ভূতের মত হাড়ভাঙা খাটনি
পার্থ প্রতিম চন্দ্র
রাজুর শরীরে আর আয় নেই। সারাদিন ও একটু বসা তো দূরের কথা, খাওয়ার সুযোগটুকু পর্যন্ত পায়নি। আজকাল লোকেরা মলে যেভাবে ভিড় করছে, তাতে রাজু বুঝতে পারছে এই কাজটা আর ও বেশিদিন করতে পারবে না। ওর কাজটা ভারী অদ্ভূত। ও কাজ করে জ্যান্ত ম্যানিক্যুইনের। গায়ের রঙটা কালো বলে আর কাস্টমররা খুশি হয় বলে ওকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পুতুলের মত। পুতুলের থেকে মানুষের গায়ে পোশাকটা পরিয়ে রাখলে অনেকটা জীবন্ত লাগে বলে মালিকের হুকুমে সে এখন পুতুল। অনেকে আবার বলে দাদা এই পোশাকটা ওই জ্যান্ত পুতুলটাকে পরিয়ে দেখুন, ওর গায়ে ভাল লাগলে তবে ট্রায়ালে যাবো। পুতুল সাজার পাশাপাশি ছুটির আগে তাকে সব মাল আগের মত গুছিয়ে রাখতে হয়। রাজু হাঁফিয়ে যায়, তবু বসতে পারে না। বসলেই খিস্তিবাণ উড়ে আসে ম্যানেজারের মুখ থেকে।
জ্যান্ত পুতুলের ভূমিকায় সারাদিন অভিনয় করার পর রাতে এই ছোট্ট ঘরে একা শুয়ে থাকে রাজু। একাই থাকতে হবে তাকে। কোনওদিনই তার বিয়ে করার সাধ পূরণ হবে না। পিঙ্কিকে একটা সময় খুব ভালবাসত। ঠিক করেছিল পিঙ্কিকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না। পিঙ্কির বিয়ে হয়ে গেছে। রাজু ঠিক করেছে একদিকে ভালই হয়েছে তার যা রোজগার তাতে বিয়ে করলে সে বউকে অনাহারে মরতে দেখবে। তার চেয়ে পিঙ্কি প্রমিশটাই অনেক ভাল।
ক দিন রাজুর শরীরটা ভাল নেই। সারাদিন জ্যান্ত পুতুল হয়ে তার শরীরটা কেমন না মানুষ না মানুষ হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন ভূতের মত খাটনির পর রাজুর শরীরটা ছেড়ে দেয়। এই তো এখন যেমন হচ্ছে, রাজু শুয়ে আছে ঠিকই কিন্তু ওর আত্মাটা কেমন যেন ভেসে বেরাচ্ছে। রাজু বলল, ফিরে আয় শরীরে ফিরে আয়। আত্মা বল, ধুর তোর ওখানে ফিরে কী লাভ। ব্যাটা তুই তো পুতুল হয়ে গেছিস। পুতুলের আত্মা থাকে না কি। রাজু ভারী মুশকিলে পড়ল। আত্মাকে বলল, ভাই তুই ছাড়া আমার আর কী আছে বল। আত্মা বলল, আছে আছে। আমি ঠিক খেয়াল করেছি। তোমার ওই শপিং মলে একটা রোগা করে মেয়ে কাজ করছে। তুমি ঠিক সুযোগ পেলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকো। কী তাই তো...রাজু হেসে ফেলল। তোকে কী করে ধোকা দিই বল। কিন্তু কী জানিস। কোনও লাভ নেই রে। মেয়েটার চোখটা এত সুন্দর। ও খুব গরীব। টাকা ধার চাইছিল একজনের কাছে।
আত্মা এবার হেসে উঠল। এই জন্যই তো তোকে ছাড়তে পারি না। সারাদিন ভূতের মতো খেটে তোর সঙ্গে ভূত ভূত খেলতে দারুণ লাগে। চোখ বন্ধ কর আমি একটু এদিক ওদিক ঘুরে তোর কাছে চলে যাচ্ছি।