জনের সেরা অভিনয়, সানির সেরা আইটেম
ছবির নাম- শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা রেটিং- ***1/2
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা
রেটিং- ***1/2
প্রথম প্রথম অবশ্য মনে হচ্ছিল, শুটআউট অ্যাট লোখন্ডওয়ালারই মাসতুতো ভাই হবে! অপূর্ব লাখিয়ার সেই ছবিটা যতটা গর্জেছিল, ততটা বর্ষায়নি। এমনিতেই গ্যাংস্টার ছবি বানাতে গেলে বলিউডের পরিচালকেরা তিনবার খাবি খান। প্রথমবার টার্গেট অডিয়েন্স ঠিক করতে গিয়ে, দ্বিতীয়বার রামগোপাল ভার্মা ফ্যাক্টরির পতনের জ্বলন্ত উদাহরণ দেখে, তৃতীয়বার ছবি রিলিজের পর বক্সঅফিস কালেকশন দেখে। সেদিক থেকে সঞ্জয় গুপ্তাকে একজন আত্মবিশ্বাসী পরিচালকই বলতে হবে। বলিউড ছবির গ্যাংস্টার বর্গে নতুন সংযোজন সঞ্জয় গুপ্তার শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা।
কেন্দ্রীয় চরিত্র মান্য সারভে, সত্তর দশকে মুম্বইয়ের ত্রাস হিসেবে পরিচিত। সেই অর্থে দাউদ বা ছোটা রাজনের মতো কুখ্যাত নন। তবুও এই গল্পের সিলেকশন সত্যিই আলাদা প্রশংসা দাবি করে। প্রথমত এই কাহিনি অনেকেরই অজানা। দ্বিতীয়ত, এক সাধারণ পরিবারের মেধাবী ছাত্রের তছনছ হয়ে যাওয়া স্বপ্নের ওপর ভর করে এই ছবির কাহিনি নির্মাণ। দুটি দিকই সমানভাবে কৌতূহলের জোগান দেয়। ছবি বানানোর আগে গবেষণাই শুধু করেননি সঞ্জয়, অত্যন্ত নিপুণভাবে একটি গ্যাংস্টার ছবি বানিয়েছেন প্রায় রোম্যান্টিক ছবির কায়দায়। একঝাঁক তারকা, তিন তিনটে আইটেম সং, দুর্ধর্ষ অ্যাকশন সিকোয়েন্স, রক্তাক্ত প্রেমকাহিনি- সব উপকরণই এক সম্পৃক্তমাত্রায় মিশিয়েছেন পরিচালক। শুধু তাই নয়, ছাই উড়িয়ে তিনি যে কাহিনি বের করেছেন তা অনেকাংশেই বাস্তবের মুম্বই পুলিসবাহিনীর উদ্দেশ্যে এক নিঃশব্দ তির্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়। এই পুলিসেরই অর্বাচীনতা জন্ম দেয় সমাজবিরোধীকে, আবার এই পুলিসেরই সাজানো এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় সেই সমাজবিরোধীর। পুলিসের ঘরে ওঠে সম্মানের স্বর্ণপদক, উড়ে পুড়ে নষ্ট হয়ে যায় এক মেধাবী সাধারণ পরিবারের ছেলে। যে ছেলেটি সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছিল সুস্থ জীবনের, ভাল চাকরি, বউ-বাচ্চা-মায়ের সঙ্গে
দায়িত্বশীল সুন্দর ভবিষ্যতের। আরও গভীরে দেখলে, আইনের ছাত্র মনোহর সারভে থেকে সমাজবিরোধী মান্য সারভে হয়ে ওঠার গল্প আসলে পুলিসের হাতে তৈরি করা কাহিনি।মান্য সারভের ভূমিকায় জন আব্রাহাম দেখার মতো। তর্কাতীতভাবে জীবনের সেরা অভিনয়টি করে দেখিয়েছেন জন। কঙ্গনা রানওয়াতের সঙ্গে মানিয়েছেও ভাল। রোম্যান্টিক দৃশ্য থেকে শয্যাদৃশ্য, সবেতেই দুজনের ছন্দ মেলে। কঙ্গনা-জন জুটির যৌন আবেদনে এমন একটা আধুনিকতা আছে যা এখনকার বলিউড ছবির বেশ উপযোগী। পুলিস অফিসারের চরিত্রে অনিল কপূর বেশ পরিণত। বার বার হলিউড ছবিতে অভিনয় করার সুবাদে নিজের শৈল্পিক উচ্চতা অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি। প্রায় অর্ধমৃত জনের সঙ্গে পুলিস ভ্যানের মধ্যে কথোপকথনের দৃশ্যে বোঝা যায়, সহশিল্পীর সঙ্গে অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি জমানোর ক্ষেত্রেও তাঁর বিকল্প এখন বলিউডে মেলা ভার। সঞ্জয় গুপ্তার একটা বড় গুণ, তিনি প্রত্যেক অভিনেতার কাছ থেকে সেরা অভিনয়টা না হোক, নিজস্ব অভিনয়টা বের করে নিতে পারেন। কাজেই বাস্তব আধারিত চরিত্র হলেও কোনও চরিত্রই আরোপিত নয়। তাই এই ছবিতে তুষার কপূর, অনিল কপূর, সোনু সুদ ও মনোজ বাজপায়ীর চরিত্রগুলো জীবন্ত মনে হয়। সংলাপে অবশ্য কাব্যিক ঢং পাওয়া যাবে। যে ভাষায় আমরা কথা বলি না। সত্তর দশকেও হয়তো বলা হত না। তবে ছবির ইন্টারভ্যাল পর্যন্ত দেখার পর এটা আর ওভার-দ্য-টপ লাগে না। বেশ অভ্যেস হয়ে যায়, গল্পের গতির টানেই।
আসি আইটেম ডান্সে। সানি লিওন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সফি চৌধুরি। প্রতিযোগিতায় সানিই এগিয়ে। আইটেম না থাকলে ক্ষতিবৃদ্ধি হত কি না সেই আলোচনায় না গিয়েই বলি, হালফিলের ছবিতে এই প্রথম সার্থকভাবে আইটেম পরিবেশন করলেন সানি `লায়লা`। পীনোন্নত বক্ষ ও ক্ষীণ কটিতটের এমন ছন্দোবদ্ধ শরীর এ যাবত্ আর দ্বিতীয়টি দেখা যায়নি। ভারতীয় ভাস্কর্য যে-অপ্সরীর সন্ধানে ছিল, তারই জীবন্ত চিত্ররূপ বোধহয় এটাই। সৌন্দর্য আর যৌন আবেদনের এমন অপটিমাম ব্যালেন্স কিছুতেই মিস করার বিলাসিতা করবেন না। বড়পর্দা ছাড়া বোঝা অসম্ভব! সর্বশেষ হাততালিটা অবশ্যই প্রাপ্য কোরিয়োগ্রাফারের। পুরনো বোতলে নতুন মদ না ভরে, সম্পূর্ণ নতুন কিছু মিনিংফুল স্টেপস দিয়েছেন। নাচের দৃশ্যগুলো মন দিয়ে দেখলেই বুঝবেন কেন বলা হল এটা!