এভরিবডি ক্যান ডান্স!
আমাদের দেশের ছবিতে নাচ নাকি একেবারে অপরিহার্য অঙ্গ। কারণ হিসেবে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কিন্তু সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যাটি হল, কৃষ্ণলীলার স্মৃতি। রাধার সঙ্গে নাচেন কৃষ্ণ, সঙ্গে গোপিনীগণ। শেষোক্তদের প্রয়োজন হয় শুধুই সাইড-ডান্সার হিসেবে। এঁরা কোরাসে কথা বলেন, কিংবা একেবারেই নীরব থেকে নেচে চলেন।
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- এনিবডি ক্যান ডান্স
রেটিং- ****
আমাদের দেশের ছবিতে নাচ নাকি একেবারে অপরিহার্য অঙ্গ। কারণ হিসেবে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কিন্তু সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যাটি হল, কৃষ্ণলীলার স্মৃতি। রাধার সঙ্গে নাচেন কৃষ্ণ, সঙ্গে গোপিনীগণ। শেষোক্তদের প্রয়োজন হয় শুধুই সাইড-ডান্সার হিসেবে। এঁরা কোরাসে কথা বলেন, কিংবা একেবারেই নীরব থেকে নেচে চলেন। এই কনসেপ্ট অথবা ট্র্যাডিশনটা সমানে চলছে গত শতক ধরে। মধুবালা, সায়রাবানু, হেমামালিনী থেকে নব্বই দশকের নায়িকা পর্যন্ত। গোটা সিনেমা দেখে বিদেশি দর্শক এ যাবত্ প্রশ্ন করে এসেছেন, আচ্ছা ওঁদের কী হল, যাঁরা পেছনে নাচছিলেন? কোথায় গেলেন তাঁরা?...
এখান থেকে চিন্তা করতে শুরু করলে এনিবডি ক্যান ডান্স ভারতীয় ছবির জগতে প্রথম সফল প্রচেষ্টা যা ওই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে। নায়ক-নায়িকাকেন্দ্রিক ছবির গড্ডালিকাপ্রবাহে প্রথম হাতুড়ির ঘা। ওয়র্ল্ড সিনেমার নিরিখে প্রথম ডান্স মুভি। ইতিমধ্যেই অনেক ছবি দেখেছি বিদেশি ভাষার, নাচই যেখানে অভিনয় এবং অভিব্যক্তি। এই জন্যেই বলিউডের ইতিহাসে একটা নাম ইতিমধ্যেই লেখা হয়ে গেল... প্রভু দেবা।
এতদিন যাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নায়ক-নায়িকারা ক্যামেরার সামনে নাচতেন দর্শকের হাততালি পাওয়ার জন্য, তাঁরাই এবার একজোট হয়ে ক্যামেরার সামনে। গণেশ আচারিয়া, প্রভু দেবা ও পরে সরোজ খান, সিজার। সঙ্গে একঝাঁক তরুণ, যারা নাচকেই জীবনের মূলমন্ত্র করেছে। কোরিয়োগ্রাফির ভাষায় যে একটা গোটা ছবিকে তুলে ধরা সম্ভব, দর্শককেও সিটের মধ্যে সেঁটে রাখা সম্ভব, আঙুল দিয়ে দেখালেন তাঁরা। চূড়ান্ত সফল হয়েও যাঁরা পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেন না। প্রতিষ্ঠিত কোরিয়োগ্রাফারকেও ডান্স সিকোয়েন্সে আনকোরা নায়ক বা নায়িকা যাতে স্টেপ ভুল না করেন, মোটামুটি পারফেকশন নিয়ে নাচতে পারেন, সেইজন্যেই অবিশ্রাম নাচতে হয় ক্যামেরাম্যানের পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কোরিওগ্রাফারের জীবনের টানাপোড়েন, নাচের ছন্দে দুঃখ, দুর্দশা দারিদ্র্য উপেক্ষা করে মাথা তুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তবুও এর মধ্যেই রয়েছে নানা স্তরবিভাগ। ধনীর সন্তানেরা ডান্স ক্লাসে অত্যাধুনিক নাচের স্টেপস শিখতে পারে প্রচুর পয়সা খরচ করে। গরীবের কাছে সেটা নেহাতই বিলাসিতা। তবু তারাও কি স্বপ্নের অভিমুখে এগিয়ে যাবে না? এই প্রশ্ন সমাধান করতেই আবির্ভাব উদারমনস্ক ডান্স টিচারের। তিলতিল করে গড়ে তোলা ডান্স
অ্যাকাডেমিতেই পলিটিক্সের শিকার হওয়ার পর তিনি হঠাত্ই বুঝতে পারেন তাঁর সামনে বিরাট দায়িত্ব। মুম্বইয়ের ধরাভির প্রতিভাবান নাচিয়েদের স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব নিলেন তিনি। টেলিভিশনের ডান্স শো-তে এন্ট্রি নেওয়ার মতো যোগ্যতায় পৌঁছতে হবে তাদের।
গল্পটা প্রেডিক্টেবল। একগোছা বহুমূল্য পাথর যদি হয় সব কটি ডান্স সিকোয়েন্স, তবে একটু সহজসরল সুতোর মতোই গলে চলে গেছে স্টোরিলাইন। অহেতুক মারপ্যাঁচ ছাড়াই। সুগন্ধি বিরিয়ানির সঙ্গে একবাটি নিরামিষ রায়তাই তো খাপ খায়, তাই না? প্রভু দেবার অভিনয়ের মান নিয়েও সংশয় অবশ্যম্ভাবী। ভুরু কুঁচকোনো যায় ময়ূর পুরীর চিত্রনাট্য দেখেও। আরও মনোযোগী বাছাইপর্ব প্রয়োজন ছিল মিউজিক ডিরেকশনের ক্ষেত্রে। কিন্তু সব প্রশ্নগুলো ধুইয়ে দেয় অপূর্ব নৃত্যের জলপ্রপাত। গণপতি উত্সবের ভাসানপর্বের নাচই হোক, অথবা ডান্স ফ্লোরে ব্যালে, হিপহপ, সালসা- হলের প্রতিটি কোণই নৃত্যে রত হয় কোন যাদুমন্ত্রবলে। এমন প্রিসিশন, পারফেকশন আর এনার্জি বলিউডের তাবড় নায়ক নায়িকার কাছ থেকে পাওয়া অসম্ভব। প্রায় গুপির গানের মতোই পলকহীন হয় দর্শক। নাচের ছন্দ এসে মেশে দর্শকের রক্তপ্রবাহে। আরও বেশি করে অনুভূত হয় থ্রিডি হওয়ার জন্যেই। বিশেষ করে শেষ পর্বে স্টেজে গণপতি নৃত্য। যাঁরা দেখবেন, তাঁরাই অনুভব করবেন, চেয়ার থেকে আপনাকে প্রায় ম্যাজিক কার্পেটে উড়িয়ে নিয়ে চলেছে।
বলিউডের প্রথম ডান্স মুভি হৃদয়ে লেখা থাকবে অনেকদিন। যতদিন না এর থেকে ভাল কিছু হয়। তবে হ্যাঁ। গণেশ আচারিয়া এবার পাকাপাকিভাবে অভিনয়ে নামতে পারেন। বলিউডে এই চেহারার অভিনেতা এখন মোস্ট ওয়ান্টেড।