#zeeclassic দ্য বিমল রায় ফেস্টিভ্যাল উপস্থাপনায় বোমান ইরানি
দেবযানী রায়
ওয়েব ডেস্ক: বিশ্ববরেন্য পরিচালক বিমল রায়ের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে Zee Classic এর শ্রদ্ধার্ঘ — দ্য বিমল রায় ফেস্টিভ্যাল। উপস্থাপনায় বোমান ইরানি। দেখুন পাঁচটি দুর্মূল্য রত্ন — ‘দো বিঘা জমিন’, ‘দেবদাস’, ‘মধুমতি’, ‘সুজাতা’ ও ‘বন্দিনী’, পর পর পাঁচ সপ্তাহ ধরে। তাছাড়া রয়েছে বিমল রায়ের উপর একটি তথ্যচিত্র থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ। স্মৃতিচারণা করবেন ধর্মেন্দ্র, বৈজন্তিমালা, গুলজার ও আশুতোষ গোয়ারেকর। শোনাবেন বিমল রায়ের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। ফেস্টিভ্যাল-এর তৃতীয় ছবি দিলীপ কুমার ও বৈজন্তিমালা অভিনীত ‘মধুমতি’ ।
মধুমতী
‘মধুমতী’ শ্রী বিমল রায় ও শ্রী ঋত্বিক ঘটকের যুগলবন্দির এক অসাধারণ ও অনন্য নিদর্শন। একমাত্র তো বটেই। শ্রী ঘটকের লেখনী, শ্রী রায়ের পরিচালন দক্ষতা ও শ্রী সলিল চৌধুরীর সুরের মোহজালে মধুমতী যেন এক মায়াবিনী --- আজও যার রূপের কুহকে আমরা মুগ্ধ।
১৯৫৮ সালে এই জনপ্রিয় ছায়াছবিটি জাতীয় স্থরে ভূষিত হয় সর্বশ্রেষ্ঠ হিন্দি চলচিত্র হিসেবে। ৯টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ী হয় এই ছায়াছবি এবং এই অনন্যসাধারণ মর্যাদা ধরে রাখতে সক্ষম হয় দীর্ঘ সাইত্রিশ বৎসর ধরে। শ্রেষ্ঠ ছায়াছবি, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ মহিলা নেপথ্য সঙ্গীত শিল্পী, শ্রেষ্ঠ সংলাপ, শ্রেষ্ঠ আবহ পরিচালন ও শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ --- এই নবরত্নে সাজানো হয় মধুমতীর শিরোপা। শ্রী সলিল চৌধুরী মধুমতীর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে এতটাই জনপ্রিয় হন যে এর পরে তিনি উনিশটি ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালনের জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।
ছায়াছবিটির অমোঘ আকর্ষণ তার'দ্বৈত সত্তার এক অসাধারণ মেলবন্ধন। একদিকে এক চিরকালীন প্রেমিক যুগলের মধুর আখ্যান ও অপরদিকে এক ভৌতিক পরিবেশের আবহ যার থেকে সৃষ্ট হয় সেই চির কৌতুহলের উৎস --- পুনর্জন্ম কি আছে? আমাদের অতৃপ্ত আত্মা কি সুযোগ পায় নিজের বাসনা পরিতৃপ্তির। এই প্রেম ও পুনর্জন্মের রসায়ণ বার বার ফিরে এসেছে হিন্দি ছায়াছবিতে --- উদাহরণ স্বরূপ রইলো রাজেশ খান্না ও হেমা মালিনী অভিনীত 'মেহবুবা', ঋষি কাপুর অভিনীত 'জনম জনম', মিঠুন চক্রবর্তী ও ডিম্পল কাপাডিয়া অভিনীত 'বিস সাল বাদ' ও শারুখ খান ও দীপিকা পাদুকোন অভিনীত 'ওম শান্তি ওম'।
