বাধা পেরিয়ে, লড়াই আর শিক্ষার অধিকারের গল্প বলল সুপার থার্টি
'সুপার থার্টি'র জনক এই মাস্টারমশাইয়ের জীবনের গল্পই এবার জানতে পারবেন সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা।
রণিতা গোস্বামী: নাম আনন্দ কুমার, বিহারের পাটনা থেকে কিছুটা দূরে একটা ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা এই মাস্টারমশাইকে এতদিন সেভাবে হয়তবা অনেকেই চিনতেন না। কেউ বা আবার বইয়ের পাতায় আনন্দ কুমারের কথা বইয়ের পাতায় পড়ে থাকতে পারেন। তবে হৃত্বিক রোশনের ছবি 'সুপার থার্টি'র দৌলতে এবার সেই অসম্ভব মেধাবী, সৎ, পরিশ্রমী, সমাজের অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষের বন্ধু, 'সুপার থার্টি'র জনক এই মাস্টারমশাইয়ের জীবনের কথা বড়পর্দায় এবার জানতে পারবেন সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা।
কেমন ছিল 'সুপার থার্টি'র আনন্দ কুমারের সেই লড়াই?
বাবা পোস্ট অফিসের সামান্য কর্মী। তাঁর অল্প বেতনেই কোনওরকমে সংসার চলে। তবে অসম্ভব মেধাবী আনন্দ কুমার স্বপ্ন দেখে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করার, বড় হয়ে কিছু করে দেখানোর। অঙ্ক কষাই তাঁর নেশা, ভালোবাসা, সবকিছুই। জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই অঙ্ককে খুঁজে পায় সে। তা সে প্রেমিকার সৌন্দর্যই হোক, কিংবা প্রাত্যহিক কাজকর্ম। মেধাবী এই ছেলেটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েও অর্থনৈতিক কারণে সেখানে পড়তে যেতে পারেনি। বাবার মৃত্যু এক লহমায় বদলে দেয় আনন্দের চোখে ভেসে থাকা স্বপ্নটা।
আরও পড়ুন-টানটান উত্তেজনা, সাসপেন্সে ভরা 'নেটওয়ার্ক', না দেখলে মিস করবেন
আরও পড়ুন: সৃজিতের 'গুমনামী বাবা'র জন্য গান গাইলেন বাবুল
তবে এই আনন্দ কুমারের চোখ দিয়েই স্বপ্ন দেখতে শেখে অর্থনৈতিক জীবনে পিছিয়ে পড়া, BPL তালিকাভুক্ত দেশের কিছু অসম্ভব মেধাবী কিছু ছাত্র। 'রাজার ছেলেই শুধু রাজা হবে' এই তত্ত্বে বিশ্বাস রাখেন না আনন্দ কুমার। রাজা সেই হবে যে যোগ্য। তবে সবক্ষেত্রে এই ধ্রুব সত্যি কথাটা কেই বা বুঝতে চাইছে! সংবিধান সকলকে শিক্ষার অধিকার দিয়েছে ঠিকই, তবে অনেকক্ষেত্রেই দিন মজুরি করা খেটে খাওয়া মানুষের কাছে শিক্ষাটা অধিকার না হয়ে স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়। বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা। অনেকক্ষেত্রেই কিছু অসৎ লোকজনের হাতের পুতুল হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। টাকা থাকলে, আর সঙ্গে অল্পবিস্তর মেধা থাকলে যে কেউ গিয়ে সেখানে হয়তবা পড়তে পারে। যাঁদের মেধা আছে, অথচ টাকা নেই তাঁদের কী হবে?
এই ছাত্রদের জন্যই রয়েছেন আনন্দ কুমার, বিনা পয়সায় গরিব মেধাবীদের তাঁদের যোগ্য জায়গায় পৌঁছে দিতে উঠে পড়ে লাগেন আনন্দ। তবে স্রোতের বিপরীতে হাঁটাটা মোটেও সহজ নয়। আনন্দের কুমারের ক্ষেত্রেও সহজ হয়নি। লড়াই, লড়াই আর লড়াই। আর উপস্থিত বুদ্ধি দিয়েই বাজিমাত করেছেন আনন্দ। যার জন্য অবশ্য আনন্দকে হারাতেও হয়েছে অনেককিছুই।
তবে প্রশ্নটা হল অঙ্কের শিক্ষক আনন্দ কুমারের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে হৃত্বিক কি সফল? হ্যাঁ ছবিতে তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। অভিনেতা হিসাবে, হৃত্বিক তাঁর সাধ্য মতো তুলে ধরেছেন অঙ্কের শিক্ষক আনন্দ কুমারকে। তাঁর মেকআপ, অভিনয় সবকিছু দিয়েই তিনি বিহারের বাসিন্দা আনন্দ কুমারের চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছেন। তবে কিছুটা যেন কানে লাগছে বিহারের বাসিন্দা হিসাবে 'আনন্দ কুমার' হৃত্বিকের ভাষার উচ্চারণ, সেটা যেন ততটাও নিখুঁত নয়। হৃত্বিকের পাশাপাশি অভিনয়ের প্রশংসা করতে হয় ম্রুণাল ঠাকুর, আদিত্য শ্রীবাস্তব, বীরেন্দ্র সাক্সেনা, পঙ্কজ ত্রিপাঠির অভিনয় নিজ নিজ চরিত্রে প্রশংসনীয়।
আরও পড়ুন-কঙ্গনা বাড়াবাড়ি করছেন মনে করছেন স্বস্তিকা!
তবে ছবির মিউজিক, অহেতুক অতিনাটকীয় বেশকিছু দৃশ্য যেন বড় বেশি চোখে লেগেছে। সিনেমা দেখতে বসে অনেক জায়গাতেই মনে হয়েছে ছবির বেশকিছু দৃশ্য যেন অহেতুক টেনে টেনে বাড়ানো। বিশেষকরে যেখানে আনন্দ কুমারের ছাত্ররা হলির দিন জনসমক্ষে ইংরাজিতে নাটক করছিলেন, ওই জায়গাটি অহেতুক দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও বেশকিছু জায়গা বড়বেশি ফিল্মি মনে হয়েছে একটা বায়োপিকের গল্পে হয়তবা অতটা না হলেও চলত। তবে মন কেড়েছে অনয় গোস্বামীর সিনেমাটোগ্রাফি।
তবে এই সবকিছুর পরেও এ ছবির গল্প লড়াইয়ের গল্প বলেছে। সমস্ত বাধা পার করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। শিক্ষার অধিকারের কথা বলেছে। তাই বড় বেশি ফিল্মি হয়েও এ ছবিতে মন কেড়েছে সৎ, সাহসী, শিক্ষক আনন্দ কুমারের লড়াই। সবমিলিয়ে এই ছবিকে তাই ৫এর মধ্যে ৩ দেওয়া যেতে পারে।