বদলাবদলির উলটপুরাণ, জিও রুদ্র-পরমব্রত জুটি

এমনিই তো কত বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় রাস্তাঘাটে। অনেকদিনের পরে। বন্ধু কী খবর বল, কতদিন দেখা হয়নি! বোতলবন্দি শ্যাম্পেনের মতো হিসহিস করে বেরোয় চেপে রাখা আবেগ। দুদ্দাড় করে নামে স্মৃতির ঢল, নস্ট্যালজিয়ার প্লাবন।

Updated By: Mar 24, 2013, 09:53 AM IST

শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: হাওয়া বদল
রেটিং: ***1/2
এমনিই তো কত বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় রাস্তাঘাটে। অনেকদিনের পরে। বন্ধু কী খবর বল, কতদিন দেখা হয়নি! বোতলবন্দি শ্যাম্পেনের মতো হিসহিস করে বেরোয় চেপে রাখা আবেগ। দুদ্দাড় করে নামে স্মৃতির ঢল, নস্ট্যালজিয়ার প্লাবন। স্কুল কেটে সিনেমা দেখা, পরীক্ষার খাতায় নকল করা বাবার সই, কলেজে সুন্দরী-পটানো থেকে গাঁজার টান, সব কিছুতেই সঙ্গী ছিল যে...হঠাৎ আবিষ্কার করি, নাঃ, তার ছিঁড়ে গেছে কবে। সেই প্রাণের বন্ধু আর আগের মতো নেই তো। তার পরেও আবার চাপা দীর্ঘশ্বাস! ইশ আমার জীবনটাও যদি হত ওর মতো.. রোজ তো কত কী ঘটে যাহা তাহা। এমন কেন সত্যি হয় না আহা!

তা, গ্রাস ইজ অলওয়েজ গ্রিনার অন দ্য আদার সাইড, কে না জানে। এই `যদি এমন হত` কল্পনার বিন্দু থেকেই টেক-অফ করল পরমব্রতর ছবি `হাওয়া বদল`। ছোট্ট বয়সের দুষ্টু টাইমপাস সুসু-কাটাকাটি খেলতে খেলতেই ঝিলমিল স্পার্ক। অ্যাবরাকাডাবরা হয়ে বদলাবদলি হয়ে গেল দুই বন্ধুর জীবন। একজন ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং কোম্পানির মালিক। অন্যজন স্ট্রাগলিং ব্যান্ডগায়ক। প্রথমজন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয়জন রুদ্রনীল ঘোষ। চেহারাটা একই রইল বাইরে থেকে। শুধু ভেতরের মানুষটা গেল বদলে। এইবার বেচারাদের নাকানিচোবানির একশেষ। সুন্দরী স্ত্রী আর সুবর্ণগোলক ছবিটার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? যে যাকে গোলকখানি হ্যান্ড ওভার করছে, বদলাবদলি হয়ে যাচ্ছে তাদের ভেতরের মানুষটিও। কর্তামশাইয়ের আচারব্যবহার হয়ে যাচ্ছে লাজুক গিন্নির মতো। গিন্নিমা দোর্দণ্ডপ্রতাপ কর্তামশাইয়ের মতো বকাঝকা করতে শুরু করছেন। ব্যাপারটাকে মডার্ন টাইমসে ভেবে দেখলে কেমন হবে, সেই চিত্রটাই এঁকেছেন চিত্রনাট্যকার অনিন্দ্য বসু। প্লটের মধ্যে অসংখ্য সিচুয়েশনাল কমেডির জায়গা আছে। সেগুলোর যথোপযুক্ত সদ্ব্যবহারও করেছেন পরিচালক-অভিনেতা। এই ছবির সবচেয়ে বড় ইউএসপি রুদ্র-পরম জুটির কেমিস্ট্রি। যেভাবে একে অন্যের ম্যানারিজম ও ভোক্যাবুলারি নকল করলেন, সেটা শুধুই প্রচুর হাততালি দিয়ে মেক-আপ করা যায় না। বহুদিনের তিলতিল করে গড়ে ওঠা সমঝোতা, মনোমালিন্য ও বন্ধুত্বের এই প্রথম গিফট-র‌্যাপড হয়ে পৌঁছল দর্শকের কাছে। তবে দুজনকে যদি আলাদা করে মার্কিং করতে হয় তাহলে পরমব্রতই এগিয়ে থাকবেন। দুটো সত্তার পার্থক্যটা পরমব্রতর অভিনয়ে বেশ স্পষ্ট।

পরমব্রতর ডাকসাইটে ডমিনেটিং স্ত্রীয়ের ভূমিকায় ভালই মানিয়েছে রাইমা সেনকে। বেশ কায়দা করে স্বাভাবিক অভিনয়টা আদায় করে নিয়েছেন পরিচালক পরমব্রত। পরমব্রত আর রুদ্রনীলের সঙ্গে কথোপকথনের দৃশ্যে রাইমার অভিনয় অন্য সব ছবির থেকে অনেকটাই আলাদা। বিশেষত যে দৃশ্যে রুদ্রনীল এসে নিজের ভিতরের বন্ধুর সত্তার পরিচয় দিতে আসছে, রাইমার হঠাৎ রেগে যাওয়ার অভিনয়টা অত্যন্ত সাবলীল। ভাল লাগবে নেহা পান্ডাকেও। তবে লক্ষণীয় বিষয় একটাই। দুটো মানুষ বদলে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই রাজের বিছানায় জিতের বিয়ে-করা স্ত্রী, আর জিতের বক্ষলগ্না রাজের প্রেমিকা- এমন সিচুয়েশন একাধিকবার পাওয়া গেল। সেক্স কমেডি হওয়ার সুবর্ণসুযোগ থাকলেও সেদিকে বেশি স্ট্রেস দেননি পরিচালক। বরং বেছে নিয়েছেন অপেক্ষাকৃত কঠিন পথটাই। দুই বন্ধুর জীবন অদলবদল করে সমাজের অনেকগুলো অসঙ্গতি, মানুষের উচ্চাকাঙ্খার হাস্যকর দিকটা আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য অভিনয় আর স্ক্রিপ্টের দিকে মন দিয়েছেন বেশি। আধুনিককালে বিষয়টাকে একটা ওয়েলকাম ট্রেন্ড বলেই ধরা যেতে পারে। অনেকখানি ভাল হলেও, স্ক্রিপ্ট অতিরঞ্জনরহিত নয়। প্রথমার্ধের স্ক্রিপ্ট ইচ্ছে করলেই আরও ছোট করা যেতে পারত। তবে ক্লাইম্যাক্স-এ সেটা মেক-আপ দিয়েছেন পরিচালক। পুরোপুরি আনপ্রেডিক্টেবিলিটির লেভেলে খেলেছেন। পরিশ্রমের ছাপ স্পষ্ট তো বটেই, মিশন এক কথায় সাকসেসফুল!

মন ছুঁয়ে যাবে এ ছবির মিউজিক। তেমন বিরাট কোনও হাওয়া বদল না হলেও আধুনিকতার স্পর্শ আছে লিরিকস আর সুরে। রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহারের ব্যাপারে আরও সংযম প্রত্যাশিত ছিল। আর একটু বেশি গভীরতা। যাই হোক, বাইরে গরমের তাত বাড়ছে। এপ্রিল মাস পড়ল বলে। এই ওয়েদার-চেঞ্জের সময়ে হাওয়া-বদল দেখে ফেলুন ফুরফুরে মেজাজে। সময়টা মন্দ কাটবে না।

.