গণপরিবহন বৈঠকে ৭ দফা প্রস্তাব বাস মালিক সংগঠনের, ভেবে দেখার আশ্বাস সরকারের
সরকারের তরফে খানিকটা আশ্বাস পেয়ে আগামিকাল থেকে কলকাতার রাস্তায় বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে পাল্টা জানানো হয় বাস মালিক সংগঠনগুলির তরফেও।
নিজস্ব প্রতিবেদন : কিছুটা সুরাহা। বাকিটা ধোঁয়াশা। চুম্বকে এই ছিল ছুটির দিন তড়িঘড়ি ডাকা গণপরিবহণ বৈঠকের নির্যাস। ২৬ জুন নবান্নে গিয়ে মাসিক ১৫ হাজার টাকা প্যাকেজের বিনিময়ে যে দুটি বাস সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীকে ১ জুলাই থেকে তাদের সব বাস পথে নামানোর অঙ্গীকার করে এসেছিল, তারা আজ বৈঠকে ছিল। পাশাপাশি ছিলেন সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ডাক না পাওয়া দক্ষিণবঙ্গের বাস-মিনিবাস মালিকদের আরও ১০টি সংগঠন।
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সেদিন যে দুটি বাস সংগঠন সব বাস রাস্তায় নামানোর ব্যাপারে কথা দিয়ে এসেছিল, তারা কথা রেখেছে। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। কলকাতায় যে ৬০০০ বেসরকারি বাস চলে, তার মধ্যে এই দুই সংগঠনের হাতে রয়েছে মেরেকেটে ৮০০ বাস। তাই এরা কথা রাখলেও বাসের সঙ্কট ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছিল। আজ তাই বাকি ১০টি সংগঠনকেও পরিবহন কর্তারা বৈঠকে ডাকেন। বৈঠকে নরমে গরমে কিছুটা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হল।
বাস মালিকদের দুটি বৃহত্তম সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এবং কলকাতা বাস মিনিবাস অপারেটর ইউনিয়নের মধ্যে এতদিন প্রথমটি একটিও বাস রাস্তায় নামায়নি। দ্বিতীয়টি মাত্র ২০ শতাংশ বাস নামিয়েছিল। তাই বাস পেতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। এবার সম্মিলিতভাবে রাজ্যের সমস্ত বাস সংগঠনই যাতে বাস রাস্তায় নামায়, সেই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হল। বৈঠকে জট কাটার সূত্র মিলেছে বলে খবর।
বাস মালিকরা আজ পরিবহন দফতরের কর্তাদের জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পুরনো ৭ বা ৯ টাকার ভাড়ায় পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানির দামের সঙ্গে বাস ভাড়ার সমন্বয় থাকছে না। বাস মালিকের কথা শোনার পর খানিকটা সুর নরম করেছে সরকারও। দিন পনেরোর মধ্যে যাবতীয় বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করে সরকার নতুন সিদ্ধান্ত জানাবে বলে এদিনের বৈঠকে জানান পরিবহন কর্তারা। সরকারের তরফে খানিকটা আশ্বাস পেয়ে আগামিকাল থেকে কলকাতার রাস্তায় বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে পাল্টা জানানো হয় বাস মালিক সংগঠনগুলির তরফেও।
আজকের বৈঠকে যে ৭ দফা প্রস্তাব বাস মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারকে দেওয়া হয়েছে, একনজরে-
১) সরকার অধিগ্রহণ করে আপাতত বাস চালাক। ১৫ হাজারের প্যাকেজ লাগবে না। তার বদলে বাসে জ্বালানি ভরে দিক সরকার। নিজেদের কর্মীর মাধ্যমে পরিষেবা দেবেন বাস মালিকরা।
২) সরকার প্যাকেজ দেওয়ার জন্য ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। সেই টাকা দিয়ে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের সময় বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে যে বাস অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, সেই বাবদ মোট ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়া হোক।
৩) নতুন অধিগ্রহণ ব্যাবস্থায় সরকার সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বাস মালিকের অ্যাকাউন্টে টাকা দিক।
৪) যদি অধিগ্রহণ না করা হয় তাহলে ন্যূনতম ভাড়া বাড়ুক। কমপক্ষে ১০, ১৫ ও ২০ টাকা ভাড়া করা হোক (অন্তত যতদিন কোভিড পরিস্থিতি বহাল থাকবে)।
৫) লকডাউন এবং আনলক ওয়ানে পুলিসের কেস দেওয়া বন্ধ ছিল। এটা কমপক্ষে পুজো পর্যন্ত বাড়ানো হোক।
৬) অনেক বাসচালক ও কনডাক্টর জেলা থেকে আসেন। তাঁরা আসতে পারছেন না। বাসকে জরুরি পরিষেবা তকমা দিয়ে এদের লোকাল ট্রেন বা মেট্রোয় আসার ছাড়পত্র দেওয়া হোক।
৭) জ্বালানিতে রাজ্য সরকারের সেস প্রত্যাহার করা হোক। কেন্দ্রীয় সেস প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রকেও অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন, খুলি উড়ে গিয়ে পড়ে বাড়ির চালে, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিন্নভিন্ন হাত-পা! কী থেকে বিস্ফোরণ টোটোয়?