হঠাত্ অশীতিপর নবনীতার জন্য এত শোক কিসের...

গতকাল সন্ধে নিজের বাড়িতেই মারা যান লেখিকা নবনীতা দেবসেন। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন ক্যানসারে। তবে, আত্মসমর্পণে জায়গায় কখনও ছিলেন না। অনেকেই তাঁকে দেখতে আসতেন। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন

Updated By: Nov 8, 2019, 12:36 PM IST
হঠাত্ অশীতিপর নবনীতার জন্য এত শোক কিসের...
ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: রাত থেকেই এক অসম্ভব শূন্যতা তৈরি হয়েছে ‘ভাল-বাসায়’। বারান্দা, ব্যালকনিতে থাকা গুল্মলতারাও ভাবছে, এতদিন যে আত্মীয়তার বাঁধনে গভীরভাবে বাঁধা ছিল, তা কোথাও আলগা হতে শুরু করেছে। কত মিনিট, কত সেকেন্ড তাঁর সেই স্পর্শ অনুভব হচ্ছে না...প্রতিদিনের থেকে আজ যেন একটু আলাদা। কারণ, ‘ভাল-বাসার’ ভালবাসার মানুষটি ‘শুভযাত্রার’ পথে রওনা দিয়েছেন। তাই এই মুহূর্তে অদ্ভুত সমাপতনে দাঁড়িয়ে নবনীতার ‘ভাল-বাসাটি।’

গতকাল সন্ধে নিজের বাড়িতেই মারা যান লেখিকা নবনীতা দেবসেন। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন ক্যানসারে। তবে, আত্মসমর্পণে জায়গায় কখনও ছিলেন না। অনেকেই তাঁকে দেখতে আসতেন। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন। তাঁদের কাছে নবনীতার মর্মগ্রাহী হওয়া তো দূর, ভীষণ উত্ফুল্লের সঙ্গে বলতেন, “এই যে এত লম্বা জীবন কাটালুম, তার একটা সমাপতন তো দরকার! পুঁজি পুথি দেখে, শুভ দিন, শুভ লগ্ন স্থির করে স্বজনবান্ধবকে নেমন্তন্ন খাইয়ে তবে তো শোভাযাত্রা!” নিজের জীবনটাকে এভাবেই দেখতেন রম্যকার নবনীতা।

তাঁর এই চলে যাওয়ায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও। নবনীতার প্রাক্তন স্বামীর কথায়,  “প্রতিক্রিয়া আর কী হতে পারে? সবাই যেমন মর্মাহত, আমিও। সেটা কেন হচ্ছে, তা তো বোঝা কঠিন নয়। আমি নিজে যেহেতু ওর কাছাকাছি বহুদিন ছিলাম, তাই আমার পক্ষে বড় কঠিন জিনিস...এ বিষয়ে আর বেশি কিছু আলোচনা করতে চাই না।”

আরও পড়ুন- নবনীতা দেবসেনের প্রয়াণে সাহিত্য জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি, শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

কবি জয় গোস্বামী বলেন, “নবনীতা দেবসেনের চলে যাওয়া বাংলা সাহিত্যে অপূরণীয় ক্ষতি। বহুমুখী লেখক ছিলেন। অপূর্ব ভ্রমণ কাহিনি লিখতেন। রম্যরচনায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কবিতাও তিনি মন দিয়ে লিখে গেছেন। পরিমাণে অল্প হলেও খুবই শক্তিশালী। তরুণ লেখকদের উত্সাহ দিতে বরাবরই দেখা গিয়েছে নবনীতাকে।”  

বন্ধুবর্গ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানান, “নবনীতা ব্যক্তিগতভাবে ভাল বন্ধু ছিল। আমার প্রিয় সাহিত্যিকও। সত্যি বলতে কি তাঁর লেখার ভীষণ ভক্ত ছিলাম। এমন রসবোধ সম্পন্ন সাহিত্যিক সত্যিই বিরল। রঙ্গ রসিকতাটাই সব কিছু নয়, জীবনকে দেখার যে ভঙ্গি, ওর মধ্যে আশ্চর্য ব্যতিক্রম।” শীর্ষেন্দু আরও বলেন, “রূপকথাও অসামান্য লিখত। অমর্ত্য সেনের স্ত্রী সেটা তাঁর বড় পরিচয় নয়। নিজের পরিচয় কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে বাঙালি সমাজের কাছে। সবচেয়ে বড় কথা ওর প্রাণশক্তি। ওর এত প্রাণশক্তি যা বহু পুরুষের মধ্যেও থাকে না।”

সত্যিই তাঁর অফরুন্ত প্রাণশক্তি! না হলে তিনি এভাবে বলতে পারেন, “ঠিক আছে। না হয় ক্যানসার-ই হয়েছে। ক্যানসার তো... হঠাত্ অশীতিপর নবনীতার জন্য এত শোক কিসের?”

.