আইপিএলের নাইন এক্স
দেখতে দেখতে এসেই গেল ভারতের বাৎসরিক ক্রিকেটীয় বিনোদন উৎসবের ষষ্ঠ দফা। দেশী-বিদেশী, নামী-অনামী ক্রিকেটারদের পকেট ভারি হওয়ার নিশ্চিত উপায়। হ্যাঁ, এটা ঠিকই ক্রিকেটের সাবেকি ব্যাকরণের সঙ্গে আইপিএলের খুব একটা সম্পর্ক নেই। তবে তাই বলে ভুলেও যেন ভুঁরু কুঁচকাবেন না। কুড়ি ওভারের এই বিনোদনকে পাঁচটা গাল পাড়ার আগে জাস্ট একটা জিনিস মাথায় রাখুন। উপমহাদেশীয় দেশগুলো ছাড়া বাকি সব দেশেই এর জনপ্রিয়তা ক্রমহ্রাসমান।
রায়া দেবনাথ
দেখতে দেখতে এসেই গেল ভারতের বাৎসরিক ক্রিকেটীয় বিনোদন উৎসবের ষষ্ঠ দফা। দেশী-বিদেশী, নামী-অনামী ক্রিকেটারদের পকেট ভারি হওয়ার নিশ্চিত উপায়।
হ্যাঁ, এটা ঠিকই ক্রিকেটের সাবেকি ব্যাকরণের সঙ্গে আইপিএলের খুব একটা সম্পর্ক নেই। তবে তাই বলে ভুলেও যেন ভুঁরু কুঁচকাবেন না। কুড়ি ওভারের এই বিনোদনকে পাঁচটা গাল পাড়ার আগে জাস্ট একটা জিনিস মাথায় রাখুন। উপমহাদেশীয় দেশগুলো ছাড়া বাকি সব দেশেই এর জনপ্রিয়তা ক্রমহ্রাসমান।
ফসিল হওয়ার আগের ধাপে দাঁড়িয়ে থাকা এই খেলাটিকে বাঁচাতে হলে ২০ ওভারই সম্বল। এই অমোঘ সত্যিটা মেনে নিন দাদা। আরে তার সঙ্গে একে একটু না হয় বিনোদিনী করাই হল। চারটে বেশি লোক ক্রিকেট না বুঝেই না হয় স্টেডিয়াম নেত্য করল। ক্ষতি কী?
দুঃখ করবেন না। চাপ নেবেন না। কী হইল, কীবা রইল বলে হতাশও হবেন না। সঙ্গে ছোট্ট সাজেশন এবারের আইপিএলটা মিস করবেন না। পরিবর্তনের যুগ মশাই। নিজেকে উলটে নিয়ে পালটে না ফেললে কী চলে? চলুন আপনার মনে একটু শান্তির বাতাস লাগাই। জয় মা আইপিএলেশ্বরী বলে টিভি তো খুলবেন। কিন্তু দেখবেন কাদের? অন্তত যাঁদের দিকে তাকিয়ে এবারের আইপিএলটা আপনার কাছে মধুর হলেও হতে পাড়ে তাঁদের কিছু হালহদিশ রইল আপনাদের সামনে। কোন দলে কে হতে পাড়েন এক্স ফ্যাক্টর তারই কিঞ্চিৎ ভবিষ্যৎবাণী আর কী।
নাইট রাইডার্স:
এক্স ফ্যাক্টর: শাহরুখ খান! আচ্ছা আচ্ছা রাগ করবেন না দাদা। একটু মজা করছিলাম।
আসলে-- ক্যারিবিয়ান পাখি
এবার বিষয়ে ফিরে বৈষয়িক হওয়া যাক। গতবারের চ্যাম্পিয়নদের ট্র্যাম্প কার্ড ছিলেন সুনীল নারিন। এই ক্যারিবিয়ান অফস্পিনারের বল মোটামুটি আগের আইপিএল রহস্যই থেকে গিয়েছিল বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কাছে। ১৫ ম্যাচে ২৪টা উইকেট নাইটদের ক্লান্ত ঘোড়াকে গ্যালন গ্যালন অক্সিজেন জুগিয়েছিল। তার রেজাল্টটাও তারই সাক্ষ্য দেয়। এবারেও নারিং উপর ভরসা রাখছে তাঁর টিম ম্যানেজমেন্ট। কারণ এখনও তাঁর বলের রহস্য উদ্গাটিত হয়ে গেছে বলে পাকা খবর নেই।
