Primary TET Movement : টেট ইস্যুতে প্রতিবাদে বিশিষ্টরা, সরব সৃজিৎ-অনির্বাণ থেকে অপর্ণা

চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে কুরুক্ষেত্র করুণাময়ী। মঙ্গলবার, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তাঁদের দাবি খারিজের পর আমরণ অনশন শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের বিক্ষোভ আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। আর এরপরই মধ্যরাতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিস। বলপ্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের তুলে দেওয়া হয়। টেনে হিঁচড়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে অসুস্থও হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন।পুলিস প্রশাসনের এমন আচরণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, সুদীপ্ত চক্রবর্তীর মতো বুদ্ধিজীবীরা। 

Primary TET Movement : টেট ইস্যুতে প্রতিবাদে বিশিষ্টরা, সরব সৃজিৎ-অনির্বাণ থেকে অপর্ণা

Primary TET Movement, অনসূয়া বন্দ্যোপাধ্যায় : করুণাময়ীতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন পুলিস যেভাবে বলপ্রয়োগ করে তুলে দিয়েছে তা নিয়ে এবার প্রতিবাদে মুখর হলেন বুদ্ধিজীবীরা।  পুলিস প্রশাসনের এমন আচরণে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, সুদীপ্ত চক্রবর্তীর মতো বুদ্ধিজীবীরা। চাকরিপ্রার্থীদের পুলিস যেভাবে তুলে দিয়েছে, সেটা অসাংবিধানিক, এই দাবিতে ঘটনার নিন্দা করে একটি ডেপুটেশনে সই করেছেন বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী। আবার কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়াতেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। 

ঘটনার প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবীদের একাংশ যে ডেপুটেশন জমা দিতে চলেছেন, তাতে বলে হয়েছে, 'সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি যে অনশনরত চাকরি প্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য কীভাবে বিধাননগর পুলিস বলপ্রয়োগ করে তাদের আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করেছে। এই ঘটনাকে আমরা ধিক্কার জানাই এবং পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে  মনে করি।  ১৪৪ ধারা বলবৎ করার আদেশ দিতে গিয়ে মাননীয় বিচারক মন্তব্য করেন, "পুলিশ কি পাওয়ার লেস?"  এই মন্তব্য অসাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিক সুরক্ষার বিরোধী বলে মনে করি। অবিলম্বে সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে এই জটিলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের যাতে না করা হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করছি।'

বুদ্ধিজীবীদের এই চিঠিতে সই করেছেন, ড: বিনায়ক সেন, অপর্ণা সেন, কুণাল সরকার, বিভাস চক্রবর্তী,  সুমন মুখোপাধ্যায়, সুজন মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় রেশমী সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়।

পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা

ঘটনা প্রসঙ্গে Zee ২৪ ঘণ্টার তরফে যোগাযোগ করা হলে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য জানান, 'কোন যোগ্য লোক প্রাপ্য পাচ্ছেন এই রাজ্যে, এই দেশে, যে আজ হঠাৎ পাবে! এতো দীর্ঘ ইতিহাস। যাঁদের প্রতিবাদ করার তাঁরা করছেন। যাঁদের সংবিধানের উপর আশ্বাস আছে, তাঁরা একভাবে প্রতিবাদ করছেন, যাঁদের নেই তাঁরা আবার আরেকভাবে করছেন। এই যে শিল্পীরা যাঁদের বুদ্ধিজীবী বলে গালি দেওয়া হয়, তাঁরা ধিক্কার জানাচ্ছেন। এবার তাঁরা ধিক্কার খাবেন। এইভাবেই এক অন্যায়ের দিকে সাঁতার দিতে দিতে আরেক অন্যায়ের দিকে চলে যাবো। আর কোট দিতে থাকব। পুলিসের একটা লাঠি একজনের গায়ের পড়া, আর কোট দেওয়া, এই যে দূরত্বটাই আমাদের সমাজের গ্যাপ। আমারা কোট দিতেই থাকব কারণ, আমাদের কাজ থিয়েটার, সিনেমা, এটা তো আর যথেষ্ট হচ্ছে না। আমাদের কোট দিতে হবে, তাতে কেউ সমর্থন করবেন, কেউ করবেন না। এটা পুরোটাই একটা প্রক্রিয়া। তবে কোনও বিশিষ্ট মানুষ হিসাবে নয়, সাধারণ একজন মানুষ হিসাবেই চাইব যোগ্যরা প্রাপ্য সম্মান পাক। যেন কোনও অন্যায় না হয়। এমন কোনও সরকার যেন না থাকে। সব জায়গায় যেন এমন সরকার থাকে যাঁরা যোগ্য, পিছিয়ে পড়া মানুষকে আলো দেখাবেন। যে চিঠিতে সই করেছি, তাতে এই ঘটনাকে ধিক্কার জানানো হয়েছে। তবে অসাংবিধানিক ঘটনা এই প্রথম নয়। কালকের যে ঘটনা, তার শুরুও কালকে রাতে নয়। এটা যতদিন না পিপলস সোসাইটি সমস্ত এই ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে গর্জে উঠবে এটা ততদিন চলবে। এটা তো আজকের ঘটনা। এখন চাকরিপ্রার্থীদের লাঠি নিয়ে কথা বলব, দুঘণ্টা পর সিনেমা নিয়ে বাইট দেব। সেই সমাজে এমনই হবে। তবে যে চিঠিতে সই করেছি, তাতে সহমত বলেই করেছি। সহমত না হলে সই করতাম না।''

