চোখ খুলিয়ে দিল উপলব্ধির মহাবিশ্ব

শর্মিলা মাইতি ছবির নাম- আঁখো দেখি রেটিং- ****

Updated By: Apr 1, 2014, 04:29 PM IST

শর্মিলা মাইতি

ছবির নাম- আঁখো দেখি

রেটিং- ****

জীবনের প্রতিটি ধাপ এগিয়ে চলার, গন্তব্যে পৌঁছনোর। অন্তত বাজারচলতি মোটিভেশনাল বেস্টসেলারে তাই-ই লেখা থাকে বড় বড় অক্ষরে। হাউ টু উইন, হাউ টু অ্যাচিভ সাকসেস ইত্যাদি ইত্যাদি। কমবেশি আমরা সবাই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে প্রভাবিত হই। মাঝখান দিয়ে যে-নীরব সঙ্গী মাথা নিচু করে চলে যায়, সে আমাদের জীবন। আমাদের প্রতিদিনের পর্যাপ্ত উপলব্ধির বটবৃক্ষ। উচ্চাশা, স্বপ্নপূরণ, আকাঙ্খার তীব্রতার সংস্পর্শবিহীন, ভগবানের দান, যা আমরা প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত হেলায় হারাই।

এ ছবি এক জীবনের উপলব্ধির। এমন ক্ষুদ্র, যা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। এমন বৃহত্ যা আমাদের পার্থিব উপলব্ধির বাইরে। প্রথম কথা, সমালোচনা করতে গিয়ে একটাই সারসত্য চোখে ভাসে। এমন গভীর বিষয় নিয়েও দর্শকের মনোগ্রাহী ছবি বানানো সম্ভব। বেশিরভাগ সময়েই এমন স্পিরিচুয়াল ছবি চলে যায় মাথার উপর দিয়ে। ভাষা ও বিবরণের আধিক্যে আসল উদ্দেশ্যই যায় হারিয়ে। রজত কপূর যে বিরাট মহাকাব্য, অতি সরল, তরল করে বুঝিয়ে দিলেন, পরিচালক হিসেবে তাঁর জবাব নেই!

মানতেই হবে, বলিউড এখন শুধু পরিণতই নয়, বলিউড এখন উদার। তাই রজত কপূরের মতো পরিচালকদের এক গুচ্ছ থিয়েটার আর্টিস্ট নিয়ে মেনস্ট্রিম ছবি করতে গিয়ে অকূল পাথারে পড়তে হচ্ছে না। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাজেট তুলতে হচ্ছে না। তাই আমরা পোস্টারে, হোর্ডিং-এ আর রুপোলি পর্দায় যে মুখটি দেখতে পাচ্ছি শাহরুখ-আমির রণবীরের মতোই প্রমাণ সাইজে, তিনি প্রবীণ অভিনেতা সঞ্জয় মিশ্র। কারণ, এ ছবিতে অভিনয়টাই অগ্রগণ্য। না পারলে, নিষ্প্রয়োজন।

যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। জীবন। যার ঊষা কিংবা সায়াহ্ন, কোনও পর্বই আমরা উপলব্ধি করতে ভুলে যাই। জীবনসায়াহ্নে এসে একদিন এ ছবির নায়ক ঠিক করলেন, কোনও কিছুই নিজের চোখে না দেখে বিশ্বাস করবেন না। বাকিরা সব বুড়ো বয়সের ভীমরতি বলে ভাবলেও নিজের বিশ্বাসে অনড় থাকেন এই ষাটোর্ধ ভদ্রলোক। উদ্ভট এই ভাবনার জেরে পরিবার পরিজনের বিরাগভাজন হন। চাকরি যায়। তবু সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তাঁর মনোজগতে জন্ম নেয় নতুন উপলব্ধি।

ছোট করে বলি, প্রাচীনকালে আমাদের জীবনের চারটি ধাপ ছিল। ব্রহ্মচর্ষ, গার্হস্থ্য, বাণপ্রস্থ সন্ন্যাস। প্রতিটি ধাপই ছিল মানবমনের নতুন উপলব্ধির দ্বার খুলে দেওয়া। আত্মশুদ্ধির মন্ত্রজপ করা। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সংযোগ খুঁজে পাওয়া। বহুকালের অনভ্যাসে সেই অনুভূতির সাম্রাজ্যের সিংহাসন হারিয়েছিল মানুষ। এ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র সেই বিরাট উপলব্ধির জগতের সঙ্গে পরিচয় করালেন। সঞ্জয় মিশ্রের অপূর্ব অভিনয় অবশ্যই অসংখ্য পুরস্কৃত হওয়ার যোগ্য। ভবিষ্যতের আশায় রইলাম।

ছবির কাহিনিকে বিশ্বাসযোগ্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়াটাই ছিল বিরাট মাপের চ্যালেঞ্জ। রজত কপূর সেই ধাপটি সসম্মানে পেরিয়েছেন। দর্শকের চোখে যা তিনি আঙুল দিয়ে জানিয়ে গেলেন, তাতে আমাদের প্রত্যাশা বেশ কয়েক পা এগিয়েই রইল। অন্যতম সাহসী পরিচালকের জায়গায় তিনি জায়গা করে নিলেন। চিরস্থায়ী।

.