অজানা জোহরা

দীর্ঘ ১০২ বছরের জীবন। বর্ণময় জীবনে রয়ে গেছে অনেক অজানা। এমনই কিছু অজানা কথা রইল আমাদের প্রতিবেদনে-

Updated By: Jul 11, 2014, 09:48 PM IST

দীর্ঘ ১০২ বছরের জীবন। বর্ণময় জীবনে রয়ে গেছে অনেক অজানা। এমনই কিছু অজানা কথা রইল আমাদের প্রতিবেদনে-

জোহরা সেহগলের পুরো নাম সহিবজাদি জোহরা বেগম মুমতাজ-উল্লাহ খান। ১৯১২ সালের ২৭ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের সুন্নি মুসলিম পাঠান পরিবারে জন্ম তাঁর। সাত ভআইবোনের মধ্যে জোহরা ছিলেন তৃতীয়। মাত্র এক বছর বয়সে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে বাঁ চোখের দৃষ্টি হারান জোহরা। কিন্তু চিকিত্‍সায় ফিরে পান দৃষ্টিশক্তি।

অফুরান প্রাণশক্তিতে ভরপুর টমবয় জোহরা ছেলেবেলায় পুতুল খেলার থেকে গাছে চড়তেই বেশি ভালবাসতেন। ছোট থেকেই ছকভাঙা জীবনই পছন্দ ছিল তাঁর। দেরাদুনে উদয় শঙ্করের অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিলেন জোহরা। সেই মুগ্ধতাই মোড় ঘুরিয়ে দেয় জীবনের।

শিশু বয়সেই মাকে হারান জোহরা। মায়ের ইচ্ছা ছিল লাহোরের কুইন মেরি কলেজে পড়াবেন জোহরাকে। সারা দেশ ঘুরে দেখার শখ ছিল জোহরীর। ছিল সারা বিশ্বকে জানা আকাঙ্ক্ষা। নিজের কাকার সঙ্গে সারা ভারত, পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপ গাড়িতে ঘুরেছিলেন জোহরা। ফিরে এসে মায়ের ইচ্ছামতো ভর্তি হন কুইন মেরি গার্লস কলেজে।

স্নাতক হওয়ার পর উদয়শঙ্করের ডান্স ট্রুপে যোগ দেন জোহরা। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে উদয়শঙ্করের সঙ্গে জাপান, মিশর, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠান করেন তিনি। পরে উদয়শঙ্করের ট্রুপে শেখানো শুরু করেন। সেখানেই পরিচয় হয় কামেশ্বর সেহগলের সঙ্গে। ইন্দোরের বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী ও নর্তক কামেশ্বর ছিলেন জোহরার থেকে ৮ বছরের ছোট। কিন্তু তাতে প্রেমে পড়তে অসুবিধা হয়নি জোহরার। দুই পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও ১৯৪২ সালে বিয়ে হয় দুজনের। খুশবন্ত সিংয়ের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বিয়েতে নিমন্ত্রিত ছিলেন জহরলাল নেহরু। কিন্তু গান্ধীর ভারত ছাড়ো অন্দোলন সমর্থন করার জন্য বিয়ের মাত্র দুদিন আগে গ্রেফতার হন তিনি। বিয়ের পরও দুজনেই উদয়শঙ্কর ট্রুপের নিয়মিত সদস্য ছিলেন।
পরে ট্রুপ বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা লাহোর চলে যান।

দেশভাগের সময় স্বামীর সঙ্গে বম্বে ফিরে এসে পৃথ্বীরাজ কপূরের থিয়েটার গ্রুপে যোগ দেন জোহরা। সেখানে টানা ১৪ বছর কাজ করেছিলেন তিনি। দুই সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিরণ ও পবন। জোহরা ও কামেশ্বর কেউই ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন না। তাই তাঁদের সন্তানরাও কখনও নিজেদের হিন্দু বা মুসলিম বলে দাবি করেননি। ১৯৫৯ সালে কামেশ্বরের মৃত্যুর পর দিল্লি চলে যান জোহরা। দিল্লিতে একটি নাট্য অ্যাকাডেমি শুরু করেন জোহরা। ১৯৬২ সালে ড্রামা স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডন পাড়ি দেন জোহরা। সেখানেই ১৯৬৪ সালে বিবিসি প্রযোজিত কিপলিংয়ের গল্প দ্য রেসকিউ অফ পাফলস অবলম্বনে নাটকে অভিনয় করেন তিনি। লন্ডনে থাকতেই মার্চেন্ট আইভরি প্রোডাকশনের ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন জোহরা। ১৯৮২ সালে জেমস আইভরি পরিচালিত দ্য কার্টেসানস অফ বম্বেতেও অংশগ্রহণ করেন তিনি।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি ভারতে ফিরে বলিউডি ছবিতে ঠাকুমার চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন জোহরা। হম দিল দে চুকে সনম, সাওয়ারিয়া, চিনি কম, বীর জারার মতো বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ ও ২০১০ সালে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন জোহরা।

অবশেষে এল সেই দিন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ জুলাই দক্ষিণ দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হন জোহরা। পরদিন বিকেল ৪:৩০ মিনিটে ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে।

.