তিক্ত স্মৃতি, নানা পটেকরের অবিস্মরণীয় অভিনয়
ছবির নাম আর পোস্টার দেখলেই স্মৃতি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে যন্ত্রণা, রাগ, প্রতিহিংসার তেতো স্বাদ। ওই অভিশপ্ত দিনে এই-ই তো ছিল বর্তমান নিউজ ক্যামেরার সামনে। জীবন্ত সিনেমার মতো ঘটে চলেছিল সেই নির্বিচার হত্যালীলা। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া পেরিয়ে তাজ মুম্বইয়ে ঢুকে পড়েছিল পাকিস্তানি দুষ্কৃতীরা।
ছবির নাম: দ্য অ্যাটাকস ২৬/১১
রেটিং: **1/2
ছবির নাম আর পোস্টার দেখলেই স্মৃতি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে যন্ত্রণা, রাগ, প্রতিহিংসার তেতো স্বাদ। ওই অভিশপ্ত দিনে এই-ই তো ছিল বর্তমান নিউজ ক্যামেরার সামনে। জীবন্ত সিনেমার মতো ঘটে চলেছিল সেই নির্বিচার হত্যালীলা। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া পেরিয়ে তাজ মুম্বইয়ে ঢুকে পড়েছিল পাকিস্তানি দুষ্কৃতীরা। লিওপোল্ড ক্যাফে , স্টেশনেও চলেছিল অকথ্য গোলাগুলি, মানুষের লাশ। এমন একটি ঘটনা যার মূল অভিযুক্তকে শাস্তি দিতে দিতেই কেটে গেল চার বছর। তা-ও নানা রাজনৈতিক রং-এ রাঙিয়ে।
প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন রাম গোপাল ভার্মা। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের সঙ্গে তিনিও গিয়েছিলেন তাজ হোটেলের অন্দরমহল পরিদর্শনে। তখনও বিপদের ঘোর কাটেনি। দেশবাসীর মনে প্রতিহিংসার পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ। তার মধ্যেই ছবির খোরাক খোঁজার এই নির্লজ্জ প্রয়াসকে ছিছিক্কার, ধিক্কার জানিয়েছিল বলিউডও। কসাভের ফাঁসির ঘটনার পরে পরেই রামগোপাল ভার্মা ফ্যাক্টরি বাজারে ছেড়েছিলেন, কিংবা আর একটু সংযম রেখে বলা ভাল, ইউটিউবে আপলোড করেছিলেন সাত মিনিটের ট্রেলর। আম ট্রেলরের থেকে এটির পার্থক্য এই যে, তিনি ছবির শুরুর থেকে সাত মিনিটের আনএডিটেড ভার্সানটাই ট্রেলর হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। আরও উল্লেখযোগ্য, কসাভের ফাঁসির পরে মুক্তি পেল এই ছবি। সত্যি বলতে কী, এটাও অনেকটাই স্ট্র্যাটেজিক মুভ। আলাদা করে ট্রেলর বানাননি। উত্তেজনার সঞ্চার তখন থেকেই হয়েছিল। হলফ, করে বলা যায়, এ ছবি দর্শক দেখতে এসেছিলেন সম্পূর্ণ অন্যরকম মানসিকতা নিয়ে। সাম্প্রতিককালে রিলিজ হওয়া ডিপার্টমেন্ট, ভূত রিটার্নস কিংবা রাম গোপার ভার্মা কি আগ-এর মতো অখাদ্য ছবির স্তুপকে বিস্মৃত হয়ে।
