'সঞ্জু'-তে উঠে এলেন সেরা রণবীর, টিকিট কাটার আগে দেখে নিন চটপট রিভিউ
মুম্বই বিস্ফোরণ থেকে জেল, সঞ্জয় দত্তের জীবনের একধিক প্রেম সবই নতুন করে সকলকে মনে করিয়ে দিলেন রণবীর কাপুর। তবে আদপে কেমন হল 'সঞ্জু'?
নিজস্ব প্রতিবেদন : জীবদ্দশায় বায়োপিক হয়েছে এমন মানুষ বেশ কমই আছেন। তাই সঞ্জয় দত্তের রঙিন জীবনের বায়োপিক তৈরি নিয়ে তাই কম আলোচনাও হয়নি। ফলে পরিচলক রাজকুমার হিরানির 'সঞ্জু'র মুক্তি নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন সিনেমাপ্রেমীরা। তার উপর 'সঞ্জু'র ট্রেলর দেখার পর পরই রণবীর কাপুরে মুগ্ধ হয়ে যান দর্শকরা। অবশেষে শুক্রবার অর্থাত ২৯ জুন মুক্তি পায় 'সঞ্জু'। যেখানে মুম্বই বিস্ফোরণ থেকে অস্ত্র আইনে সঞ্জয়ের জেলে যাওয়া সহ সুনীল দত্তের ছেলের জীবনের নানা দিক উঠে এসেছে। সিনেমায় বলিউড অভিনেতার জীবনের রং বেরঙের সম্পর্ককেও তুলে ধরেছেন রণবীর কাপুর। তাহলে কেমন হল 'সঞ্জু'?
বিষয়বস্তু ও বিশ্লেষণ : সঞ্জয় দত্ত এমন একজন মানুষ, যাঁর চরিত্রের সঙ্গে একাধিক জীবন জুড়ে রয়েছে। রাজকুমার হিরানি সেই সব চরিত্রগুলিকে একত্রিত করে তুলে ধরেছেন সিনেমার পর্দায়। ছবির শুরুতে দেখা যাচ্ছে, সঞ্জয় দত্ত (রণবীর কাপুর) যখন নিজের জীবনী লিখতে চান, তখনই অস্ত্র আইন মামলায় সুপ্রিম কোর্টে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়। ওই সময় বায়োপিক লেখার জন্য তিনি বিভিন্ন লেখিকার দ্বারস্থ হন। তবে অন্য লেখিকারা যখন তাঁর জীবনী তাঁর মত করে তুলে ধরতে অসমর্থ হন, তখন তিনি উইনির (অনুষ্কা শর্মা) দ্বারস্থ হন। এরপর উইনির সঞ্জয়ের মত করে তাঁর জীবনী তুলে ধরেন বইয়ের পাতায়।
এই ছবিতেও রাজকুমার হিরানির অন্য ছবির মতোই নাটক, হাস্যরস সবই রয়েছে। তবে ছবিতে সঞ্জয় দত্তের একাধিক প্রেম ও বিয়ের বিষয়ে সেভাবে কিছুই তুলে ধরা হয়নি। তার বদলে তুলে ধরা হয়েছে বাবা ছেলের সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব। ছবিতে সঞ্জয় দত্তের বাবা সুনীল দত্তের চরিত্রে দেখা গিয়েছে পরেশ রাওয়ালকে।
সঞ্জয় দত্তের মা নার্গিসের চরিত্রও (মণীষা কৈরালা) সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি মা-ছেলের সম্পর্কও এগিয়েছে সুন্দর ছন্দে। সিনেমায় গুরুত্ব পেয়েছে সঞ্জুবাবার প্রিয় বন্ধুর ( বিকি কৌশল) চরিত্রও। এই চরিত্র সিনেমায় একটি ইতিবাচক ভূমিকাও পালন করেছে। ছবিতে সঞ্জয় দত্তের ব্যক্তিগত জীবন বিশেষভাবে তুলে ধরা না হলেও, তাঁর বর্তমান স্ত্রী মান্যতা-( দিয়া মির্জা)-তে দেখানো হয়েছে বিশেষভাবে। মান্যতা যে সঞ্জুর জীবনে ছায়ার মতো ছেয়ে রয়েছেন, তা এখানে স্পষ্ট। যদিও এই সিনেমায় সঞ্জয় দত্তের প্রথম স্ত্রী, প্রথম সন্তান এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই বিষয়টি যদিও একটু অদ্ভুতভাবে বেখাপ্পা লেগেছে।
ছবিটিতে প্রথম হাফে সবকিছু সংক্ষেপে দেখানো হলেও, দ্বিতীয় হাফে সবকিছুই অনেকটা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 'সঞ্জু'-তে সঞ্জয় দত্তের নানান মামলা মোকদ্দমা, জীবনের নানান জটিলতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেখানো হয়েছে তিনি কোনও সন্ত্রাসবাদী নন।
অভিনয়: গোটা ছবিতে সঞ্জয় দত্তের ভূমিকায় রণবীর কাপুর অসাধারণ এবং অনবদ্য। তিনি কতটা দক্ষ অভিনতা, তা তিনি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরতে সক্ষম। ছবির প্রত্যেকটা ইমোশন তুলে ধরতে রণবীর সফল। পাশাপাশি দাগ কেটেছে সঞ্জয় দত্তের প্রিয় বন্ধুর চরিত্রে বিকি কৌশলের অভিনয়। সেই সঙ্গে ছবির অন্যান্য চরিত্রগুলিও রণবীরের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেছে।
গান ও চিত্রনাট্য : সবমিলিয়ে রাজকুমার হিরানির অন্যান্য ছবির মতোই 'সঞ্জু'-তেও সুন্দরভাবে গল্প বলা হয়েছে। যার মধ্যে সবথেকে বেশি দাগ কটেছে বাবা-ছেলের সম্পর্ক। পাশাপাশি মাদক আসক্ত সঞ্জয় দত্তের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তগুলে বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছবিতে এ আর রহমান, রোহন-রহোন, বিক্রম মন্টোস-এর গান যেন সিনেমাটিকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। মনে দাগ কেটেছে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। তবে এটা ঠিক, এই সিনেমাকে বায়োপিক বলা হলেও, ছবিতে সঞ্জয় দত্তের জীবনের অনেক ঘটনাকেই তুলে ধরা হয়নি। তা সত্ত্বেও 'সঞ্জু' রাজকুমার হিরানির জীবনের অন্যতম সেরা ছবি তা বলাই যায়।
সবমিলিয়ে 'সঞ্জু'কে ৫ এর মধ্যে ৪ দেওয়া যাক...