প্রশাসনের হুকুমে বিদায়ের পথে বাই সাইকেল
১৮১৭ জন্ম বাই সাইকেলের। তারপর বহু বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আজকের চেহারায় পৌঁছেছে সাইকেল। সহজ, দূষণমুক্ত এই বাহনের আবেদন এড়াতে পারেনি কোনও দেশই।
১৮১৭ জন্ম বাই সাইকেলের। তারপর বহু বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আজকের চেহারায় পৌঁছেছে সাইকেল। সহজ, দূষণমুক্ত এই বাহনের আবেদন এড়াতে পারেনি কোনও দেশই।
ইওরোপ, আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্ব এখনও সাইকেলের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারেনি। অথচ, মা-মাটি-মানুষের সরকারের সৌজন্যে তাকেই তালাক দিতে চাইছে খেটে-খাওয়া-মানুষের শহর কলকাতা।
এখনও এই বৈতালিক ধ্বনিতেই ঘুম ভাঙে এই শহরের। কখনও কাগজওয়ালা, কখনও দুধওয়ালার ডাকে। আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনের চাকা ঘুরতে শুরু করে এই সাইকেলের চাকার ঘূর্ণিতেই। আসলে সস্তায় বহু খেটে খাওয়া মানুষের দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম হওয়ায় সাইকেলের আবেদন আর ব্যবহার বহুমুখী। কিন্তু এ বার এই সাইকেলের উপরই নিষেধাজ্ঞা বসেছে শহরে। সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৬৫।
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। বাড়ছে বাস-ট্রাম-ট্রেনের ভাড়া। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- প্রশাসনের হুকুমে এই আইন কার্যকর হলে বহু মানুষের ভাতকাপড়ে যে টান পড়বে তা নিয়ে প্রায় কোনও মহলেরই সংশয় নেই। কোনও রকমে দুপয়সা আয়-করা ছা-পোষা মানুষগুলোর কাছ থেকে তার এগিয়ে চলার মাধ্যমটা কেড়ে নিলে যে প্রশ্নটা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, সেটা একেবারেই বেঁচে খাকার। দিন গুজরানের। অথচ, সাংহাই, লন্ডন, টোকিও, নিউ ইয়র্ক, কিংবা প্যারিসের মতো ঝাঁ চকচকে দৌড়ে-চলা শহরগুলিতে এখনও জনপ্রিয় বাহন হিসেবেই পরিচিত সাইকেল। শুধু সহজ বলেই নয়, দূষণমুক্ত বলেও। আমাদের দেশে পরিবহণ মাধ্যম হিসেবে কোনও দিনই সাইকেলের কৌলীন্য ছিল না। সরকারি নিয়ম হাতে-টানা-রিক্সার পর সাইকেলের চাকাতেও এ বার বেড়ি পরাতে চাইলে, তা যে শুধু কলকাতার কতগুলি মানুষের জীবন-জীবিকাই অনিশ্চিত করে তুলবে তা-ই নয়, এই বর্ণময় শহরের লাইফলাইন থেকে মুছে যাবে তার বহুমুখী গণপরিবহণের সুদীর্ঘ ইতিহাসের একটা অধ্যায়।