টানটান উত্তেজনা, সাসপেন্সে ভরা 'নেটওয়ার্ক', না দেখলে মিস করবেন

রণিতা গোস্বামী

Updated By: Jun 30, 2019, 11:16 AM IST
টানটান উত্তেজনা, সাসপেন্সে ভরা 'নেটওয়ার্ক', না দেখলে মিস করবেন

রণিতা গোস্বামী

তথাকথিত প্রেমের গল্প, নাচ-গানে ভরপুর বাণিজ্যিক ছবি দেখতে দেখতে বাংলা সিনেমার দর্শকদের একটি অংশ হয়ত অনেকদিন আগেই হাঁপিয়ে উঠেছেন। অনেকেই অন্যধরনের গল্পের উপর ছবি দেখতে আগ্রহী। আর সেকারণেই হয়ত সাহিত্য নির্ভর বাংলা ছবি, রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা ছবি কিংবা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়রা যে আঙ্গিকের ছবি বানান, সেধরনের বাস্তবধর্মী ছবির দিকেই বেশি ঝুঁকছেন বাংলার সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের বড় একটা অংশ। আবার 'রসগোল্লা', 'রেনবো জেলি', 'সহজ পাঠের গপ্পো'র মতো অন্যধারার ছবিও দর্শকদের মন কাড়ছে। তবে এসবের মাঝেই নতুন পরিচালক সপ্তাশ্ব বসুর ছবি 'নেটওয়ার্ক' মুক্তির আগে থেকেই আলোচনায় উঠে আসে।     

বাংলা দর্শকদের কাছে সব্যসাচী চক্রবর্তী-শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের জুটি বহু পুরনো। এই জুটির কথা ভাবলেই একসময় দূরদর্শনের জনপ্রিয় সেই ফেলুদা-তোপসে সিরিজের কথা মনে পড়ে। বহু পুরনো এই জনপ্রিয় জুটির পর্দায় ফেরাকে কেন্দ্র করেই দর্শকদের মনে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। পরে ছবির ট্রেলার প্রকাশ্যে আসতেই তা দর্শকদের মনে দাগ কাটে। অবশেষে ২৮ জুন শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে শাশ্বত-সব্যসাচী জুটির 'নেটওয়ার্ক'। কেমন হল সেই ছবি?

গল্প ও আলোচনা

একটা সময়ে প্রচুর নাম যশ ছিল পরিচালক অভিজিৎ গাঙ্গুলির। তবে আজ আর তাঁকে দেখলে কেউ চিনতেই পারে না। পার্টিতে এধরনের আলোচনা কানে যেতেই হঠাৎই মনটা খারাপ হয়ে গেল পরিচালক, প্রযোজক, টিভি শো প্রস্তুতকার অভিজিৎ গাঙ্গুলির (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)। এসবের মাঝে আবার হঠাৎই জানতে পারেন তিনি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। জীবনের শেষবেলায় এসে শেষবারের মতো ভালো একটা সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করে ফেলেন। 'নেটওয়ার্ক' এর গল্পের শুরু হয় পরিচালক অভিজিৎ গাঙ্গুলির সেই হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার লড়াই দিয়েই। তবে যে কোনও ভালো কাজে বাধা আসা বোধহয় অবশ্যম্ভাবী। আর এক্ষেত্রে অনেকসময়ই দেখা যায় ঘর শত্রু হয়ে ওঠেন বিভীষণরাই।

রাজ, শ্রেয়ার ( ইন্দ্রজিৎ মজুমদার ও রিনি ঘোষ) মতো যে সমস্ত নতুনদের তাঁর নতুন ছবি 'সন্ধান'-এর কাজে সুযোগ দেন পরিচালক অভিজিৎ গাঙ্গুলি, তারাই পরিচালককে পিছন থেকে ছুরি মারে। হাত মেলায় বিজনেস টাইকুন তথা প্রযোজক অরিন্দম চক্রবর্তীর মতো ধুরন্ধর, প্রভাবশালী লোকের সঙ্গে। চিত্রনাট্য চুরি করে অরিন্দম চক্রবর্তীর ছবিতে রাতারাতি তারকা হয়ে যায় রাজ ও শ্রেয়া। অভিজিৎ গাঙ্গুলির 'সন্ধান'-এর গল্প নিয়েই তৈরি অরিন্দম চক্রবর্তীর ছবি 'নিখোঁজ' আগেই মুক্তি পেয়ে যায়। সিনেমার প্রথম হাফে এভাবেই এগোয় 'নেটওয়ার্ক'-এর গল্প।

