সত্যি, দেখার আগ্রহটাই চলে গেল

শর্মিলা মাইতি ছবির নাম: সত্যগ্রহ রেটিং: **

Updated By: Sep 4, 2013, 04:47 PM IST

শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: সত্যগ্রহ
রেটিং: **
১৯৮৪ সালে দামুল থেকে শুরু। এমন একটানা রাজনৈতিক বর্গের ছবি বানিয়ে চলা মোটেই সহজ কাজ নয়। পরিচালক প্রকাশ ঝা সেই কঠিন কাজটাই করে চলেছেন পরের পর ছবিতে। তফাত শুধু এই, জটিল রাজনীতির মারপ্যাঁচ বড় বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে। প্রায় একে চন্দ্র দুয়ে পক্ষ-এই প্রেডিক্টেবল ধারাপাতেই চলছে তাঁর ছবি। অপহরণ, রাজনীতি, অরক্ষণ থেকে সত্যগ্রহ- সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে।

২০১১ সালে অন্না হাজারের সত্যগ্রহ আন্দোলন ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল সরকারের। দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে হাজারে হাজারে মানুষ স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছিলেন এই আন্দোলনে। প্রকাশ ঝা যদিও প্রোমোশনের সময়ে কোনও সত্য ঘটনা অবলম্বন করেননি, এমনটাই জোরগলায় দাবি করেছেন। কিন্তু ছবিতে যা দেখা গেল তাতে মনে হল, শুধু অন্না হাজারে-অরভিন্দ কেজরিওয়াল জুটিকে অনুসরণ করাই নয়, এমনকী খবরকাগজের কাটিংগুলোও প্রায় কণ্ঠস্থ করেছেন! কেউ যদি টাইম মেশিনে চড়ে ২০১১ সালের সেই সময়টায় ফিরে যেতে চান, সহজেই পারবেন। তাতে দোষের কিছু নেই। অন্না হাজারে যেভাবে একটি গোটা দেশের সত্তা জাগিয়ে দিতে পেরেছিলেন অতি অল্প সময়ের মধ্যেই, তা অবিস্মরণীয়। স্কুলের ছোট্ট বাচ্চাটিও অনুপ্রাণিত হয়েছিল তখন, অহিংসার মন্ত্রে। প্রকাশ ঝা স্বীকার করুন বা না-ই করুন, এই ঘটনা অবিলম্বে চলচ্চিত্রায়িত করার দায়িত্ব কারওকে নিতেই হত।

আবার কেন্দ্রে বিগ বি। সর্বকালের সর্বোত্তম আকর্ষণ। স্ক্রিনে সবার প্রিয় দাদুজি। অন্না হাজারের প্রতিরূপ। সঙ্গী অজয় দেবগণ। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আদলে তৈরি। আছেন করিনা কপূর, সাংবাদিকের ভূমিকায়। আছেন মনোজ বাজপায়ী। বহুদিন পর অন্য ধরণের চরিত্রে অমৃতা রাও। এক বিধবা মহিলা যিনি এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন জীবনের নানা ওঠাপড়ার পরে। সব মিলিয়ে তারকা-খচিত একটি ঝলমলে অভিজ্ঞতা। যেটা প্রকাশ ঝা-এর ট্রেডমার্ক। কিন্তু সুর চড়া করে বাঁধলে তো খাদে নামা বড়ই কঠিন! ঝলমলানির আতিশয্যে বিষয়ের গুরুত্ব গেল তলানিতে। বিগ বি সহ অন্য তারকারা এত চড়া দাগের স্ক্রিপ্টে চড়া সুরে অভিনয় করেন যে গাম্ভীর্যটাই খুঁজে পাওয়া গেল না। বিরাট কিছু প্রত্যাশা বেঁধে দিয়ে বড় সরলীকৃত, তরলীকৃত সমাপ্তির পথে এগিয়ে গেল।
কী চেয়েছিলাম আমরা সত্যাগ্রহ থেকে? মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ যা একদিকে ধিক্কৃত, অন্যদিকে পরম পূজনীয়। রাজনীতির রেখায় ও লেখায় অনেকখানি বিকৃত এই ব্যক্তিত্ব যে একদিন হেঁটে বেড়াতেন এই পৃথিবীরই মাটিতে, ভাবলে ভয় হয়! অহিংসা আসলে কী বস্তু সেটাই প্রায় আশিভাগ শিশু বুঝে উঠতেই পারেননি। প্রকাশ ঝা-এর কাঁধে সত্যিই ছিল অনেক বড় দায়িত্ব। বড় হেলায় হারালেন, এটুকুই বলা যায়। ছবির মিউজিক বা ক্যামেরা আলাদা কোনও মাত্রা যোগ করতে পারেনি। এমন সরলীকৃত স্ক্রিপ্ট এখনকার দিনে ফিল্ম স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও বানান না। সত্যগ্রহ দেখার আগ্রহটাই চলে গেল, এত মনোযোগরহিত একটি উপস্থাপনায়।

.