মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, ঋতুমতী, বৃহন্নলা, কৃষ্ণকলি- দুর্গার সপ্তরূপে স্বস্তিকা
রণিতা গোস্বামী
রণিতা গোস্বামী
যুগ যুগ ধরে কখনও মেয়ে, কখনও স্ত্রী, কখনও বোন, এভাবেই বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মহিলারা। প্রতিটি সম্পর্কের সব দায়িত্বই নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁরা পালন করে এসেছেন। বলা হয়ে থাকে, ভারতীয় নারীরই আরেক রূপ হল দেবী দুর্গা। তিনি পুজিত হন, অথচ সমাজের বুকে অবহেলিত, বঞ্চিত হতে হয় বাস্তবের দুর্গাদের। একথা মাথায় রেখেই 'দুর্গা কে?' অ্যালবামে সৌরদীপ ঘোষের ফটোগ্রাফিতে অন্য রূপে প্রতিভাত হলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।
৭-৮ বছরের ছোট্ট মেয়েকে কুমারী দুর্গার বেশে পুজো করা হয়, আবার সেই মেয়ের বয়সই যখন ২৮ গিয়ে ঠেকে, তখন তার উপর আরোপিত হয় নানান বিধি নিষেধ। তাঁকে মন্দিরে ঢুকতেই বাধা দেওয়া হয়। সৌরদীপ ঘোষের এই ফটোগ্রাফির মাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তাহলে কি পুরুষরা নারীর নারীত্বে ভীত হয়ে পড়েন? সৌরদীপ ঘোষের এই 'দুর্গা কে' অ্যালবামে বাস্তবের দুর্গার নানান রূপে ধরা দিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।
একদিকে কালী রূপকে পুজো করা হয়, আবার বাস্তবে কোনও মেয়ের গায়ের রং কালো হলে, তাঁকে সমাজে শুনতে হয় নানান গঞ্জনা।
'পাত্রী চাই' এর বিজ্ঞাপনে বিয়ের জন্য সুশ্রী পাত্রী সহ নানান দাবি নিয়ে হাজির হন পুরুষরা। 'দুর্গা কে?' অ্যালবামে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন বিয়ের জন্য এক নারীর যোগ্য়তাটা ঠিক কী?
জন্মের পর থেকে মহিলারা শাড়ি পরবে আর পুরুষরা স্যুট পরবে এই পার্থক্যই বা কেন করা হয়?
এক সন্তান সম্ভবা মহিলাকে সবসময় দুর্বল বলে চিহ্নিত করা হয়। অথচ ওই মহিলা সেসময় এক নতুন প্রাণের সৃষ্টি করতে চলেছেন।
আমরা বৃহন্নলাদের এড়িয়ে চলি, তাঁদের দেখলে হাসাহাসি করি, অথচ, এরাই সন্তান জন্মের পর আশীর্বাদ করতে আসেন। তখন সেটা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়।
পতিতালয়ের মাটি ছাড়া দুর্গা প্রতিমা তৈরিই হয় না, অথচ আমরা তাঁদেরই নিচু চোখে দেখি।
বিভিন্ন রূপে আমার 'দুর্গা'কে পুজো করে থাকি। আর দেবী দুর্গা ভারতীয় মহিলাদেরই যেন আরেক রূপ। শুধু দেবী মূর্তিতে নয়, বাস্তবের মাটিতেই দেখা মেলে দুর্গাদের। এমনই একটা বিষয়ের উপরই এই ফটোশ্যুট করেছেন সৌরদীপ ঘোষ। কোথা থেকে এই পরিকল্পনা মাথায় এল তাঁর? একথা প্রশ্ন করা হলে তিনি Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালকে জানান, ''সমাজের কাছে বেশকিছু প্রশ্ন আমার ছিল, সেই প্রশ্নগুলো তুলে ধরতেই এই ফটোশ্যুট আমি করি। আমার ছবিতে দেখে থাকবেন একটা ছোট্ট মেয়েকে কুমারী রূপে পুজো করা হয়, আবার সেই মেয়েই ঋতুমতী হলে আমরা তাঁকে মন্দিরে ঢুকতে দিই না। পতিতালয়ের মাটি ছাড়া দুর্গা প্রতিমাই হয় না, অথচ, আমরা তাঁদেরই নিচু চোখে দেখি। এমনই বেশকিছু প্রশ্ন থেকেই ফটোশ্যুটটা করা। প্রত্যেক ছবিতেই একটা প্রশ্ন আমি রেখেছি। সমাজ কেন এতটা ভণ্ডামি চলে? সেই প্রশ্নই তোলা হয়েছে। এই পরিকল্পনা আমার মাথায় এসেছিল, জ্যান্ত দুর্গা থেকে। পুজোর সময় অনেক মণ্ডপেই জ্যান্ত দুর্গার পুজো হয়, জ্যান্ত দুর্গা সাজানো হয়, অথচ বাস্তবের দুর্গাদের প্রতি কেন এত অবহেলা? ''
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় 'দুর্গা কে' অ্যালবাম প্রসঙ্গে বলেন, ''আমি ছোট থেকেই আমার এই নারীত্বের উদযাপন করে এসেছি। আমি সবসময় আমার মাকে দেখেছি এক্ষেত্র নিরপেক্ষ মতামত পোষণ করতে, কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে। আমি আমার মায়ের মে। যদিও মহিলা হিসাবে আমার যাত্রাটাও মধুর হয়নি। জানি কোনও মহিলার জীবনেই সেটা হয় না। তাই এই পুজোতে মহিলাদের এই সমস্যাগুলোকেই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি। তা সে শহর এলাকাতেই হোক কিংবা গ্রাম বাংলায়। আমরা মূর্তি পুজো করি, কিন্তু বাস্তবে মহিলাদের আমরা প্রকৃত মর্যদা দিই না। তাই আমার প্রশ্ন দুর্গা কে? ''