ব্রেন্ডন ম্যাকুলাম-- এখনও পর্যন্ত আইপিএলের সেরা ব্যাটিং প্যারফরমেন্সটি কিন্তু এই নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানেরই। যদিও প্রথম আইপিএলের বিজয় মালিয়ার দলের বিরুদ্ধে ওই ম্যাজিক প্যারফর্মেন্স ছাড়া ম্যাকুলাম আইপিএলে তেমন কিছু করে উঠতে পারেননি। তবে এবারে আইসিসি ওয়ানডে ক্রমতালিকায় শীর্ষ স্থানে থেকে বছরটা শেষ করেছেন তিনি। ম্যাকুলামের থেকে ভুলেও নজর সরাবেন না যেন।
চেন্নাই সুপার কিংস:
এক্স ফ্যাক্টর-- জাড্ডু
দুই মিলিয়ান মার্কিন ডলারের বিনিময়ে চেন্নাই সুপারকিংসের হলুদ জার্সি গায়ে চাপিয়ে ছিলেন ভারতীয় দলের নিউজেনারেশনের এই প্রতিনিধি। তবে আগের সিজনে ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলার প্রভূত সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে অসিদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে জাদেজার পারফরম্যান্স। তাই এবারে জাদেজার উপর ফরসা করে ভরসা করাই যায়।
মুম্বই ইন্ডিয়ন্স:
এক্স ফ্যাক্টর-- লঙ্কান এক্সপ্রেস
লাসিথ মালিঙ্গা আর কায়রন পোলান্ডের মধ্যে সচিনের দলের এক্স ফ্যাক্টর হওয়ার লড়াই থাকলেও শ্রীলঙ্কার বিতর্কিত ফাস্ট বোলার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পোলান্ডকে বোধহয় হারিয়েই দেবেন। আইপিএল খেলার জন্য দেশের হয়ে খেলতে অস্বীকার করা মালিঙ্গা নিসন্দেহে গত দুই আইপিএলের ভয়ঙ্করতম বোলার। আইপিএল পাঁচে ১৪টা ম্যাচে ২২টা উইকেট নেওয়া মালিঙ্গা কে এক্স ফ্যাক্টরের ক্যাটাগরি ভুক্ত না করার মত দুঃসাহস কার আছে?
কিংস XI পাঞ্জাব:
এক্স ফ্যাক্টর-- আ পাকিস্তানি ব্রিটিশ
একদা পাক দলের সদস্য অধুনা ইংল্যান্ডের পাসপোর্টধারি আজহার মেহমুদ প্রীতি জিন্টার দলের এক্স ফ্যাক্টির হওয়ার জোরালো দাবিদার। তাঁর ম্যাজিক অলরাউন্ড প্যারফর্মেন্স বদলে দিতেই পারে নেস ওয়াদিয়াদের আইপিএল খড়া ভাগ্য।
সানরাইস হায়দরাবাদ:
এক্স ফ্যাক্টর--স্টেইনগান
বিপক্ষে বিদ্যুৎ গতিতে ছুঁটে আসছেন ডেল স্টেইন আর ব্যাটসম্যানের হাঁটু ঠক ঠক করে কাঁপছে না তাও কি সম্ভব? কাঁপুনি ধরানো দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার যে আইপিএলের নবতম দলের এক্স ফ্যাক্টর হবেন সে নিয়ে প্রশ্ন তোলা জাস্ট বাতুলতা। তাছাড়া তিনটে ফরম্যাটের ক্রিকেটেই `স্টেইনগান`-এর মত সফল বোলার আর কে আছেন?
রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু:
এক্স ফ্যাক্টর--নেক্সট রিচার্ডস
গত আইপিএলে ১৫ ম্যাচে ৭৩৩ রান। স্ট্রাইকরেট ১৬০.৭৪। মাত্র ৪৬টি বাউন্ডারি। ওভার বাউন্ডারির সংখ্যা ৫৯। মাঠের মধ্যে বোলারদের হৃৎকম্প ধরিয়ে দেওয়ার ঠিক যতটা সাবলীল গ্যাংম্যান স্টাইলের নাচেও সমান দক্ষ। রয়াল চ্যালেঞ্জার্সের এক্স ফ্যাক্টরটা তাঁরই কুক্ষিগত। এবং তিনি ক্রিস গেইল। আর বিশেষ কিছু বলার দরকার আছে কি?
পুণে ওয়ারিয়র্স:
শিকারা কিং
এক্স ফ্যাক্টর--
এবারে রঞ্জিতে কামাল করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের পারভেজ গুলাম রসুল জারগার। গুলির শব্দে ক্লান্ত -বিধ্বস্ত কাশ্মীরের বুকেও যে ক্রিকেটের স্বপ্ন বিস্তার পেতে পারে তার জ্যান্ত উদাহরণ রসুল। প্রস্তুতি ম্যাচে অসিদের নাকানি চোবানি খাইয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। তিনি মাঠে আসলে ঠিক কী করতে পারেন সেই সম্পর্কে বিপক্ষ তো ছাড় তাঁর নিজের দলেরও পরিষ্কার ধারণা নেই। আর এই রহস্যময়তাই এই কাশ্মীরির এক্সফ্যাক্টর হওয়ার মূল চাবিকাঠি।
দিল্লি ডেয়ার ডেভিলস:
এক্স ফ্যাক্টর-- ছোট বলেই তুচ্ছ নয়
যতই ফর্মে ভাঁটা থাকুক না কেন নিজের দিনে বীরেন্দ্র সেওয়াগ যে কোনও বোলারের চোখে বিঘে বিঘে সর্ষে ক্ষেত দেখিয়ে দিতে পারেন তাতো সবারই জানা। তবে এবার আইপিএলে চোখ থাকবে উন্মুক্ত চাঁদের দিকে। ভারতের অনুর্দ্ধ ১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সুপার ক্যাপ্টেন উন্মুক্ত চাঁদের মধ্যে আইপিএল-৬-এর এক্স ওয়াই জেড সমস্ত রকম ফ্যাক্টর হওয়ার সম্ভাবনা চতুর্দিক থেকে উঁকি ঝুঁকি মাড়ছে।
রাজস্থান রয়্যালস:
এক্স ফ্যাক্টর-- এক অজির শেন দৃষ্টি
ভারতে সফরে এসে দলের মতই ব্যর্থ শেন ওয়াটসন। তৃতীয় টেস্টে তো কোচের সঙ্গে বিবাদের জেরে দল থেকে ছাঁটাই হয়ে গিয়েছিলেন। এই অসি ফাস্ট বোলারের বাবাতো তাঁকে দেশ ছেড়ে আইপিএলেই মনোনিবেশ করআর পরামর্শ দিয়েছিলেন। আইপিএল শেন ওয়াটসনের রেকর্ড বরাবরই ঈর্ষনীয়। তবে এবারের আইপিএলে সফল না হলে তাঁর ভাগ্যে বিপদ নাচছে। দেশের ক্রিকেট বোর্ডের যা অবস্থা, যে কোন দিন দল থেকে বিদায় হতে পারেন যে কেউ। তার পর যদি আইপিএলের ভিতটাও দূর্বল হয় তাহলে ওয়াটসনের যে দুকূলই যাবে তা তিনি বিলক্ষণ যানেন। তাই আশা করাই যায় অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এবার তিনি মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবেন। তাই শিল্পা শেঠির দলে এক্স ফ্যাক্টর-এর শিরোপা তাঁর মাথাতেই চড়ল।