মুকুল বধে অর্জুনের পঞ্চবাণ
সুযোগ পেয়েই মুকুল রায়ের উপর দীর্ঘদিনের জমা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিলেন অর্জুন সিং। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মুকুল রায়কে বিশ্বাসঘাতক বলার পাশাপাশি এদিন তাঁর ভোটে জেতার যোগ্যতা নিয়েও তীব্র শ্লেষ ব্যাক্ত করেন অর্জুন। ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং-এর সঙ্গে বরাবরই আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক ছিল মুকুল রায়ের। কিন্তু মুকুল তৃণমূলের শীর্ষ নেতা হওয়ায় এর আগে কখনও সেভাবে মুখ খুলতে পারেননি অর্জুন। কিন্তু আজ দলীয় মঞ্চে সুযোগ পেতেই তার সদব্যবহার করলেন অর্জুন সিং। পঞ্চবাণে আজ মুকুলকে বিদ্ধ করলেন অর্জুন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: এমপি বা এমএলএ ছেড়ে দিন আপনি একটা কাউন্সিলর ভোটে দাঁড়ান, আমি সেই এলাকায় একটা সামান্য ছেলেকে দাঁড় করিয়ে আপনাকে হারিয়ে দেব। মুকুল রায়কে 'ওপেন চ্যালেঞ্জ' অর্জুন সিং-এর। রানি রাসমণি রোডে বিজেপির পাল্টা যুব তৃণমূলের সভায় আজ রীতিমত চড়া সুরে মুকুলের উপর ঝাল মিটিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং। ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুনের সঙ্গে দলে থাকতেই মুকুল রায়ের সম্পর্ক ছিল আদায় কাঁচকলায়। ফলে, সুযোগ পেয়ে মুকুলকে 'গদ্দার' বলা থেকে শুরু করে একাধিক বিষয়ে আজ 'প্রতিশোধ' নিতে কসুর করলেন না অর্জুন। এক ঝলকে এবার দেখে নিন, ঠিক কোন কোন বাণে মুকুলকে বিদ্ধ করলেন অর্জুন-
১) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন সময় দেবেন, সেদিন ভারতের তিনটি রাজ্যে এর (১০ নভেম্বর বিজেপির জমায়েত ) থেকে বড় মিছিল করে দেখিয়ে দেব।
২) রাজ্যের ৭৭ হাজার বুথের প্রতিটিতেই মুকুল রায়ের বেশ কিছু অনুগামী রয়েছেন বলে শোলা যাচ্ছিল রাজনৈতিক মহলের আনাচে কানাচে। মুকুল নিজেও তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই বিষয়টিকে নিশানা করে এদিন অর্জুন সিং বলেন, "৭৭ হাজার ছেড়ে দিন। আপনি কাঁচরাপাড়ার ৭টি বুথের এজেন্টের নাম বলে দিন। আমি রাজনীতি করা ছেড়ে দেব।" কিন্তু মুকুল পারবেন না এবিষয়ে নিশ্চিত অর্জুন।
৩) সিপিএম জমানায় না কি মুকুল কাঁচরাপাড়ায় নিজের ভোটটাই দিতেন না, পালিয়ে আসতেন কলকাতায়। তিনি কলকাতার ভোটার হয়ে গিয়েছিলেন।
৪) মুকুল রায়কে গদ্দার বলে অর্জুন এদিন বলেন, তিনি দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, দলনেত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
৫) মুকুল রায়কে 'নতুন বউ'-এর সঙ্গে তুলনা করে অর্জুনের খোঁচা, যখন নতুন বিয়ে হয় তখন সকলেই বাড়িতে ৪ দিন খুব আনন্দে কাটায়। আর তারপর পঞ্চম দিনে সেই বউকে শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য রান্নাবান্না করতে হয়। অর্থাত্ অর্জুনের ইঙ্গিত, বিজেপিতে যাওয়ার পর মুকুল রায়েরও এখন 'নতুন বউ'-এর মত অবস্থা। '৪ দিন' কেটে গেলেই আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভাঁটা পড়বে।
আরও পড়ুন- মুকুলকে আইনি চিঠি অভিষেকের
যুব তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর কলকাতা সভাপতি জীবন সাহার ডাকে আয়োজিত হয়েছে আজকের এই সভা। আর এই সভামঞ্চই তৃণমূলের জন্য কার্যত বিজেপির মুকুলকে পাল্টা বার্তা দেওয়ার সভায় পর্যবসিত হয়ে উঠেছে। গত ১০ নভেম্বর এই রানি রাসমণি রোডেই সভা করেছিল রাজ্য বিজেপি। আর সেই সভায় 'প্রত্যাশিতভাবেই' স্টার অ্যাট্রাকশন ছিলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা মুকুল রায়। সেই সভাতে তৃণমূল ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি একের পর এক আক্রমণ হেনে নতুন দল বিজেপির 'আশা পূরণ' করেছিলেন মুকুলও। আজ তারই পাল্টা দিতে তৃণমূলের মঞ্চ মাতালেন দলে দীর্ঘদিন মুকুল বিরোধী হিসাবে সুপরিচিত অর্জুন সিং। পাশাপাশি উল্লেখ্য, তৃণমূল থেকে মুকুল ঝরার পর কাঁচরাপাড়া-বীজপুর-ভাটপাড়া এলাকার রাজনৈতিক রাশ এখন পুরোপুরি অর্জুনের হাতেই চলে এল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।