নোট বাতিল, সাধারণের উপর সুনামি : অমিত মিত্র

Updated By: Nov 8, 2017, 09:49 PM IST
নোট বাতিল, সাধারণের উপর সুনামি : অমিত মিত্র

কমলিকা সেনগুপ্ত:

প্রশ্ন: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নোটবাতিলকে ওয়াটারশেড বলেছেন। আপনি কীভাবে দেখছেন?

অমিত মিত্র: যে দিন ডিমনিটাইজেশন হয়েছিল, তার একঘণ্টার মধ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি টুইট করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটা একটা ড্রেকোনিয়ান অ্যাক্ট এবং এতে রিশেশন হবে। আজকে নম্বরগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন- যেখানে জিডিপি ছিল ৭.৯ শতাংশ, সেটা পড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৭ শতাংশ। এটা ম্যাক্রো ইকোনমিক লেভেল। এবার গ্রাউন্ড লেভেলে যান। সুরাটে যান। কী হচ্ছে? ৯ লক্ষ বস্ত্র শ্রমিক আছেন যাদের কাছে মেশিন রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১ লক্ষ শ্রমিক মেশিন বেচে দিয়ে চাকরি করতে শুরু করেছেন। ১ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে গিয়েছেন সেখানে। পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ তো আপনারা জানেন! আপনি তিরুপুরে যান। ৪০ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে ছোট ব্যবসার। লুধিয়ানায় যান একই ঘটনা। উত্তর প্রদেশেও সব জায়গায় একই ঘটনা। তার মানে ম্যাক্রো বা মাইক্রো লেভেল যেখানেই দেখুন, সর্বত্র একই অবস্থা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন যা বলেছিলেন, আজ তা প্রফেটিক। তারা বলছে, ওয়াটারশেড। ওয়াটারশেড মানে জানেন? যখন নদীটা একটা জায়গায় দাঁড়ায়, তারপর ওয়াটারফল হয় বা অন্য দিকে চলে যায়। দিস ইজ দ্য সুনামি ওন পিপল অব ইন্ডিয়া। সব্বাই বোঝে সেটা। ইনফরমাল সেক্টর ৪০ শতাংশ জিডিপি দেয়, ৮০ শতাংশ চাকরি দেয়। বিমুদ্রাকরণের জন্য তারা খতম হয়ে গেল।

প্রশ্ন: এই নোটবাতিলের পর জাল টাকা, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ইত্যাদি কমে যাবে বলে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু আজ অবস্থাটা ঠিক কেমন?

অমিত মিত্র: চারটে মোটিভ ছিল। চারটেই সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সন্ত্রাসবাদের কথা বলছে, কিন্তু যখন ২ হাজার টাকার নোট বেরলো প্রথম কোথা থেকে পাওয়া গেল? কাশ্মীর থেকে পাওয়া গেল। জঙ্গিরা পেল কী করে? আজকে ২৫ শতাংশ কাশ্মীরীর মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে। জঙ্গি মরেছে ৩৮ শতাংশ। মাওবাদী মারা গিয়েছে ৮২ শতাংশ। জঙ্গি শেষ হয়ে গিয়েছে! ফান্ডিং শেষ হয়ে গিয়েছে! ব্ল্যাক মানির চারটে সোর্স আছে। একটা হচ্ছে বিদেশের টাকা। কোথায় গেল সেই বিদেশের টাকা? এক পয়সাও ফিরে এল না। নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, বিদেশ থেকে টাকা এনে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে রিয়েলএস্টেট। সেখানে কী হয়েছে?

প্রশ্ন: এটাকে রিফর্ম বলা হচ্ছে। এর তো রিঅ্যাকশান থাকবেই।

অমিত মিত্র: হ্যাঁ। রিফর্মে মানুষকে হত্যা করার চেষ্টা হচ্ছে। এর মানে রিফর্ম! এই যদি রিফোর্ম হয়, পলিটিক্স অব ইন্ডিয়া কি আমরা বুঝিনা! মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, দিস ইজ অ্যা হ্যামার অন দ্য ইকোনমি। আজকে আপনাকে বুঝতে হবে কারা লাভবান হয়েছে ডিমনেটাইজেশনে। যাদের হাতে কালো টাকা ছিল তারা ব্যাঙ্কে গিয়ে সাদা করে নিয়েছেন। এর পিছনে কোনও চক্রান্ত ছিল। কেউ কি জানত এটা হবে?

প্রশ্ন- রাজনৈতিকভাবে যদি দেখা যায়, ডিমনেটাইজেশন নিয়ে বিরোধীরা একত্রিত হয়ে গেল। এ বিষয়টায় কী বলবেন?

অমিত মিত্র: দেখুন দেশকে আগে বাঁচাতে হবে। এটা একটা ডিক্টেটোরিয়াল প্রসেস যা গায়ের জোরে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জিএসটির ক্ষেত্রেরও তাই হল। আমি বলেছিলাম ১ লা জুলাই লঞ্চ করবেন না। ডুবে যাবে দেশটা। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: এই প্রতিবাদে বামেরা পাশে থাকলে ক্ষতি নেই তো?

অমিত মিত্র: দেখুন দেশকে বাঁচাতে হবে। লেফ্ট-রাইট-সেন্টার ইস্যু নয়। ইস্যু হচ্ছে, ইনফরম্যাল সেক্টর মরে যাচ্ছে। ছোটরা মরে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের উপর বিশাল একটা সুনামি এসে ধাক্কা দিচ্ছে। রাজনীতির উর্ধ্বে এসে দেশকে বাঁচাতে হবে। গায়ের জোরে কাজ করা হচ্ছে (কেন্দ্রের তরফে)।

প্রশ্ন: মোদীর শেষের শুরু বলতে পারেন?

অমিত মিত্র: তারা যে মিথ্যে কথা বলছে। অসত্য বলছে মানুষ সেটা বুঝতে পারছে। ওয়াটারশেড সবাই জানে। বিদেশ থেকে কোনও টাকা এল না। কালো টাকা সাদা হয়ে চলে এল। রিয়েলএস্টেটের কিছুই এল না। সোনার ক্ষেত্রে কিছু হল না।

প্রশ্ন: শেষের দিন মোদীর?

অমিত মিত্র: মানুষ বলবে। মানুষই শেষ কথা বলবে।  

.