লকডাউনে রোজগারও ছিল না। খরচের কথা ভেবেই আর ডাক্তার দেখাতে যাননি ছেলে। পায়ের ব্যথায় ছোটফট করতেন। চোখের সামনে ছেলের এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেননি ৯৭ বছরের বৃদ্ধ ভূতনাথ মণ্ডল। ছেলে গোপালের চিকিত্সার জন্য নিজের অল্প সঞ্চয় থেকেই বউমাকে টাকা দিয়েছিলেন।  কিন্তু হাসপাতাল ফেরাল ছেলেকে আর সেই টাকা এখন কাজে লাগল অন্যভাবে! হরিদেবপুরে ধারাপাড়ার বাসিন্দা গোপাল মণ্ডলের আত্মহত্যার পিছনে উঠে এল লকডাউনে হতদরিদ্র পরিবারের আরও একটা মর্মস্পর্শী দিক।

গোপাল মণ্ডল (৫৯) হরিদেবপুরের ধারাপাড়ার বাসিন্দা। রবিবার সকালে বাড়িরই পরিত্যক্ত ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।  পরিবারের অভিযোগ, চিকিত্সা করাতে না পারায় যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৫ বছর আগে গোপাল মণ্ডলের জীবনে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। ডান পায়ে মারাত্মক চোট পান তিনি। এরপর তাঁর পায়ে প্লেট বসাতে হয়। ইদানীং সেই পায়েই যন্ত্রণা বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। শনিবার তাঁকে বেহালা বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যান। অভিযোগ, জরুরি বিভাগে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন তিনি। এরপর ডাক্তার না আসায় তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অসহায় পরিবার

সরকারি হাসপাতালে করোনা সংক্রমণের ভয় ছিল পরিবারের মনে। আর বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতন আর্থিক অবস্থাও তাঁদের নেই। বাধ্য হয়েই স্ত্র্রীর হাত ধরে বাড়ি ফিরে আসতে হয় গোপালবাবুকে। এরপর সকলের চোখের আড়ালে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সব শেষ!

ছেলের নিথর দেহ চোখের সামনে দেখেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন বাবা ভূতনাথ মণ্ডল। বাড়িতে মৃত্যু হয় তাঁরও। মৃতের স্ত্রী বলছেন, "ও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। হাসপাতালে চার ঘণ্টা বসিয়ে রাখল, ফের বলল ডাক্তার আসবে না। একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে ছেড়ে দিল। বাড়িতে ফিরতেই ফের যন্ত্রণা। বাথরুমে যাচ্ছি বলে খাট থেকে উঠে গেল, কিন্তু এমনটা করবে একটুও আঁচ করতে পারিনি। আর বাবাও চলে গেল..."

দরিদ্র এই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটা চলে গেল, সঙ্গে চলে গেল পরিবারের মাথা!

.