দর্শক আরেকদিন আসতে চাইবেন কি?
ছবির নাম- আসবো আরেকদিন রেটিং- **
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- আসবো আরেকদিন
রেটিং- **
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় পেশায় ডাক্তার ছিলেন। অপূর্ব গল্প বলতে পারতেন। হাল আমলে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাড়কাঁপানো উপন্যাস অবলম্বনে যিনি এ বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ছবিটি পরিচালনা করছেন, তিনিও পেশায় ডাক্তার। কাজেই ডাক্তারবাবু কলম তুলেছেন ছবির কাহিনি লেখার জন্য, এমনটা ঘটনা হিসেবে নতুন নয়। শহরের বিখ্যাত ডাক্তার কল্যাণ বসুর লেখা মূল গল্পটি সমাজের কাছে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। লিভার প্রতিস্থাপন। মরণোত্তর চক্ষুদান যতটা প্রচারিত ও প্রচলিত, লিভার প্রতিস্থাপন ততখানি নয়। এ নিয়ে একটি শিক্ষামূলক ডকুছবি হতে পারত, কিন্তু ডাক্তারবাবু একটি পূর্ণদৈর্ঘের ছবি প্রযোজনাতেই হাত দিলেন।
এ ছবির প্রোমোতে কেন যে শুধুই আবির-স্বস্তিকার শয্যাদৃশ্যের ক্লিপিং, সেটা ছবির শেষে গিয়ে বলছি। কারণ, ছবির মূল বিষয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক নেই। খুব চেনা গল্পের ছক। তার মধ্যেই ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশনের একটি প্রচেষ্টা। আবির পাঞ্জাবি পরিবারের ছেলে। পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আর শখে গ্রুপ থিয়েটার করে। স্বস্তিকা বাঙালি। থিয়েটার করতে করতেই তাদের ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর সেই সম্পর্কের ডেভেলপমেন্টটা অসম্ভব দ্রুতগতিতে দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে গৌরব জন্মসূত্রে মুসলিম। বাঙালি হিন্দু পরিবারে তার বড় হওয়া। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় তার মায়ের ভূমিকায়। প্রেমিকার ভূমিকায় ঋদ্ধিমা। ঋদ্ধিমা ও গৌরব প্রমিসিং জুটি। অন-স্ক্রিন কেমিস্ট্রি দেখে মনে হয়, পরিচালকেরা এবার এদের নিয়ে ভাবতে শুরু করতে পারেন স্বচ্ছন্দে।
সব উপকরণই জোগাড় হল। যেটা চমক দেখাতো পারত, সেটা হল একটি অভিজ্ঞ রাঁধুনির হাত। পরিচালক অভিজিত্ দাশগুপ্ত গোটা ছবিকেই একটি মেগাসিরিয়ালের কায়দায় শুট করেছেন। বাড়ির দরজা সবসময়েই খোলা। যে-কেউ যখন তখন ঢুকে পড়ে সংলাপ বলতে শুরু করে দেয়। কড়া ডোজের মেলোড্রামা মিক্সচার। প্রথম থেকে শেষ অবধি একই সুরে বাঁধা। চোখের জল তেমন প্রয়োজন না হলেও, যেখানে সেখানে বইতে শুরু করে। স্ক্রিপ্টে যেটা খুব করুণভাবে মিসিং, সেটা হল সপ্রতিভতা। স্মার্টনেস। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নয়।
ছন্দোপতন হয় কলাকুশলীদের পারফরম্যান্সেও। আবিরের অভিনয় বেশ স্বচ্ছন্দ। কিন্তু দুর্বল সংলাপ তেমন কোনও মাত্রা যোগ করে না। স্বস্তিকার শয্যাদৃশ্য যেটুকু প্রোমোতে দেখা যায়, সেটুকুই। অভিনয়ের ব্যাপারে আরও অনেকটাই অনুশীলন দরকার ছিল। এই সীমিত পরিসরেই যাঁর অভিনয় দেখার মতো, এবং যেটা সব সময়ে সব ছবিতেই প্রমাণ করে এসেছেন, তিনি হলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। কোনও কথা না-বলেও অভিনয় করা যায়, সেটাই দেখালেন তিনি।
যেটি সবচেয়ে আশ্চর্যের, ছবির প্রোমোর সঙ্গে বিষয়ের এক অনতিক্রম্য ফারাক। শুধুই শয্যাদৃশ্যের একটুকরো তুলে নিয়ে প্রোমোশনের চেষ্টা করলেই কি দর্শক "আরেকদিন" দেখতে আসবেন? এতটা আত্মবিশ্বাসের অভাব, সত্যিই আশা করা যায় না।