তৃণমূল ছাড়ুন, সিপিএম নেতাদের দলে নিন, রাজ্যকে নির্দেশ বিজেপির শীর্ষ নেতার

কেন্দ্রীয় নেতার মুখে এমন কথা শুনে যারপরনাই বিস্মিত রাজ্য নেতৃত্ব। 

Updated By: Nov 21, 2019, 09:40 PM IST
তৃণমূল ছাড়ুন, সিপিএম নেতাদের দলে নিন, রাজ্যকে নির্দেশ বিজেপির শীর্ষ নেতার

অঞ্জন রায়

মতাদর্শগতভাবে দুই মেরুর। একটা ডান, অন্যটা বাম। সেই বাম পথের নেতাদেরই বিজেপিতে নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন বিজেপির এক শীর্ষ নেতা। রাজ্য নেতাদের সঙ্গে দলের বৈঠকে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, তৃণমূলের লোকদের নেওয়ার দরকার নেই। শিক্ষিত, মার্জিত বাম নেতাদের দলে আনুন। এতে জনমানসে একটা ভালো প্রভাব পড়বে।  

বিরোধী দল ভেঙে নেতা না নিলে দলের কলেবর বাড়বে না, লোকসভা ভোটের ৩ বছর আগে বলে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। সেই মতো তৃণমূল ভাঙিয়ে একের পর এক নেতাকে দলে টেনেছেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে মুকুল রায়ের যোগদানই বড় চমক। লোকসভা ভোটের আগে সেই মুকুলের হাত ধরে এসেছেন অর্জুন সিং, শঙ্কুদেব পণ্ডা, সৌমিত্র খাঁ, নিশীথ প্রামাণিক ও অনুপম হাজরা। সদ্য এসেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁরা ঠিক কোন দলে আছেন, তা এখন ঠাওর করা দুষ্কর। সিপিএমের পড়তি বাজারে এখনও পর্যন্ত বড়মাপের বাম নেতাকে আনতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। আর এতে না-খুশ ওই কেন্দ্রীয় নেতা। বলে রাখি, তিনি কিন্তু হেলাফেলার নেতা নন। নরেন্দ্র মোদীর অত্যন্ত আস্থাভাজন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিসিসিআই সভাপতি করার নেপথ্যে তিনি আছেন বলে গুঞ্জন। এখন দলের বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশাল ভূমিকা ওই নেতার। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতাকে সমীহ করে বিরোধী শিবিরও।      

তা এমন প্রভাবশালী নেতার মুখে দিলীপ ঘোষরা কী শুনলেন? ওই নেতা বলেছেন,''তৃণমূল সে লোক লাকে ক্যা হোগা। সব গন্দা হ্যায়। সিপিএম সে নেতা লাও। ও লোক মার্জিত, শিক্ষিত হ্যায়। পাবলিক খাতা হ্যায়।'' বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, তৃণমূল নেতাদের ছাড়ুন। ওরা কোনও কাজের নয়। বরং সিপিএমের শিক্ষিত ও মার্জিত নেতাদের নিন। এতে জনমানসে দলের ভাবমূর্তি ভালো হবে। 

ওই কেন্দ্রীয় নেতার মুখে এমন কথা শুনে যারপরনাই বিস্মিত রাজ্য নেতৃত্ব। সিপিএম নেতাদেরই তো 'ভামপন্থী', 'জীবাশ্ম'-র মতো বিশেষণ দেন তাঁরা। সেই দলেরই শীর্ষ নেতা একেবারে ভিন্ন আদর্শের সংগঠক চাইছেন? অনেকের মতে, বাংলায় শিক্ষিত নেতা ছাড়া যে যুদ্ধজয় সম্ভব নয়, তা ইতিমধ্যে বুঝে গিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, বিহার, উত্তরপ্রদেশের থেকে বাংলার সংস্কৃতি একেবারে আলাদা। এরাজ্যের মানুষ যুক্তিবাদী ও উদারচেতা। হিন্দুত্বের আবেগ দিয়ে বেশিদিন তাঁদের মন ধরে রাখা যাবে না। দুধে সোনা আছে, এমন মন্তব্য করলে আর যাই হোক শিক্ষিত ও আধুনিক জনতার ভোট মিলবে না।

অনেকে আবার বলছেন, সিপিএমের নেতাদের মধ্যে বাঙালিয়ানার ছাপ স্পষ্ট। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসুদের ধুতি-পঞ্জাবি পরে দেখেছেন রাজ্যের মানুষ। রংবেরঙের কুর্তা, জওহর কোর্ট পরা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে মেলে না বাংলার সংস্কৃতি। এর পাশাপাশি বাম নেতাদের সংগঠন করার দক্ষতাও ৩৪ বছরে বারংবার প্রমাণিত। বামেদের গণসংগঠন তো রীতিমতো গবেষণার বিষয়। বাম নেতাদের সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতারাও চাইছেন, সিপিএম নেতাদের রাজনৈতিক ঊর্বর মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে বাংলায় সংগঠনকে নব কলেবরে সাজিয়ে তোলা। সংগঠন ছাড়াই লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু সেটা বারবার হবে না।   

২০২১ সালে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খারাপ হোক, ভালো হোক তৃণমূলের মুখ তিনিই। মমতাই তৃণমূল, তৃণমূলই মমতা। কিন্তু বিজেপি? লোকসভায় রাজ্যে বিজেপির ভোটবৃদ্ধিতে অনুঘটক হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিধানসভায় তিনি প্রচারে আসবেন, তবে তাঁর মুখে আর ভোট হবে না। লোকসভার পর মাত্র ৫ মাসে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে উল্লেখ্যযোগ্য ভোট কমেছে বিজেপির। তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বাংলায়। মোদী-এফেক্ট না থাকার ক্ষতিপূরণ পুষিয়ে ক্ষমতা দখল করতে দরকার পোক্ত সংগঠন। সেই সাংগঠনিক দক্ষতা বিজেপির বর্তমান নেতাদের মধ্যে কতখানি রয়েছে, তা নিয়ে রয়েছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বাঙালিয়ানার তাস খেলতে শুরু করে দিয়েছেন। আর কথাবার্তা, চালচলনে বাঙালিয়ানার ছিটেফোঁটাও নেই বিজেপি নেতাদের মধ্যে। বরং এখনও তারা হয়ে রয়েছে বড়বাজারের দল। গেরুয়া দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে আছে শিক্ষিত জনমানসের একটা বড় অংশ। এর মধ্যে তৃণমূল নেতাদের দলে নেওয়ায় বিজেপির স্বচ্ছ প্রশাসনের দাবি ঘিরেও উঠছে প্রশ্ন। এহেন প্রেক্ষাপটে সিপিএম নেতারা এলে ভাবমূর্তি মেরামত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।       

আরও পড়ুন- দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেসরকারিকরণ, BPCL, SCI, Concor বিক্রির সিদ্ধান্ত

.