অবলুপ্তির পথে শহরের আর এক পরিবহণ মাইলফলক-মিনিবাস
গত দেড় বছরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বিভাগে নতুন করে একটিও মিনিবাসের আবেদন জমা পড়েনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ১৯৭২ সালে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় বিলাসবহুল যাত্রী পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে কলকাতায় মিনিবাসের সূচনা করেন। সেই সময় আইন করে বলা হয়েছিল এই বাসে কেউ দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন না। অর্থাত্ সকলেই যাতে বসে যেতে পারেন সেই উদ্দেশেই চালু হয়েছিল মিনিবাস। তখন সাধারণ বাসের ভাড়া ছিল যেখানে ১০ পয়সা, সেখানে মিনিবাসের ভাড়া ছিল ৫০ পয়সা।
যুগের হওয়ায় শুধু বিলাসিতা নয়, মিনিবাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রয়োজনীয়তা। ১৯৮৫ সালে মিনিবাসে চড়ে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করার আইন পাশ হয়। সাধারণ বাসের সঙ্গে মিনিবাসের ভাড়ার ফারাক কমে দাঁড়ায় এক টাকা। বেশ চলছিল সব কিছুই ঠিকঠাক। কিন্তু মিনিবাসের ভাগ্যে প্রথম খাঁড়া নেমে আসে ২০১৭ সালে। কলকাতার 'মিনিবাস হাব' বলে পরিচিত বিবাদী বাগ থেকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কজের জন্য মিনিবাস স্ট্যান্ডটি তুলে দেওয়া হয়। শহরের ১৮টি মিনিবাস রুটের সেই থেকে নেই কোনও স্ট্যান্ড। তারা যাযাবর জীবন যাপন করে।
আরও পড়ুন - বউবাজারের বিপর্যস্ত গলিতে আটকে কোটি টাকার সোনা, নিরাপত্তার দাবি স্বৰ্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির
শহরের মোট ৪৮টি মিনিবাস রুটের মধ্যে নানা আনুষাঙ্গিক কারণে ৩০টি বিলুপ্ত। বাকি ১৮টি রুগ্ন। কলকাতা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট গ্যাজেট থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, কলকাতাকেন্দ্রিক মিনিবাসের রুট সংখ্যা ১৪০ (দুই ২৪ পরগণা ও হাওড়া সহ)। ১৯৭২ সাল থেকে সব মিলিয়ে রুট পারমিট পাওয়া বাসের সংখ্যা ৩০০০। অথচ চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত রাস্তায় দৈনিক গড়ে মিনিবাস নেমেছে সাতশোর কম। এর মধ্যে আবার ৮৫শতাংশ বাসের মেয়াদ ২০২৪ সালে ফুরিয়ে যাবে। কারন সেগুলির বয়স ১৫বছর পেরিয়ে যাবে। গত দেড় বছরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বিভাগে নতুন করে একটিও মিনিবাসের আবেদন জমা পড়েনি। পরিবহণ এর সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন ২০২৪ সালের পর শহরের অন্যতম ঐতিহ্য হলুদ-মেরুন মিনিবাস কি ফসিলস হয়ে যাবে!