পূর্বজন্মের মৃতা প্রেমিকা মধুমতীর প্রতিজ্ঞার টানে দিলীপ কুমার অভিনীত আনন্দ চরিত্রটি ফিরে আসে রামপুরে। রাস্তায় গাড়ি খারাপ হওয়ার ফলে ঝড় বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত আনন্দ এক বন্ধুর সাথে আশ্রয় নেয় এক জীর্ণ প্রাসাদে। সেইখানে সে যেন কার এক অদৃশ্য অস্তিত্ত্ব অনুভব করে। 'স্পর্শে, বর্ণে, গন্ধে, গীতিতে' হৃদয়ে যে দেয় দোলা, উত্তাল করে তোলে মনপ্রাণ।সেই অজানার টানে আনন্দ ঘুরে বেড়ায় প্রাসাদে। প্রথম দেখার পর থেকেই প্রাসাদটির প্রতিটি অন্ধি, সন্ধি নাড়ি নক্ষত্র তার চেনা লাগছিল। এবার সে পুরোপুরি ভাবে সন্দেহমুক্ত হয়। পূর্বজন্মের সমস্ত স্মৃতি তার মনে ভিড় করে আসে।
স্মৃতিমেদুর আনন্দ রোমন্থন করে তার পূর্বজন্মের। অতীতের প্রতিটি ঘটনা তার কাছে স্পষ্ট ভাবে প্রতীত হয়ে যায়। নবীন যুবক সে, এসেছিল জমিদারের কাঠগোলার হিসেবরক্ষকের চাকরি নিয়ে। সহজেই এলাকার মানুষজনের কাছে এক উদার দৃঢচেতা ও মানবদরদী চরিত্রের পরিচয় রাখতে সক্ষম হয় সে। সাহসী এই যুবক নিষেধাজ্ঞা না মেনে পৌছে যায় নদীর ওপারে। নিসর্গদৃশ্যের শোভা উপভোগ করা ও তার চিত্রঅঙ্কনই তার উদ্দেশ্য। সরল সুন্দরী মধুমতীর গান তাকে আগেই মুগ্ধ করেছিল। এবার মধুমতীর প্রথম দর্শনে সে স্বাদ পেল এক অনাগ্রাহাতা কুসুমের --- প্রথম পরিচয়ের আবেগে যে থরথর কম্পিত।
আনন্দের তেজী ও দরদী মনোভাবের পরিচয় পেয়ে মধুমতীর হৃদয়ে জাগে সন্মান। তা ক্রমশ পরিণতি পায় সখ্য ও প্রেমে। দুই নবীন হৃদয় পরস্পরের প্রতি গাড় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়। কিন্তু জমিদারের কুটিল দৃষ্টি তারা এড়াতে পারে না। কামুক জমিদার ছল চাতুরি করে আনন্দ কে পাঠায় মীরপুরে, কাজের অছিলায়। সেই সময় মধুমতীর বাবাও মেলায়। আনন্দ গুরুতর জখম -- এই মিথ্যা সংবাদে প্রতারণা করে মধুমতীকে প্রাসাদে আনতে সক্ষম হয় জমিদার। মধুমতী কি এড়াতে পারল জমিদারের করাল গ্রাসকে? প্রশ্নের উত্তরের জন্যে রুদ্ধশাসে অপেক্ষা করতে হয়। এই অপেক্ষা দর্শকদের মনে জাগিয়ে রাখেন কুশলী পরিচালক শ্রী বিমল রায়। অবশেষে অবসম্ভাবী ভাবেই মৃতা মধুমতীর রোষের অনলে ভস্মীভূত হয় জমিদার। পরজন্মে মিলনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আনন্দ কে বিদায় জানায় মধুমতীর আত্মা।
আর মধুর এই প্রতিশ্রুতির অনুরণনে বেজে ওঠে আনন্দের মন --- যখন সে তার মধুমতীকে এজন্মেয় সাথী হিসেবে ফিরে পায়।
কুশল লেখনী, দক্ষ আবহপরিকল্পনা, চিন্তাশীল পরিচালনা, অসাধারণ চিত্রগ্রহণ, শক্তিশালী অভিনয়, সুরের মূর্ছনা ও সর্বোপরি এক ব্যতিক্রমী ধারণার এক সফল বাস্তবায়ণের ফলে সমস্ত অবাস্তবতার প্রলেপ কাটিয়ে মধুমতী আজও দর্শকদের মন এক মধুর আবেশে ভরিয়ে দেয়।
দেখতে ভুলবেন না। দ্য বিমল রায় ফেস্টিভাল উপস্থাপনায় বোমান ইরানি। সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘মধুমতি’ দেখান হল শনিবার, সন্ধে ৮ টায়, Zee Classic এ।