কলকাতার থেকে জেলার অবস্থা আরও খারাপ, বায়ুদূষণের জেরে ৪ বছর আয়ু কমছে বাঙালির
সব্যসাচী চক্রবর্তী
সব্যসাচী চক্রবর্তী
বাতাসে বাড়ছে বিষ। গড়ে ৩.৮ বছর কম বাঁচছে বাঙালি। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করল এনার্জি পলিসি ইন্সস্টিটিউট, শিকাগো বা EPIC. তাঁদের দাবি, কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে বায়ূদূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। গড় আয়ু কমেছে তার জেরে। কলকাতার থেকেও অবস্থা খারাপ অনেক জেলার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, ধূলিকনার মাত্রা 10 μg/m3 (Micrograms per cubic meter) এর নীচে হলে পরিস্থিতি ঠিক আছে। তার বেশি হলেই গড়বড়। যে গড়বড়টি ঘটিয়ে ফেলেছে শুধু বাংলা নয়, গোটা গাঙ্গেয় উপকূলীয় অঞ্চলই। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডিগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং এ রাজ্যের অবস্থা সবথেকে খারাপ। এই কটা রাজ্যে দূষণের জেরে গড় আয়ু কমছে হু হু করে। এই কটা রাজ্যের হিসেব করলে গড়ে ৭ বছর করে কম বাঁচছে মানুষ। অথচ এই এলাকাতেই দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের বাস।
কতটা পরিস্থিতি ভয়াবহ, তা অতীতের সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে। ১৯৯৮ সালে এই গাঙ্গেয় উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির গড় আয়ু কমে দাঁড়িয়েছিল ৩.৭ বছর। অথচ তারপর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭২ শতাংশ বেড়েছে দূষণের মাত্রা। আজ একটি সাংবাদিক বৈঠকে EPIC INDIA-র সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর, কমিউনিকেশনস আশির্বাদ এস রাহা জানান, বাংলার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণ আছে। কারণ সব জেলারই অবস্থা খুব খারাপ। কীরকম?
এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স বিশ্লেষণ করেছে সংস্থাটি। তার সমীক্ষা বলছে, দূষণের ঠেলায় কলকাতায় গড় আয়ু কমেছে ৩.৪ বছর। যা ৯৮ সালে ছিল ১.১ বছর। কলকাতায় দূষণ বেশি, জেলায় কম বলে সান্তনা খোঁজেন, তাঁরা জেনে রাখুন, মালদার মতো জেলায় ৪.৮ বছর করে মানুষ কম বাঁচছে। পুরুলিয়ার ক্ষেত্রে ৪.৫ বছর। মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর বা বীরভূমে সংখ্যাটা ৪.৩। তুলনামূলক ভালো দশা দক্ষিণ ২৪ পরগনার। সেখানে গড় আয়ু কমেছে ৩.১৫ বছর।
ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে কেন্দ্র। সেই মেনে অন্তত ২৫ শতাংশ দূষণ যদি কমিয়ে ফেলা যায়, তাহলে ১.৩ বছর গড় আয়ু বাড়ানো যাবে ভারতীয়দের। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলার তো বটেই।
NRS-এ কুকুর শাবক খুনে ২ ছাত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিল এন্টালি থানা
জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, চলতি মাসে অর্থাৎ অক্টোবরে কলকাতার বাতাসে দূষণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল মাত্র ৩ দিন। হাওড়ার ক্ষেত্রে ২ দিন। ভাবুন, বাকি কটা দিন দূষণ ছিল লাগামছাড়া? কালীপুজোয় কলকাতার আকাশ অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটা পরিষ্কার ছিল বলে যে খবর, তার জন্য দায়ী কিন্তু বৃষ্টি। একমাত্র বৃষ্টি হলেই কলকাতা-হাওড়ার মতো শহরের বাতাসের দূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাকি কটা দিন নষ্ট হয় শহরের শরীর। আর দূষণের কারণের তো শেষ নেই! শীতে উত্তুরে হাওয়া ঢুকতে শুরু করবে শহরে। উত্তর ভারতের ধোঁয়া-ধুলো ছায়া ফেলবে বাংলায়। রবি চাষ শুরু হচ্ছে। বর্ধমান ও হুগলীতে মাঠে আগুন লাগানোর পর্ব এখনও চলে। প্রশাসন কড়া হচ্ছে অবশ্য। কিন্তু সচেতনতার অভাব এখনও রয়েছে। কলকারখানা, গাড়ি এসব তো রয়েইছে।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট কন্ট্রোল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৫ সালের মধ্যে কলকাতার অনেকাংশ জলের তলায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা। বাড়বে বন্যার প্রকোপ। কারণ সমুদ্রতলের উচ্চতা যেমন একদিকে বাড়ছে, তেমনি বছরে ৮.৬ মিলিমিটার করে বসে যাচ্ছে শহরের মাটি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও বিপদের মুখে। বন্যায় গোটা দেশে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বিপদের মুখে পড়তে পারেন। তাপমাত্রা যদি আর দু ডিগ্রি বাড়ে, তাহলে শহর লাগোয়া সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়তে পারে কুড়ি ফুট। জলে, স্থলে বিপদ! হাওয়া-বাতাসেও রেহাই নেই!