পরিচালক, অভিনেত্রী অপর্ণা সেন ট্যুইটারে লেখেন, 'অনশণকারীদের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে তৃণমূল সরকার! অহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করা হল কেন? সরকারের অনৈতিক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করছি!' অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র লেখেন, 'এরাজ্যে পড়াশোনা করে যে, এরাজ্যে চাকরি পায়না সে, বরং পুলিসের গাড়়ি চড়ে সে।'

পুলিসের ভূমিকা নিয়ে ট্যুইটারে তীব্র নিন্দা করেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। নিন্দা করেছেন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়।

পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ঘটনার তীব্র নিন্দা করে নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন, 'পথে রক্ত, দেওয়াল তবু নীলসাদায় রাঙে, চোর পুলিস হাত মিলিয়ে আন্দোলন ভাঙে।' এবিষয়ে Zee ২৪ ঘণ্টাকে ফোনে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় জানান, 'আমরা একটা অন্ধকারের মধ্যে বাস করছি, অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। গতকাল যেভাবে চাকরিপ্রার্থীদের রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হয়ছে। যে অশালীনভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজকে সকালে বামপন্থী যুব সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের কর্মী নেতাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া উচিত। পুলিসের ভূমিকা নক্করজনক। পুলিস এতোদিন ধরে চাকরি চুরির হদিশ করতে পারেনি। সেই পুলিস গণতান্ত্রিকভাবে অবস্থান করছে এমন একটা জমায়েতে এই অত্যাচার চালাতে পারে, তাই অবিলম্বে পুলিসমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। শিক্ষা, সংস্কৃতি বিরোধী একটি প্রশাসন চলছে। তার শুধু দুষ্কৃতীদের আস্কারা দেয়, আর কোনও ভূমিকা নেই। তারা শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বেচ্ছাচার করছেন, খুব শীঘ্রই এঁরা পদচ্যুত হবেন বলে আমার বিশ্বাস। বুদ্ধিজীবীদের পথে নামার সময় এসেছে। অনেকে নেমেছেন, অনেকে নামেননি। যাঁরা নামেননি তাঁরাও এবার নামবেন বলে আমার বিশ্বাস।

খানিকা ব্যঙ্গ করে অভিনেতা মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, 'আরে প্রায় সকলেই দেখছি খুব উত্তেজিত...। কী হয়েছে, কিচ্ছু হয়নি সব ছোট ঘটনা। সাজানো ঘটনা চক্রান্ত...। অত উত্তেজনা ভালো নয়। দুটো কবিতা হয়ে যাক। আপনারা কিন্তু কিচ্ছু দেখেননি।' অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী লেখেন, 'শান্তিপূর্ণ অবস্থান এ ১৪৪ ধারা কেন জারি হবে ?শিক্ষিত, পাশ করা চাকরিপ্রার্থী দের অসভ্যের মত মারধর ই বা কেন করা হবে ?? আন্দোলন ভেস্তে দেবার জন্য গভীর রাত টা বেশ ভালো সময় না ??? যা খুশি তাই হচ্ছে !যা ইচ্ছে তাই !!' অভিনেত্রী সোহিনী সরকার লেখেন, 'এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানি, তত কম মানে।' প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পরিচালক শৌভিক কুণ্ডু।

মঙ্গলবার, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তাঁদের দাবি খারিজের পর আমরণ অনশন শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের বিক্ষোভ আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। আর এরপরই মধ্যরাতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিস। বলপ্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের তুলে দেওয়া হয়। টেনে হিঁচড়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে অসুস্থও হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে বহু মহিলাও রয়েছেন। আর এরপরই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। 

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.