অর্থাত্, রামু এযাত্রা সুযোগটা ভালই পেয়েছিলেন। যাঁরা এই রিভিউ পড়ছেন, তাঁদের অনেকেরই জানা নেই যে, পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটের সিলেবাসে রাম গোপাল ভার্মাকে নিয়ে আলাদা একটি চ্যাপ্টারও আছে। একমাত্র যে সম্মান সত্যজিত্ রায়, ঋত্বিক ঘটক, আকিরা কুরোসাওয়া-র মতো বরেণ্য পরিচালকদের দেওয়া হয়। হাসির ব্যাপার নয়, এর পেছনে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নিশ্চয়ই আছে। রামুই হচ্ছেন বলিউডের প্রকৃত গ্যাংস্টার মুভি জঁর-এর জনক। ইতিপূর্বে যে-সব ছবি গ্যাংস্টার মুভি বলে চালানো হত তার কোনওটাই এই রেঞ্জের ধারেকাছেও নয়। ভারতীয় দর্শকের মতো আকণ্ঠ রোম্যান্টিক দর্শককে নতুন ধারার ছবির সঙ্গে পরিচয়ের ধারাপাতটা শিখিয়েছিলেন রামুই। যাই হোক, ছবির প্রথম সাত মিনিটেই ঢুকে পড়েছেন মূল বিষয়ে। নবাগত অভিনেতা সঞ্জীব জয়সোয়ালের মুখের গড়ন, চোখের চাহনি, পুরোটাই কসাভকে মনে পড়ায়। কাস্টিং-এ ফুলমার্কস। মোট কথা, ছবি শুরুর আগে যে-কটা গ্যাম্বল খেলার রিস্ক নেওয়া যায়, তাকে হান্ড্রেড পারসেন্ট ব্যবহার করেছেন তিনি। কোনও তলানিই গুলিয়ে দেখতে বাকি রাখেননি। মুশকিল হল অন্যখানে।
প্রহার ছবির পর নানা পটেকরকে আবার দেখা গেল এক হৃদয়ে দাগ ধরানো চরিত্রে। এই দাগ এত গভীর যে সহজে মুছে ফেলার নয়। বলিউড ছবি বহু দিন নানার ম্যাজিক টাচ থেকে বঞ্চিত ছিল। একধরনের অভিনয় আছে, যা শুধু চরিত্রের চামড়াটা গায়ে চড়িয়ে নিলে হয় না, হয় না চরিত্রের মাংসের ভেতরে ঢুকে গেলেও। এই বিরলতম গোষ্ঠির অভিনয় যা তৃতীয় কোনও স্থায়ী অভিঘাত তৈরি করে। পুলিশ কমিশনার অফ ক্রাইম ব্রাঞ্চ রাকেশ মারিয়ার চরিত্রে নানা সেই কাজটাই করেছেন নানা। এমনও হতে পারে, এর পর থেকে নানা ঘরে-বাইরে এই চরিত্রের নামেই পরিচিত হতে পারবেন।
ছবির ক্যামেরাওয়র্ক নিরাশ করবে। এখানেও অনেক বেশি প্রস্তুতির দরকার ছিল। অতিরিক্ত প্যানিং কখনও কখনও বড্ড বেশি চোখ লাগে। ফিল্মমেকার হিসেবে রামু এই ছবির জন্য বিশেষ স্কোর করতে পারবেন না, কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে যতটা করবেন। গল্পে খুব জলদি ঢুকেছেন, কিন্তু গল্পটাকে সত্যিই কোন দিকে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করেননি। ছবিতে রিসার্চের ছাপ স্পষ্ট। কোথাও কোথাও ডকুমেন্টরির চেহারা নিয়েছে। আবার ডকুমেন্টরির সজীবতা না থাকায়, ছবির গতি অস্বাভাবিক শ্লথ হয়ে গিয়েছে। যে-ঘটনাগুলো বার বার নিউজ বুলেটিনে দেখা, খবরকাগজে পড়া, তর্কে-বিতর্কে চর্বিত, সেটা থেকে নতুন কোনও দৃষ্টিকোণ বা প্রত্যাশা কোনওটাই দিতে পারেননি তিনি। ডকুছবি আর ফিকশনের ভাষা আলাদা। দুটোকে মেলানোর চিন্তা করাই ভুল। ঐতিহাসিক ছবি হওয়ার সব রসদ হাতে পেয়েও, চান্সটা মিস করেছেন রামু। আশাহত হতেই হয়!