ভোটের পরও বাম-কং জোট নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি, অস্তিত্ব বাঁচাতে সমঝোতার সওয়াল অধীরের
অধীরের বাস্তবসম্মত বার্তা কী প্রদেশ নেতৃত্ব ও আলিমুদ্দিনের কানে গিয়ে পৌঁছবে?
মৌমিতা চক্রবর্তী
ভোটে ভরাডুবির পরেও আসন রফা নিয়ে তরজা জারি। আসন রফা না হওয়ার জন্য প্রকাশ্যেই কংগ্রেসকে দুষেছেন সীতারাম ইয়েচুরি। তবে এই কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে বেরিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতার পক্ষে ফের সওয়াল শুরু করলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির কথা স্মরণ করিয়ে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানিয়ে দিলেন, মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ভোটের অনেক থেকে জোট বেঁধে রাস্তায় নামতে হবে।
বাম -কংগ্রেসকে ব্যাক স্টেজে ঠেলে এরাজ্যে এখন প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপি। লোকসভা ভোটের ফলে চমকে দেওয়ার মতো ফল করেছে গেরুয়া শিবির। আর এসবের জন্য সিপিএম দুষছে সেই কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়াকেই।
দায় কার?
ভোটের ফলের ময়নাতদন্তে আলিমুদ্দিনে বৈঠকে বসে সিপিএম রাজ্য কমিটি। আসন সমঝোতা হল না কেন প্রশ্ন তুলেছেন বহু জেলার নেতারা। সিপিএম নেতাদের একাংশের দাবি, সমঝোতা না হওয়ায় তাদের দু-কূলই গিয়েছে। একদিকে যেমন বিরোধী ভোট একজোট করা যায়নি। আবার একেকবার একেক রকম কথা বলায় ভোটারদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতাও নষ্ট হয়েছে। তবে সমঝোতা না হওয়ার দায় কংগ্রেসের দিকেই ঠেলেছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়,''আমরা জোটের জন্য আসন ছেড়েছিলাম। কেন সেটা হল না, তার জবাব কংগ্রেসকে দিতে হবে''। সীতারাম ইয়েচুরির দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। তাঁর যুক্তি, এটা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। গত লোকসভা ভোটে বাম-তৃণমূল-বিজেপিকে পরাজিত করে আসন জিতেছিলাম।
তবে শুধু সিপিএমই নয়। জোট ভেস্তে যাওয়ার প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদেরও নাম না করে খোঁচা দিয়ে রেখেছেন অধীর। তাঁর কথায়,''আমি একবারও বলছি না, সব ঠিক করেছে কংগ্রেস। নতুন করে কীভাবে আলোচনার পথ খুলে এগানোর চেষ্টা করা যায়, সে বিষয়ে ভাবা দরকার''। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে অধীরের নেতৃত্বেই কংগ্রেস বামেদের হাত ধরেছিল। ২০১৪ সালে বিজেপির উত্থান ঠেকিয়ে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল বাম-কংগ্রেস জোট। কিন্তু এবার বিজেপি যেভাবে উঠে এসেছে, তাতে কার্যত সাইনবোর্ড দুই দল। অবস্থা যে আরও খারাপ হতে চলেছে, সেই আভাস দিয়ে অধীরের বার্তা, উভয়কে বাঁচতে হবে। বিকল্প তৈরি গিয়েছে। ভোটের সময় জোট, ভোটের পর ফোট, এটা আর হবে না।
অধীরের বাস্তবসম্মত বার্তা কী প্রদেশ নেতৃত্ব ও আলিমুদ্দিনের কানে গিয়ে পৌঁছবে? ভোটের আগে সুবিধাবাদী জোট মানুষ আর মানছেন না তা দেখিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। সপা-বসপা জোট বেঁধে বিজেপির বিজয়রথ থামাতে পারেনি। ফলে এরাজ্যেও বাম-কংগ্রেস যদি ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের মুখে জোট বাঁধে, তা যে ধরাশায়ী হবে, সেটাও আগেভাগেই বলা যায়।
আরও পড়ুন- পক্ককেশীদের সরিয়ে তরুণ মুখ, সীতারামের চমকের ইঙ্গিতেও থাকছে হাজারো প্রশ্ন