গতকাল দিনভর টানাপোড়েনের পরেও পিয়ালির ব্যাঙ্ক লকার খুলতে পারল না ইডি

গতকাল দিনভর টানাপোড়েনের পরেও সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালির ব্যাঙ্ক লকার খুলতে পারল না ইডি

Updated By: Apr 23, 2014, 08:53 AM IST

গতকাল দিনভর টানাপোড়েনের পরেও সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালির ব্যাঙ্ক লকার খুলতে পারল না ইডি। আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনে ইডির লকার খোলা আটকাল বিধাননগর পুলিস। বিষয়টি নিয়ে আজ বিধাননগর আদালতে যাবে ইডি। জানানো হবে শীর্ষ আদালতেও। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে গত এক বছরে ওই লকারটি নিয়ে এতদিন উত্সাহ দেখায়নি পুলিস। কিন্তু যে ভাবে ইডিকে লকার খোলার থেকে আটকান হল তাঁর পরে প্রশ্ন উঠছে পুলিসের অতিরিক্ত তত্পরতার কারণ নিয়ে।

ইডিকে বারবারই কড়া ভাষায় আক্রমণ করে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রীরা। এর মধ্যেই মঙ্গলবার সারদা কর্তার স্ত্রীর ব্যাঙ্ক লকার খোলা নিয়ে বিধাননগর পুলিসের সঙ্গে ইডির চাপানউতোর গড়াল আদালত পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত পিয়ালি সেনের ওই লকারটি খুলতেই পারল না ইডি। মঙ্গলবার সকালে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পিয়ালি সেন এবং শুভজিত্‍ সেনকে হাজির করে ইডি। আদালতে ইডির তদন্তকারীরা জানান,

পিয়ালি ও শুভজিতকে জেরা করে সারদার আরও কিছু সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। বিধাননগরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার গয়না এবং কয়েক কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে । ওই অ্যাকাউন্ট যৌথভাবে সুদীপ্ত সেন ও পিয়ালি সেনের বলে জানতে পেরেছে ইডি।
সেকারণে পিয়ালি ও শুভজিত্‍ কে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

ইডির আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে পিয়ালি এবং অভিজিত্‍ কে আরও দুদিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। আদালত থেকে ফেরার পথে পিয়ালি সেনকে নিয়ে বিধাননগরের ওই ব্যাঙ্কে যায় ইডি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পিয়ালি সেনের জবানবন্দিতে উঠে আসা লকারটি খোলা। কিন্তু ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ইডির অফিসারদের জানান,

বিধাননগর পুলিসের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশ রয়েছে যে ওই লকার অন্য কেউ খুলতে পারবে না। খুলতে পারবে একমাত্র বিধাননগর পুলিস।

ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছে একথা শোনার পর ফিরে যান ইডির তদন্তকারীরা। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওই ব্যাঙ্কে পৌছয় বিধাননগর পুলিস কমিশনারেটের একটি বড় দল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সারদাকাণ্ডের তদন্তে থাকা বেশ কয়েকজন অফিসার। সঙ্গে ছিলেন পুলিসের উচ্চপদস্থ কর্তারা। বিধাননগর পুলিস সূত্র খবর, গত বছর সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার পর কেসনম্বর একশো দুই বাই তেরো ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলার ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিধাননগর এসিজেএম আদালতে আর্জি জানানো হয় বিধাননগর পুলিসের তরফে। আদালতে পুলিস জানায়,

তারা তদন্তে নেমে বিধাননগরের ব্যাঙ্কের শাখায় একটি লকারের হদিশ পেয়েছে। ওই লকার খুললে সারদার আরও সম্পত্তির হদিশ মিলবে। অতএব বিধাননগর পুলিসকেই লকার খোলার অনুমতি দেওয়া হোক।
আদালত পুলিসের এই আবেদন মঞ্জুর করে। বিধাননগর পুলিসের দাবি, আদালতে যাওয়ার আগেই তাদের পক্ষ থেকে ইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, পিয়ালি সেনের উপস্থিতিতে ইডির তদন্তকারীদের সামনেই তারা লকার খুলতে চায়। কিন্তু সন্ধে পর্যন্ত সেই চিঠির জবাব দেয়নি ইডি।

ফলে রাতে বিধাননগর পুলিস নিজেরাই ওই লকার খুলতে চলে যায়। উল্টোদিকে ইডির তদন্তকারীদের দাবি, বিধাননগর পুলিসের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে দিনভর কোনও যোগাযোগই করা হয়নি। সন্ধে সাতটার সময় বিধাননগর পুলিসের পাঠানো চিঠি তাদের হাতে আসে। ফলে বিধাননগর পুলিস যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সেই খবর তাদের কাছে ছিলই না।
ইডির তরফে অভিযোগ, রীতিমতো পরিকল্পনা করে তাঁদের আটকানো হয়েছে।

ইডির তরফে মঙ্গলবারের পুরো ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে দিল্লিতে দফতরের কেন্দ্রীয় অফিসে। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে সারদা মামলার শুনানি। শুনানির সময় মঙ্গলবারের পুরো ঘটনা শীর্ষ আদালতের কাছে রিপোর্ট করা হবে বলে ইডি সূত্রে খবর। বুধবার বিধাননগর এসিজেএম আদালতেরও দ্বারস্থ হবে ইডি। বিধাননগরের ওই ব্যাঙ্কের লকার থেকে যে সব জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে বিধাননগর পুলিস সেগুলি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানানো হবে ইডির তরফে। গত এক বছরে পিয়ালি সেনের ওই লকার নিয়ে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিস। কিন্তু ইডি ব্যবস্থা নেওয়ার পরে হঠাত্ কেন তত্পর হল পুলিস? কেনই বা আদালতে গিয়ে ইডিকে আটকালো বিধাননগর কমিশারিয়েট। তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

.