তবে ছবির সব আকর্ষণ লুকিয়ে রয়েছে দ্বিতীয় হাফে। জীবনের সায়াহ্নে এসে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তাঁর। কিছুদিনের জন্য অজ্ঞাতবাসে চলে যান তিনি। তবে 'অজ্ঞাতবাসের পরেই আসে কুরুক্ষেত্র' শুরু হয় প্রতিশোধের খেলা। প্রতিশোধ নিতে টিভি চ্যানেলে সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে রিয়েলিটি শো 'Their Life' শুরু করেন অভিজিৎ গাঙ্গুলি। ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে শো। আর এর মধ্যেই রয়েছে আসল খেলা। অনেকে সেলিব্রিটির মতো এই শোয়ের মাধ্যমেই সুন্দর করে বিছানো মাকড়সার জালে পা দেন রাজ ও শ্রেয়া। অদ্ভুত এই রিয়েলিটি শোতেই সমস্ত ষড়যন্ত্রের পর্দা ফাঁস হয়।

আর 'নেটওয়ার্ক'-এর সব রসদই রয়েছে এই রিয়েলিটি শো-তে। ছবির দ্বিতীয় হাফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে টান টান উত্তেজনা। কি জানি কী হয়? ভাবনা নিয়ে  'Their Life' দেখতে দেখতেই 'নেটওয়ার্ক' দেখে ফেলে দর্শক। 

অভিনয়

অভিনয়ের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, এই ছবির মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। চিত্রনাট্যের দাবি মেনে এই ছবিতে তাঁর অসামান্য অভিনয়ই এই ছবির ইউএসপি। তাঁর সঙ্গে সব্যসাচী চক্রবর্তী, ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় অনবদ্য। তাঁদেরকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন রিনি ঘোষ, ইন্দ্রজিৎ মজুমদার, সপ্তর্ষি রায়, রজত গঙ্গোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, দর্শনা বনিক, বিদ্যুৎ দাস, কার্তিকে ত্রিপাঠি, ঈশানি ঘোষ সহ অন্যারা।

চিত্রনাট্য, পরিচালনা, সঙ্গীত ও সম্পাদনা

NEO STUDIOS-এর প্রযোজনা নেটওয়ার্কের মূল ইউএসপি-ই হল এর চিত্রনাট্য। টানটান চিত্রনাট্যের জন্যই শেষপর্যন্ত দর্শকদের মধ্যে শেষপর্যন্ত উত্তেজনা ধরে রাখতে সফল 'নেটওয়ার্ক'। প্রথমবার ছবির পরিচালনাতে এসে 'নেটওয়ার্ক'-এর মাধ্যমে নজর কাড়তে সফল পরিচালক সপ্তাশ্ব বসু একথা হলফ করে বলা যায়। ছবিতে প্রসেনজিৎ চৌধুরীর সিনেমাটোগ্রাফি, অনির্বাণ মাইতির সম্পদনারও প্রশংসা না করলেই নয়। তবে সেভাবে মন কাড়তে পারলো না ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ।

তবে একটা কথা হলফ করে বলতে পারি 'নেটওয়ার্ক' এর মতো টান টান উত্তেজনায় ভরপুর অন্য স্বাদের বাংলা ছবি না দেখলে অনেকেই হয়ত অনেককিছুই মিস করবেন। বিশেষ করে সাসপেন্সে ভরা থ্রিলার দেখতে যাঁদের পছন্দ, তাঁদের মন কাড়বে শাশ্বত-সব্যসাচীর 'নেটওয়ার্ক'। সব মিলিয়ে এই 'নেটওয়ার্ক' ৫এর মধ্যে ৪ দেওয়া যাক।

.