ফিল্ম রিভিউ: 'পরিণীতা'র প্রেম ও প্রতিশোধ, বাবাইদা কে কি পেল মেহুল?

একটা আপাত প্রেমের গল্পে জড়িয়ে মেহুল বোস (শুভশ্রী গাঙ্গুলি) আর বাবাইদা(ঋত্বিক চক্রবর্তী)। মেহুলের যাবতীয় স্বপ্ন বাবাইদাকে ঘিরে। 

Updated By: Sep 6, 2019, 08:59 PM IST
ফিল্ম রিভিউ: 'পরিণীতা'র প্রেম ও প্রতিশোধ, বাবাইদা কে কি পেল মেহুল?

শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায়

একতরফা ভালবাসা আসলে একটা কনসেপ্ট। পজেসিভ লভ যে বড় বড় বাধার মুখে রুখে দাঁড়াতে পারে, পরিস্থিতিকে ভয়ঙ্কর জটিল করে দিতে পারে, ভারতীয় সিনেমায় তা নতুন কিছু নয়। ছবি দেখতে দেখতে বারবারই মনে পড়ছিল পরিচালক শ্রীরাম রাঘবনের ‘এক হাসিনা থি’ ছবির কথা। ঝাপসা একটা প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু ‘পরিণীতা’র স্টোরি-টেলিং অনেকটাই পেলব, মধুর, নটখট এমন কি মজারও।

একটা আপাত প্রেমের গল্পে জড়িয়ে মেহুল বোস (শুভশ্রী গাঙ্গুলি) আর বাবাইদা(ঋত্বিক চক্রবর্তী)। মেহুলের যাবতীয় স্বপ্ন বাবাইদাকে ঘিরে। মনে মনে ভাবে, কখনও না কখনও বাবাইদা তাকে প্রপোজ করবেই। কারণ, বাবাইদাই তো তাকে দিয়ে পিঠ টেপায়, মাথা টেপায়, চা আনতে বলে। ক্সোজ প্রক্সিমিটিতে আসতে দেয়। তাহলে বাবাইদা তো তাকে ভালইবাসে! শুভশ্রী আর ঋত্বিক মেনস্ট্রিমের দায়রায় এক সুন্দর ভালবাসার ক্যানভাস তৈরি করেন। দর্শকরা গোটা গল্পটাই দেখেন মেহুলের অ্যাঙ্গেল থেকে। তাই বাবাইদার চরিত্র ছবিতে ঠিক ততটাই, যতটা মেহুল দেখতে পায়। তাই বাবাইদা ঠিক কী করেন, কোথায় চাকরি করেন, কাদের সঙ্গে মেশেন, সেসব স্পষ্ট নয়। কেবল বিধবা মাকে নিয়ে এক মধ্যবিত্ত সংসার তাঁর। বিয়ে করতে চান না, কারণ ইনটার্নশিপের টাকায় বিয়ে করা যায় না। আর মেহুল তো প্রেসিডেন্সিতে পড়া বা বেহালার সম্বন্ধ, সবটাই ভেস্তে দেয়। মনে মনে ভাবে, বাবাইদাতে কেবলমাত্র তারই অধিকার। এমন সময়ই এক দোলের দিনে মেহুল জানতে পারে, বাবাইদার ভালবাসার কথা। ডায়েরিতে জীবনানন্দের কবিতা পড়ে মেহুল যে ভেবেছিল তার জন্যই ঐ লাইনগুলো লিখেছে বাবাইদা, তা এক ঝটকায় মিথ্যে হয়ে যায়। মেহুল গুটিয়ে নেয় নিজেকে। বাবাইদার বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে, ফোন ধরে না। নিজেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আটকে ফেলে সে। তারপর যেদিন মেহুল ৮৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে পরীক্ষায় পাশ করে, বাবাইদা সেদিনই আত্মহত্যা করেন। তার আগে অবশ্য মেহুলের হাতে একটা চিঠি দিয়ে যান বাবাইদা। সে চিঠি পরীক্ষার চাপে মেহুলের পড়া হয় নি। বাবাইদা যখন মৃতদেহ হয়ে পাড়া দিয়ে লরি চেপে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন সেই চিঠি খুঁজে বের করে মেহুল। এখানেই সিনেমার বিরতি।

বিরতির পরের গল্পই আসলে পরিণীতার কাহিনি। সেখানেই গল্পের টুইস্ট। সঙ্গত কারণেই তা বলা যাবে না। কিন্তু কতগুলো প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ওঠে।

১. যে ঘটনায় বাবাইদা জড়িয়ে পড়েন, সেখান থেকে তো তিনি পরিত্রাণই চাইছিলেন। মেহুলকে চিঠি লেখার পরেও ৩ মাস তিনি কেনই বা বসে রইলেন আর ঠিক মেহুলের রেজাল্ট বেরনোর দিনটাকেই কেন আত্মহত্যার দিন হিসাবে বেছে নিলেন, তা ঠিক বোঝা গেল না।

২. ধর্ষণের অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে থাকলে, সাধারণভাবে অন্ততপক্ষে তাঁর ১৫ দিনের পুলিস হেফাজত এবং সেরকম দুঁদে উকিল না হলে তিন মাসের জেল হেফাজত পর্যন্ত হয়ে থাকে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি আরও বড়। সেখানে ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যেই অভিযুক্ত কীভাবে বাড়িতে চলে আসতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

এই দুটো প্রশ্নকে সিনেম্যাটিক লাইসেন্স দেওয়া কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ ছবির ইমোশনাল কানেক্ট খুবই ভাল। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী মেনস্ট্রিম জনারে ভাল গল্প বলায় সক্ষম। শুভশ্রী ভাল অভিনেত্রী। চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। এ ছবি মেহুলেরই। তাই প্রায় সব সিনেই শুভশ্রী আছেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিই এ গল্পের মূল গতি। তিনি সহজেই দর্শকদের টেনে নিয়ে চলেন। মেহুলের আনন্দ-দুঃখ, হতাশা, রাগ, অভিমান, প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধে ভাসতে ভাসতে চলেন দর্শক। সেখানে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। ঋত্বিক চমত্‍কার প্রেমিক – বনলতা সেন বলেন, বিজ্ঞান পড়ান, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে কলেজে বক্তৃতা দেন, পাড়ার কৃতী ছাত্র, মাথার সামনের চুল একটু কমে গেলেও গভীর চোখে আবেদন আনতে জানেন। তাই এ ছবিতেও ঋত্বিককে দর্শকের ভাল লাগবেই। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে গৌরব চক্রবর্তী মানানসই। তবে ক্যামিও হিসাবে দাগ কাটেন আদৃত রায়। ভাল অভিনেতা। সহ পরিচালনার কাজ করেছেন বেশ কয়েক বছর। তাই ক্যামেরাটি তাঁর কাছে জলভাত।

ছবির গান আগেই হিট। আবহসঙ্গীতে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত যথাযথ।হল থেকে বেরনোর সময়ে মেহুলের জন্য ‘প্রাণ দিতে চাই’ গাইতে গাইতে বেরোতে ইচ্ছে করবে, নাকি বাবাইদার জন্য!

আরও পড়ুন- ব্যর্থতা সামলানোর সাগা- ছিঁছোড়ে

.