'মতপার্থক্য যেন শ্রদ্ধার অন্তরায় না হয়, সব রাজনৈতিক দলই এই দোষে দুষ্ট'
বিশ্বভারতী যদি অমর্ত্যের বাড়িতে অনুপ্রবেশ করতে চায়, সেটা আপত্তিকর-- বললেন জয় গোস্বামী।
নিজস্ব প্রতিবেদন: অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি 'প্রতীচী' নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। 'প্রতীচী'র সীমানায় বিশ্বভারতীর জমিও ঢুকে গিয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে রবিবার প্রতিবাদও হবে বাংলা একাডেমি চত্বরে। ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বে এই প্রতিবাদসভায় থাকবেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন, কবীর সুমন, অরিন্দম শীল প্রমুখ।
বিষয়টি দ্রুত রাজনৈতিক হয়ে গিয়েছে। নোবেলজয়ীর পক্ষে দাঁড়িয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তথা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান জানিয়ে অমর্ত্য সেনকে চিঠিও লিখেছেন। বিশ্বভারতীর উল্লেখ করা ১৩ ডেসিমেল জমি নিয়েই যত বিতর্ক। যে বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে স্বয়ং অমর্ত্য সেনকে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ বলে মনে হয়েছে। রাজ্য বিজেপি'র তরফে বলা হয়েছে, জমি নিয়ে বিশ্বভারতী যে পদক্ষেপ করেছে, তা ঠিক।
বিষয়টিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আরোপিত হচ্ছে, কারণ, শহরের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মত, এটা সর্বজনবিদিত যে, বিজেপি'র মতাদর্শ নিয়ে বরাবরই সরব অমর্ত্য। কিছু কিছু ইস্যুতে মোদী সরকারের সঙ্গে তাঁর রীতিমতো বিতর্কও বেঁধেছে। মমতা যে চিঠি অমর্ত্যকে লিখেছেন, সেখানেও তিনি অমর্ত্যের দেশের সংখ্যাগুরুর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের প্রসঙ্গ তুলেছেন।
ফলে অমর্ত্য়কে সামনে রেখে বিষয়টি যেন এখন তৃণমূল-বিজেপির রাজনৈতিক তরজায় পরিণত হয়েছে। যা নিয়ে খুশি নন এ শহরের বুদ্ধিজীবীরা।
এ সময়ের অন্যতম বিশিষ্ট কবি ও গদ্যকার জয় গোস্বামী বলেন, ''অমর্ত্যবাবু আমাদের গৌরব। 'প্রতীচী' একটা ঐতিহ্যপূর্ণ বাড়ি। এটি দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিনিকেতনে আছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যদি সেখানে অনুপ্রবেশ করতে চায়, তা হলে সেটা আপত্তিকর। এই ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া উচিত। আমি এর প্রতিবাদ করছি। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।''
বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সমীর আইচ বিষয়টি নিয়ে বলেন, ''গোটা ব্যাপারটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বাঙালির লজ্জা। বিষয়টিতে অশিক্ষার ছাপ। সমস্ত রাজনৈতিক দলই এই দোষে দোষী।''
এ শহরের আর এক কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''অমর্ত্য সেনের সঙ্গে মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি যে উচ্চতার ব্যক্তিত্ব, তাতে তুচ্ছ রাজনৈতিক বিষয়ে কারওরই ওঁকে জড়ানো উচিত নয় বলে মনে করি। ওঁকে কিছু দিতে পারার অর্থ নিজেকেই সম্মানিত করা। আমরা যেন ভুলে না যাই, বাজপেয়ী সরকারের সঙ্গেও ওঁর অনেক মতপার্থক্য় ছিল। কিন্তু বাজপেয়ীজির আমলেই তাঁকে 'ভারতরত্ন' দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। মতপার্থক্য যেন শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অন্তরায় না হয়।''
Also Read: নালন্দা থেকে হাভার্ড হার্ডওয়ার্ক, তারই জেরে কি 'প্রতীচী' বিতর্ক?